এক্সক্লুসিভ

সিলেটে ৬ মামলায় ফেরারি বিএনপি’র ৪৫০ নেতাকর্মী

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ৯:১৫ পূর্বাহ্ন

সিলেটে ফেরারি বিএনপি’র ৪৫০ নেতাকর্মী। মামলার আসামি তারা। শীর্ষ নেতৃবৃন্দও আসামি। তারাও রয়েছেন আড়ালে। রাতেও বাড়িতে থাকছেন না। এই অবস্থায় মামলা আতঙ্ক বিরাজ করছে সিলেট বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে। তারা দাবি করেন- ‘গায়েবি’ ঘটনায় তারা আসামি হয়েছেন। অনেকেই এলাকায় ছিলেন না। এরপরও আসামি হয়েছেন। আর মামলা দায়েরের পর পুলিশ এখন বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ করছে, চালাচ্ছে তল্লাশিও।’ সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ৬টি থানায় গত এক সপ্তাহে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৬টি মামলা হয়েছে।

এর মধ্যে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীমের বাসায় পুলিশি অভিযানের ঘটনায় দায়ের করা সিলেটের কোতোয়ালি থানার মামলায় শীর্ষ ব্যক্তিরাও আসামিও হয়েছেন। আসামিদের মধ্যে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন, জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল, মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বক্ত সাদেকও রয়েছেন। এই মামলায় আরো অনেক সিনিয়র নেতা আসামি। এ ছাড়া শাহপরান থানায় টিলাগড়, শিবগঞ্জ, টুলটিকর এলাকায় বিএনপি’র নেতারা আসামি হয়েছেন। পাশাপাশি ওয়ার্ড পর্যায়ে বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতৃবৃন্দও আসামি।

এয়ারপোর্ট থানায় দায়ের করা মামলায় নগরীর আম্বরখানা, চৌকিদেখি, সাপ্লাই, বড়বাজার, শাহী ঈদগাহ এলাকার নেতাকর্মীরা আসামি হন। জালালাবাদ থানায় নগরীর মদিনা মার্কেট, পাঠানটুলা, আখালিয়া, হাওলাদারপাড়ার নেতাকর্মীরা আসামি হয়েছেন। এ ছাড়া দক্ষিণ সুরমা ও মোগলাবাজার থানায় দায়ের করা দুটি মামলায় দক্ষিণ সুরমার প্রায় সব নেতাকর্মীকেই আসামি করা হয়েছে। দায়ের করা ৬টি মামলায় পুলিশ ৪৫০ জনের নাম উল্লেখ করলেও অজ্ঞাত রেখেছে আরো প্রায় ৩০০ জনকে। মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন গতকাল বিকালে মানবজমিনকে জানিয়েছেন, যে ৬ মামলা দায়ের করা হয়েছে সব মামলার কাহিনীই মিথ্যা। কোনো ঘটনা ঘটেনি।

তিনি বলেন, মামলা দায়েরের পর পুলিশ বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালাচ্ছে। এতে করে বিএনপি’র নেতাকর্মীরা ফেরারি জীবনযাপন করছে। তবে মামলা দিয়ে চেয়ারপারসনের মুক্তির আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে না। সিলেট বিএনপি রাজপথের আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকবে। বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, নগরীর ২৭ ওয়ার্ডের প্রায় সবক’টি ইউনিটের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক সহ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়েছে মামলায়। এসব মামলা এবং পুলিশের অভিযানের প্রেক্ষিতে পাড়াভিত্তিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ হজে থেকেও মামলার আসামি হয়েছেন বলে দাবি করেন তারা।

এদিকে পুলিশের ওপর হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় আটক চার ছাত্রদল নেতার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল রোববার সকালে আটক ছাত্রদল নেতাদের সিলেটের এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাইম বিল্লাহর আদালতে হাজির করা হয়। এসময় তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন জানানো হলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন। এর আগে গত ১৬ই সেপ্টেম্বর সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীমের সোবহানীঘাটস্থ বাসা থেকে পুলিশের হাতে আটক হন সিলেট জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এখলাসুর রহমান মুন্না, গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদল নেতা ফাহিম চৌধুরী, গোলাপগঞ্জ পৌর ছাত্রদল নেতা ফয়ছল ইসলাম ও ফরিদ আহমেদ।

তাদের পুলিশ এসল্ট মামলার আসামি দেখিয়ে গ্রেপ্তার করে গতকাল রিমান্ড আবেদনের শুনানিতে আদালতে হাজির করা হয়েছি। ১৭ই সেপ্টেম্বর সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ির এসআই বিষ্ণুপদ রায় বাদী হয়ে ৫৫ জনের নামোল্লেখ করে একটি পুলিশ এসল্ট মামলা দায়ের করেন। ওদিকে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীমের বাসায় পুলিশি হামলা, ভাঙচুর, গুলি ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, বিভিন্ন থানায় থানায় কাল্পনিক ঘটনা সাজিয়ে গায়েবি মামলা দায়েরের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় (সিলেট বিভাগীয়) সকল নেতৃবৃন্দ। ষড়যন্ত্রমূলক মামলাসমূহ প্রত্যাহার ও গ্রেপ্তারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান তারা।

বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদীর লুনা, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আলহাজ এমএ হক, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির ও ড. মুাহম্মদ এনামুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় (সিলেট বিভাগীয়) সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, কেন্দ্রীয় (সিলেট বিভাগীয়) সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিম, কেন্দ্রীয় (সিলেট বিভাগীয়) সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন   
 আহমদ মিলন, কেন্দ্রীয় সহ-ক্ষুদ্র ঋণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি আলহাজ শফি আহমদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট হাদিয়া চৌধুরী মুন্নী বলেন, কোনো উস্কানি ছাড়াই সম্প্রতি সিলেটে কতিপয় অতিউৎসাহী আওয়ামী পুলিশ জেলা বিএনপি সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীমের বাসায় হামলা, ভাঙচুর, গুলি ও নিরীহ নেতাকর্মীদের  গ্রেপ্তার করে।

এই ঘটনায় জেলা সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মহানগর সভাপতি নাসিম হোসাইন, জেলা ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রব চৌধুরী ফয়সল, মহানগর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বখত চৌধুরী সাদেকের মতো সিনিয়র নেতাদের আসামি করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status