বাংলারজমিন

শ্রীমঙ্গলে ডায়রিয়ায় চা-শ্রমিকের মৃত্যু হাসপাতাল ঘেরাও

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৪২ পূর্বাহ্ন

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্সের দায়িত্বে অবহেলার কারণে একজন ডায়রিয়া রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ তুলেছেন মৃত ব্যক্তির স্বজনরা। গতকাল ভোর ৫টায় হাসপাতালে ভর্তি ওই রোগীর মৃত্যু হয়। এসময় মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনরা প্রায় দুই ঘণ্টা সময় ধরে হাসপাতালের ডাক্তার ও নার্সদের ঘেরাও করে রাখে। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট নার্সের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১১ই সেপ্টেম্বর বঙ্কি রিকিয়াসন নামের আরেক চা-শ্রমিকের মৃত্যু ঘটে।

গত বুধবার সকালে উপজেলার কালীঘাট ইউনিয়নের অন্তর্গত ফিনলে টি-কোম্পানির ভাড়াউড়া ডিভিশনের ভুড়ভুড়িয়া চা-বাগানের শ্রমিক পারত মৃধা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে তাকে প্রথমে বাগানের ডিসপেনসারিতে ভর্তি করা হয়। দুপুরের দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারপরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো চা-বাগানের ডায়রিয়া পরিস্থিতি পরিদর্শন করতে বাগান ডিসপেনসারিতে যান। এসময় পারত মৃধার অবস্থার অবনতি দেখতে পেয়ে তিনি ওই রোগীকে সরকারি হাসপাতালে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সঙ্গে সঙ্গে পারত মৃধাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

মৃত পারত মৃধার ছেলে রিপন মৃধা অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে তার বাবাকে কয়েকটি স্যালাইন দেয়া হলেও রাত ১২টার পর আর কোনো স্যালাইন পুশ করা হয়নি। এমনকি তার শারীরিক অবস্থার খোঁজও কেউ নেয়নি। রাত ২টার দিকে তার বাবার অবস্থার আরো অবনতি হলে সে হাসপাতালের ডিউটি রুমে গিয়ে দেখে রুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ আছে। রিপন ডিউটি রুমের দরজায় অনেক ডাকাডাকি করে আবার ফিরে আসে। এভাবে বেশ কয়েকবার রিপনের শোর চিৎকারে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্যান্য রোগীর সঙ্গে থাকা স্বজনরাও এগিয়ে আসেন। তারা সবাই মিলে দরজায় জোরে ধাক্কা দেয়া শুরু করেন এবং দরজা ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেন। এমন সময় ভোর আনুমানিক ৪টার দিকে নার্স গীতা রানী চোখ মুছে মুছে দরজা খুলে তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করেন। রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক জেনেও তিনি হাত-মুখ ধোয়া ও ড্রেস পাল্টানোর বাহানা ধরে আরো ১ ঘণ্টা দেরি করেন। ভোর পৌনে ৫টার দিকে রীতা রানী পারত মৃধাকে মৃত ঘোষণা দিয়ে চলে যান। এর প্রায় ১০ মিনিট পরে পারত মৃধা আবারও শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দেখা যায়। এ অবস্থায় আবারও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ডাকলে ৫টার দিকে তার মৃত্যু হয় বলে নিহতের স্বজনরা অভিযোগ করেন।

হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীদের মধ্যে আসমা বেগমের সঙ্গে থাকা শাহ আলম (২৫), মজিদ মিয়ার সঙ্গে থাকা শেকুল মিয়া, বিউটি আক্তারের সঙ্গে থাকা আব্দুস শহীদ ও মালতী দেবনাথের সঙ্গে থাকা রনি দেবনাথও ওই নার্সের বিরুদ্ধে একই রকম দুর্ব্যবহার করেন।

নার্সের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে এবং অশালীন আচরণের অভিযোগে ভোর ৫টা হতে সকাল ৭টা পর্যন্ত রোগীর আত্মীয় স্বজন ও বিক্ষুব্ধ জনসাধারণ হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকদের ঘেরাও করে ফেলে। পরে ভাড়াউড়া ডিভিশনের ডিজিএম জিএম শিবলী, কালীঘাট ইউপি চেয়ারম্যান প্রানেশ গোয়ালা, ইউপি সদস্য শাওন পাশী, মিতু রায়, ভুড়ভুড়িয়া চা-বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি সুধীর রিকিয়াশন, বিডিইআরএম-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি সুনিল কুমার মৃধা, শ্রীমঙ্গল থানার এসআই রুকনুজ্জামান, মৃত ব্যক্তির ভাই কাশীনাথ মৃধা ও ছেলে রিপন মৃধার উপস্থিতিতে হাসপাতালে একটি জরুরি বৈঠক বসে।

ওই বৈঠকে নার্সের অবহেলার সত্যতা খোঁজে পান। এসময় উপস্থিত ব্যক্তিদের আনীত অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো নার্স গীতা রানী দাশের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে ত্বরিত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত পাঠানোর ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে আশ্বস্ত করেন। জানতে চাইলে ইউএইচও বলেন, নার্সের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে সিভিল সার্জন অফিসে পত্র পাঠিয়েছেন।

এদিকে ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো। তিনি এর কারণ হিসেবে বলেন, স্বাভাবিকভাবে আগে একেকজন রোগীকে ৪-৫ ব্যাগ (১ লিটার) কলেরা স্যালাইন পুশ করলে সুস্থ হয়ে যেতো। কিন্তু এখন একজন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীকে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১৫ ব্যাগ পর্যন্ত কলেরা স্যালাইন দিয়ে সুস্থ করে তুলতে হচ্ছে। আর এ বিষয়টিকেই তিনি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে মনে করছেন।

 তিনি জানান, বুধবার তিনি ভুড়ভুড়িয়া চা-বাগানের ডিসপেনসারিতে ভর্তি হওয়া ডায়রিয়া রোগী দেখতে যান। শ্রমিক কলোনিতে পয়ঃনিষ্কাশন অবস্থা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব রয়েছে। এখনো প্রতিদিন ৬-৭ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। এসব কারণে ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

ডা. জয়নাল আবেদীন টিটো জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টেলিফোনে কথা বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ ইনস্টিটিউট থেকে চারজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শ্রীমঙ্গলে নিয়ে আসা হচ্ছে। শুক্রবার থেকে তারা মাঠে কাজ করবেন।
তিনি জানান, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত কলেরা স্যালাইন নেই। ৪০০ ব্যাগ স্যালাইন চেয়ে সিভিল সার্জন অফিস থেকে ২৫০ ব্যাগ পেয়েছি। বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও ১০০০ ব্যাগ কলেরা স্যালাইন প্রয়োজন।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status