প্রথম পাতা

জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক

সবার জন্য উন্মুক্ত মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

স্টাফ রিপোর্টার

২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:১৪ পূর্বাহ্ন

অবশেষে সব এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত হলো মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। গতকাল মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এতে করে এখন থেকে লাইসেন্সধারী প্রায় ১২শ’ এজেন্সিই দেশটিতে কর্মী পাঠাতে পারবে। মালয়েশিয়ার পুত্রজায়ায় স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টায় অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের হাইকমিশনার মো. শহিদুল ইসলাম। এ ছাড়া বেলা আড়াইটার দিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি’র নেতৃত্বে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল মালয়েশিয়ার হিউম্যান রিসোর্স মন্ত্রী মি. কুলাসেগারানের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক করেন। বৈঠকে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। এদিকে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের এই সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেছে বিদেশে কর্মী প্রেরণকারী এজেন্সিদের সংগঠন বায়রা। সংগঠনটির মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, এটি তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। এই সিদ্ধান্তের ফলে দেশটিতে কর্মী প্রেরণ বাড়বে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক শেষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীর একান্ত সচিব এক প্রেস বিজ্ঞপ্তি জানান, সভায় বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ও যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরমধ্যে জি টু জি প্লাস পদ্ধতিতে বাংলাদেশি বৈধ সকল রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অপরদিকে কলিং ভিসায় কর্মী নিয়োগের বিষয়েও ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় অপেক্ষমাণ মালয়েশিয়া গমনেচ্ছু কর্মীদের পথ উন্মুক্ত থাকবে। এ ছাড়াও মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিতকরণের বিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারের ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে বলেও জানানো হয়। বর্তমানে প্রতিনিধিদলটি মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে। জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরো উপস্থিত ছিলেন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. সেলিম রেজা, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (কর্মসংস্থান) আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন, মন্ত্রীর একান্ত সচিব (যুগ্ম সচিব) মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মো. দেলোয়ার হোসেন, উপ-সচিব মোহাম্মদ শাহীন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপ-সচিব সানজিদা শারমিন এবং মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাউন্সেলর (শ্রম) মো সায়েদুল ইসলাম (অতিরিক্ত সচিব)।

উল্লেখ্য, নানা অভিযোগ তুলে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া বন্ধ করে দেয় মালয়েশিয়া। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নেয়া শুরু করে মালয়েশিয়া। ২০১৬ সালে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার সমঝোতা হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি এই সমঝোতা চুক্তির আওতায় দশটি জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সিকে লোক পাঠাতে অনুমোদন জানানো হয়। কিন্তু শুরু থেকেই এই সিন্ডিকেটের বিরোধিতা করে আসছিল বায়রা।
এদিকে মালয়েশিয়ার নতুন সরকার অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে এই ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে অস্বীকৃতি জানায়। দেশটির সংবাদমাধ্যম স্টার অনলাইনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে মাথাপিছু দুই হাজার রিঙ্গিত খরচ হবে, কিন্তু এজেন্টরা বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে ২০ হাজার রিঙ্গিত আদায় করেন। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ১০টি এজেন্সি সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। এ সিন্ডিকেট গত দুই বছরে ২০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে।

এই অবস্থায় গত ১৪ই আগস্ট মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ কমিটির বৈঠকে কর্মী নিয়োগের বিশেষ পদ্ধতি এসপিপিএ থেকে বাংলাদেশকে বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে মালয়েশিয়া ২১শে আগস্ট বাংলাদেশ সরকারকে একটি চিঠি দেয়। চিঠিতে ১লা সেপ্টেম্বরের পর থেকে ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ দেবে না বলে জানিয়ে দেয় মালয়েশিয়া। শুধু তাই নয়, আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন কোনো প্রক্রিয়ায় অভিবাসীকর্মী নিয়োগের পরিকল্পনার কথাও জানায়নি ওই সময়।
এর প্রেক্ষিতে গত ২৮শে আগস্ট আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি সাংবাদিকদের বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার নিয়ে যে অবস্থা তৈরি হয়েছে তার প্রকৃত অবস্থা জানতে বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে তাদের একটি ‘ভারবাল নোট’ বা চিঠি দেয়া হয়েছে। সিন্ডিকেটের ১০ এজেন্সিকে শোকজ করার কথাও জানান মন্ত্রী।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status