দেশ বিদেশ

‘পুরো বিচার বিভাগ এখন নির্বাহী বিভাগের আওতাধীন’

স্টাফ রিপোর্টার

২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮, রবিবার, ৯:৪৪ পূর্বাহ্ন

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা তার বইয়ের মাধ্যমে যা প্রকাশ করলেন, তা জাতির জন্য  লজ্জাজনক। সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসেবে বিষয়টি আমাদের বিবেককে দংশন করে। গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সাবেক প্রধান বিচারপতির প্রকাশ হওয়া বই ‘অ্যা ব্রোকেন ড্রিম- স্ট্যাটাস অব রুল অব ল’. হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি যা এরইমধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং যেখানে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, সরকারের চাপ এবং হুমকির মুখে তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, সরকার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে ব্যবহার করে তাকে অসুস্থ বানিয়ে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে। তার দাবি, জোরপূর্বক তাকে পদত্যাগও করানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সরকারের প্রতি ইঙ্গিত করে জয়নুল আবেদীন বলেন, তারা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায়টি নিজেদের পক্ষে নিতে চেয়েছিলেন এবং বিচার বিভাগকে পূর্ণ করায়ত্ত করতে চেয়েছিলেন। তিনি অভিযোগ করেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি সিনহা প্রচণ্ড চাপের মুখেও ষোড়শ সংশোধনীর রায় সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দিয়েছিলেন। রায়ের পর সরকার পক্ষের লোকেরা পার্লামেন্টে এবং বিভিন্ন সভা-সমাবেশে তার পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতি সেই চাপের মুখে নত হননি। এ কারণে আপিল বিভাগের অন্য চার বিচারপতির মাধ্যমে তার (এস কে সিনহা) সঙ্গে একই এজলাসে না বসার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। ওই চার বিচারপতির মধ্যে পরে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম এ ওয়াহ্‌হাব মিঞাকে প্রধান বিচারপতি করার প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। পরে তিনি (এমএ ওয়াহ্‌হাব মিঞা) বিচারপতি সিনহাকে বলেছিলেন,  প্রেসিডেন্ট আমাদের বলেছেন আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ আছে, তাই আমরা আর আপনার সঙ্গে বিচারকার্যে বসতে চাই না। বিচারপতি ওয়াহ্‌হাব মিঞার এই বক্তব্যও ছিল সংবিধান পরিপন্থি। তবে এতকিছু সত্ত্বেও বিচারপতি সিনহা অটল ছিলেন। কিন্তু সরকার চাপ প্রয়োগ করে সিনহাকে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য করে এবং পরবর্তীতে তাকে পদত্যাগ করতেও বাধ্য করা হয়। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি বলেন, আমরা আইনজীবীরা তখন জাতির সামনে পরিষ্কার করেছি যে, বিচারপতি সিনহা অসুস্থ নন এবং তখনই বলেছিলাম ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতি সিনহাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। বিচারপতি সিনহাকে এ ধরনের চাপ প্রয়োগ করে পদত্যাগ করিয়ে পুরো বিচার বিভাগকে এখন নির্বাহী বিভাগের আওতাধীন করা হয়েছে। নিম্ন আদালতগুলো স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারছেন না বা পরিচালিত হচ্ছে না। দেশের মানুষ আজ অসহায়। বাংলাদেশে বর্তমান বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগের চাপের মুখে রয়েছে। অর্থাৎ বিচার বিভাগ পুরোপুরি সরকারের নিয়ন্ত্রণে বলেও তিনি সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন। জয়নুল আবেদীন আরো বলেন, বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের পর খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। দেশের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস জন্মেছে যে ওই রায়টিও (জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট) বিচার বিভাগের ওপর চাপ প্রয়োগ করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সমিতির সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা, গোলাম রহমান ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তার, সিনিয়র সহ-সম্পাদক কাজী মো. জয়নুল আবেদীন, সদস্য আহসান উল্লাহ, ব্যারিস্টার একেএম এহসানুর রহমান, অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলামসহ বিএনপিসমর্থিত আইনজীবীরা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status