শেষের পাতা

বিএসএমএমইউতে চিকিৎসকের অবহেলায় কিডনিহীন রোগী!

স্টাফ রিপোর্টার

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ১০:১০ পূর্বাহ্ন

একটি কিডনি নষ্ট থাকায় অপারেশন করে অকেজো কিডনিটি ফেলে দিতে গিয়ে চিকিৎসকের অসতর্কতায় দুটো কিডনি ফেলে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ)। বাম কিডনি নষ্ট থাকা রওশন আরা নামে এই রোগীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাপেক্ষে তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে রওশন আরার ছেলে রফিক সিকদার গণমাধ্যমকে জানান, বাম পাশের কিডনি জটিলতা নিয়ে মাকে গত ২৬শে আগস্ট বিএসএমএমইউ’তে ভর্তি করাই। ভর্তি করার পর বেশকিছু পরীক্ষা করানোর পর গত ৫ই সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজি বিভাগের চিকিৎসকরা বাম পাশের কিডনি রাখতে চাননি। বাম কিডনি তখন কিছুটা কাজ করছিল। আর ডান পাশের কিডনি সম্পূর্ণ ভালো ছিল। তিনি বলেন, অপারেশনের পর পোস্ট অপারেটিভে নেয়ার পর মায়ের জ্ঞান ছিল কিন্তু শরীর ফুলে যাচ্ছিল। তবে ক্যাথেটার লাগানো থাকার পরও তার প্রস্রাব হচ্ছিল না। দায়িত্বরত চিকিৎসকরাও এটা আমাকে জানিয়েছিল। দুপুরে অপারেশনের পর রাত সাড়ে আটটার পর বলা হলো, আইসিইউ সাপোর্ট লাগবে।

কিন্তু তখন বিএসএমএমইউ’তে আইসিইউ খালি না থাকায় তারা আমাদের বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিতে বলেন। তারা বলেন, রোগীর ইউরিন তৈরি হচ্ছে না। আর বমি হচ্ছিলো। পরে রাতেই রোগীকে মগবাজারের ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতালের আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানে সিটিস্ক্যান করার পরামর্শ দিলে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে তখনই সিটিস্ক্যান করানোর পরই ধরা পড়ে রোগীর একটি কিডনিও নেই। এরপর ইনসাফ বারাকাহ হাসপাতাল থেকে রোগীকে আবার বিএসএমএমইউতে নিতে বলা হয়। এবং বিএসএমএমইউতে ডায়ালাইসিস করানো শুরু হয়। ডায়ালাইসিস শুরু হলেও রোগীর বেড়ে যাওয়া ক্রিয়েটিনিন কমছিল না। জটিলতা বেড়ে গেলে ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালের চিফ কনসালট্যান্ট ও কিডনি রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এমএ সামাদের কাছে নেয়া হয় রওশন আরাকে। এই চিকিৎসকও রোগীর কোনো কিডনি নেই তা নিশ্চিত করেন। তাই আবার রফিক সিকদার বিএসএমএমইউ’তে ফিরে আসেন। রোগীর বোন জাহেদা সাংবাদিকদের বলেন, রওশন আরার পুরো শরীর ফুলে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, রওশন আরার জন্মগতভাবেই ঘোড়ার ক্ষুর আকৃতির মতো জোড়া কিডনি (দুই কিডনি একসঙ্গে লাগানো) ছিল। এটি ফেলার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।

এ ধরনের কোনো পূর্ব প্রস্তুতি না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সূত্র জানায়, কিডনি রাখলে কাজ করবে না- কারণ অস্ত্রোপচারের সময় রক্তপাত থামানো যাচ্ছিলো না। তখন তার ডান পাশের ভালো কিডনিটিও ফেলে দিতে হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবেও এটাই নিয়ম। কিন্তু এক্ষেত্রে তখন চিকিৎসকদের রোগীর স্বজনদের এ বিষয়ে কাউন্সেলিং করানো এবং তাদের বিষয়টি সম্পূর্ণ জানানো যে, জোড়া কিডনি বলে সেটি রাখা সম্ভব না। জোড়া কিডনি হলেও যদি কোনো ধরনের জটিলতা তৈরি না হয় তাহলে মানুষ বছরের পর বছর বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু চিকিৎসকরা সেটি করেননি। বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল গণমাধ্যমকে জানান, গত ৫ই সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচারের সময় বামদিকে এমন ইনফেকশন থাকায় রক্তনালি, খাদ্যনালি, কিডনি বোঝা খুব কঠিন হয়ে যায়। প্রচণ্ড রক্তপাত হয়। রক্তপাত বন্ধ হলেও অবস্থা খারাপের দিকে যায় এবং আইসিইউতে নেয়ার জন্য বলি। ডান দিকের কিডনি আছে নাকি নেই? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘রিপোর্ট অনুযায়ী নন ভিজ্যুয়ালাইজেশন। এখানে অন্য কোনো অবসেন্ট বা অন্য কিডনি কাজ করছে না। যখন শরীরের কোনো অর্গানের অস্ত্রোপচার করা হয় তখন দুই থেকে তিন সপ্তাহ আগে থেকে সেখানে ভালোভাবে বোঝা যায় না। তাই আমরা পুনরায় পরীক্ষা করি নাই। আমরা আপাতত ডায়ালাইসিস করছি’।

এদিকে, এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিডনি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদের নেতৃত্বে ৭ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া। তিনি মানবজমিনকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জমা হবে। এরপর আসল ঘটনা জানা যাবে। আর এখন ওই রোগীর সুচিকিৎসার জন্য সাত সদস্যবিশিষ্ট মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত আর কোনো মন্তব্য করতে চাননি ভিসি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status