শেষের পাতা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

সই না করতে প্রেসিডেন্টের প্রতি সিপিজে’র আহ্বান

মানবজমিন ডেস্ক

২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রিভিউয়ের জন্য জাতীয় সংসদে ফেরত পাঠাতে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের কাছে আহ্বান জানিয়েছে সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক নিরপেক্ষ সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)। ২১শে সেপ্টেম্বর ফ্যাক্সযোগে পাঠানো এক চিঠিতে আহ্বান জানান সিপিজে’র এশিয়া কর্মসূচি সমন্বয়ক
স্টিভেন বাটলার। চিঠিতে গত ১৮ই সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সিপিজে। এতে স্টিভেন বাটলার  প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের কাছে আহ্বান জানিয়ে লিখেছেন, আপনার কাছে এই আইনটি রিভিউ করার জন্য ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানাচ্ছি। এই আইনের বিষয়ে উদ্বিগ্ন সিপিজে। যদি এটাকে আইনে পরিণত হতে দেয়া হয় তাহলে সংবাদ মাধ্যমের যে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে সংবিধানে তা লঙ্ঘিত হবে। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আইনগত বড় বিপদ সৃষ্টি করবে এ আইন।

প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে স্টিভেন বাটলার লিখেছেন, আপনার প্রতি সম্মান পূর্বক সিপিজে আহ্বান জানাচ্ছে, আপনাকে দেয়া সাংবিধানিক কর্তৃত্ব ব্যবহার করে এই আইনটিকে জাতীয় সংসদে রিভিশনের জন্য ফেরত পাঠাতে। যাতে এসব বিপদ নির্মূল করা যায়। বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজ বার বার যে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন সে বিষয়ে দৃষ্টি দেয়ার জন্য আমরা আইন প্রণেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যেসব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে তা এরকম- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সবচেয়ে ভয়াবহ ধারাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ধারা ৪৩-এ শেষ সময়ে একটি সংশোধনী যুক্ত করা। এর অধীনে পুলিশ কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়া যে কাউকে গ্রেপ্তার বা সার্চ করতে পারবে। উপরন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৫৭ ধারা বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মন্ত্রীরা। তা সত্ত্বেও সমস্যাযুক্ত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার সঙ্গে সম্পর্কিত ধারা যুক্ত করা হয়েছে এতে।

বার বার ৫৭ ধারা ব্যবহার করা হয়েছে মানহানির মামলায় সাংবাদিকদের জেলে পাঠাতে। সরকারের মন্ত্রীরা এর আগে স্বীকার করেছিলেন যে, ৫৭ ধারার অপব্যবহার করছিল পুলিশ। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, এটা বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তার পরিবর্তে, নিত্যদিনের স্বাভাবিক কাজ করতে গিয়ে সাংবাদিকরা অব্যাহতভাবে খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তারের বিপদজনক ঝুঁকিতে রয়েছেন। এ ছাড়া ঔপনিবেশিক আমলের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট যুক্ত করা হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। এতেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এটা তথ্য পাওয়ার অধিকার বিষয়ক বিধানের বিপরীত বলেই মনে হয়। অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টকে ডিজিটাল জগতে ব্যবহারে অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের ঝুঁকি বৃদ্ধি করেছে, যারা সরকারের দুর্নীতি প্রকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।  

স্টিভেন বাটলার লিখেছেন, এ আইনে অপরাধের ওপর ভিত্তি করে পাঁচ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এই অতিমাত্রায় জরিমানা ও শাস্তি সাংবাদিকদের দায়িত্ব পালন অগ্রহণযোগ্য এক ঝুঁকির পেশায় পরিণত করবে। ফলে টিকে থাকবে এক দুর্বল মিডিয়া, যারা বাংলাদেশের গণতন্ত্র সমর্থনে যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রয়োজন তা রাখতে পারবে না। ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাত, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মতো বড় অপরাধগুলোকে যেভাবে অস্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তাতে একই রকমভাবে উদ্বিগ্ন সিপিজে। এসব ঘটনায় খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তার ও মিডিয়াকে বিধিনিষেধের মধ্যে রাখতে আইনের অপব্যবহার করা হবে।

স্টিভেন বাটলার আরো লিখেছেন, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের রয়েছে গর্বিত ইতিহাস। এখানে আছে মানবাধিকারের স্বীকৃতি, মত প্রকাশ ও মিডিয়ার স্বাধীনতা। কিন্তু এই আইন সেই ধারার ক্ষতি করবে। যেসব দেশ গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় মিডিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে বাংলাদেশের সেই অবস্থান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো লিখেছেন, আমরা এই আইন প্রতিরোধে আপনার পদক্ষেপ আহ্বান করছি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status