দেশ বিদেশ

দক্ষিণ এশিয়ার মিডিয়া নতুন ক্ষেত্রের আবিষ্কার

আফসান চৌধুরী

২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, রবিবার, ৯:৪৮ পূর্বাহ্ন

দক্ষিণ এশিয়া একটা বহুল ব্যবহৃত শব্দ যেটাকে কখনই ভালোভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি। এই স্বচ্ছতার অভাব অনেকের জন্যই সমস্যা নয়। কারণ মানুষের কোনো ধারণাই নেই যে- এটার অর্থ কি এবং কীভাবে এর জবাব দিতে হয়। ফলস্বরূপ কিছু আইডিয়া, প্রকল্প এবং আঞ্চলিক কৌশলের খিচুড়ি তৈরি হয়েছে যেখান থেকে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কোনো ধারণা তৈরি হয়নি। দক্ষিণ এশিয়ার মিডিয়া আজ যেভাবে টিকে আছে, সেটা এর একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

দক্ষিণ এশিয় মিডিয়া বৃহত্তর অর্থে ভারতীয় মিডিয়া হয়ে গেছে। ভারতীয় টিভি নেটওয়ার্কগুলোর নেতৃত্বে বহু বড় বড় এবং অসংখ্য মিডিয়া প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের জন্য তৈরি হয়ে আছে। অবশ্যই ভাষার কারণে কিছু স্বাভাবিক সুবিধা পাওয়া যায়, যে বিষয়টা দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ দর্শক-শ্রোতার কাছেই পরিচিত। তাই বাংলাদেশ, নেপাল বা শ্রীলঙ্কা বা অন্য যারাই হোক, ভারতীয় টেলিভিশন সর্বত্র পৌঁছে গেছে অবিশ্বাস্যভাবে।

এর সঙ্গে ভারতীয় মিডিয়ায় যোগ হয়েছে বিনিয়োগ- অর্থ ও দক্ষতা। এটার পার্থক্য এতটাই বেশি যে তুলনা করা অসম্ভব। তাই ভারতীয় মিডিয়ার উৎপাদন খরচ বেশি। তাই এটাই স্বাভাবিক যে তাদের চাহিদা বেশি থাকবে। আর এটা সম্ভবত একটা ভালো আইডিয়া। শেষ বিচারে এ ধরনের বাজারের চাপ দক্ষিণ এশিয়ার মিডিয়াকে সৃজনশীল হতে এবং নিজেদের উপযুক্ত অবস্থান খুঁজে নিতে সাহায্য করবে।

বিনোদন ছাড়িয়ে মিডিয়া: এটা মিডিয়ার বিনোদন পণ্যের জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু যখন অন্যান্য সমসাময়িক ঘটনার প্রসঙ্গ আসবে বিশেষ করে আঞ্চলিক ইস্যুগুলো আসবে, তখন বিষয়টা ভিন্ন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো তথ্য পাচ্ছে ঠিক, কিন্তু তারা তাদের নিজেদের মত ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে পারছে না। ভারতের দর্শকদের জন্যও এটা প্রযোজ্য।
এটা একটা ভারসাম্যহীন পরিস্থিতি এবং এটা ইতিবাচক নয়। এই অঞ্চলে প্রতিকূল পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ হওয়ার কিন্তু সেটা সম্ভব হবে না যদি তথ্য ও দৃষ্টিভঙ্গির বিনিময় না হয়। সম্প্রচারের প্রচলিত নীতিমালার ঊর্ধ্বে উঠে এই বিনিময়কে দ্বন্দ্ব মেটানোর উপায় হিসেবে দেখা উচিত। কারণ এটার গুরুত্ব অনেক এবং শান্তি অন্যান্য অনেক কিছুকে সহজ করে দেয়।

বহু দেশের নিজস্ব দর্শকশ্রোতারা আঞ্চলিক ইস্যু সম্পর্কে সচেতন নয় যেগুলো তাদের জীবনযাত্রার উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। বহু ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক পর্যায়ে বহু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যেটার ব্যাপারে জনগণ জানতে পারে না যদিও সেগুলো তাদের স্বার্থকে সরাসরি প্রভাবিত করে।

ভারত ও চীনের সমন্বয়ে দক্ষিণ এশিয়া: যে কারণে ভারতের উদাহরণটি সামনে আসছে, সেটা হলো তারা এ অঞ্চলের বৃহত্তম খেলোয়াড় এবং এখানকার সবগুলো দেশকেই ভৌগোলিক বা রাজনৈতিক সীমান্তের মাধ্যমে স্পর্শ করে আছে তারা। তবে, এটা চীনের জন্যও প্রযোজ্য এবং তারাও অভিন্ন সীমান্তের দেশগুলোর কাছাকাছি হচ্ছে, রাজনৈতিক বা ভৌগোলিকভাবে।

এই দৃশ্যপট বিবেচনায় রেখে কোনো পর্যায়ে বিনিময় বাড়ালে সেটা কার্যকর ও বাস্তবসম্মত হতে পারে, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানে বিনোদনের যোগাযোগের কথা বলা হচ্ছে কিন্তু কৌশলগত ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশের পণ্ডিতদের মধ্যে বিনিময় হতে হবে যাতে সেটা নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে।

এমন নয় যে এ ধরনের বিনিময় হয় না কিন্তু সেগুলো হয় সেমিনার এবং বৈঠকে যেখানে খুব কম মানুষেরই প্রবেশাধিকার রয়েছে। এই প্রবেশাধিকার বাড়ানো দরকার এবং সে কারণেই বর্তমান সংলাপ ও বিনিময়ের মাত্রার বদল ঘটাতে একটা সম্প্রচার নীতিমালা দরকার।

এই ধারণাটা এখনই জনপ্রিয় হয়ে যাবে, এটা ভাবাটা অতিরিক্ত আশাবাদী হবে কারণ সরকার, কর্তৃপক্ষ এবং শক্তিধর গ্রুপগুলো প্রকৃতিগতভাবে সতর্ক এবং সন্দেহবাদী। তাই একটা কার্যপ্রণালী তৈরি করা দরকার যেটা একটা মডেল হিসেবে কাজ করবে এবং দেখাবে যে এটা করাটা সম্ভব। আর এখানেই ডিজিটাল বিপ্লব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত প্রাইভেট পক্ষগুলো যদি এই আইডিয়াটা লুফে নিতে পারে। প্রধান কাজ হবে একটা নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল চালু করা যেটা যে কেউ সাব্‌সক্রাইব করতে পারবে। এভাবে প্রতিটি দেশের জন্য এক হাজার জন করে হলেও একটা নির্দিষ্ট ও নির্ধারিত দর্শক তৈরি হবে, যারা মিলিতভাবে একটা মিডিয়াস্পেস তৈরি করতে পারে। এটা একই সঙ্গে তথ্যসমৃদ্ধ হবে এবং পারস্পরিক বোঝাপড়ার উদ্দেশ্য নিয়ে সঙ্ঘাত নিরসনের ব্যাপারে দায়বদ্ধ থাকবে।
প্রাইভেট কিন্তু পেশাদারদের প্রকল্প: যে কারণে এই ধরনের নির্দোষ প্রচেষ্টা শুরু হয়ে আবার হোঁচট খায়, সেটা হলো এগুলো পেশাদার মিডিয়ার চেয়ে বেশি নির্দোষ এবং সে কারণেই দর্শক-শ্রোতাদের আগ্রহ থাকে কম। কিন্তু যেভাবে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য সম্পর্ক বেড়ে গেছে, তাতে এই সুযোগটাও বাড়ছে এবং একইসঙ্গে স্পন্সর ও বিজ্ঞাপনদাতাদের সংখ্যাও বাড়ছে। এই ধরনের একটি প্রচেষ্টা তাই দাঁড়িয়ে গেলে তারা কাঠামোবদ্ধ অর্থায়নের সন্ধান করতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে তারা আরো সমৃদ্ধ জ্ঞান ও বোঝাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে।

এমন নয় যে, এ ধরনের প্রচেষ্টা নেই কিন্তু বিভিন্ন ধরনের কণ্ঠস্বরের সমাগম ঘটিয়ে একটা যুক্তিগ্রাহ্য আঞ্চলিক সম্পর্কের ব্র্যান্ড গড়ে তোলা যায় যেখানে চীন এবং ভারতের মতো বড় খেলোয়াড়গুলো একে অন্যের কাছে তাদের কথা বলতে পারবে, একে অন্যকে সম্মান করবে এবং একে অন্যের সঙ্গকে উপভোগ করবে।

ঔপনিবেশিক বিশ্ব থেকে যে প্রবীণ চিন্তাবিদরা বেরিয়ে এসেছিলেন, এখনো তারাই আঞ্চলিক বিষয়ে চিন্তার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করে রেখেছেন। কিন্তু আজকের দিনে এ ধরনের বিধিনিষেধ একেবারেই সেকেলে। কিন্তু নীতি নির্ধারকদের কাছেও যেতে হবে এবং এটা হাতে-কলমে দেখানোর চেয়ে উত্তম আর কি হতে পারে যে বিধিনিষেধ আরোপিত সমাজের দিন শেষ হয়ে গেছে। এটা শুধু এই অঞ্চলের জন্য নয়, বরং এ অঞ্চলভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।    সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status