দেশ বিদেশ

সরকারি চাকরিজীবীদের স্বল্প সুদে গৃহঋণের আবেদন অক্টোবরে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ৯:১৬ পূর্বাহ্ন

সরকারের ব্যবস্থাপনায় ব্যাংক থেকে স্বল্প সুদে গৃহঋণ পেতে আগামী ১লা অক্টোবর থেকে অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। এ সুবিধার আওতায় মাত্র ৫ শতাংশ সরল সুদে তারা ৭৫ লাখ টাকা পর্যন্ত গৃহনির্মাণ ঋণ নিতে পারবেন।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আপাতত রাষ্ট্রায়ত্ত চার বাণিজ্যিক ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি) থেকে এই ঋণ নেয়া যাবে। চলতি মাসের শেষদিকে চার ব্যাংক ও বিএইচবিএফসি’র সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) সই করবে অর্থ বিভাগ। তারপর ১লা অক্টোবর থেকে অনলাইনে আবেদন করা যাবে।

গত ৩০শে জুলাই অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং-ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ প্রদান নীতিমালা-২০১৮’ প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়, চাকরি স্থায়ী হওয়ার পাঁচবছর পর থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এই ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন। আর আবেদনের জন্য সর্বোচ্চ বয়সসীমা হবে ৫৬ বছর। এ ঋণের সীমা ঠিক করা হয়েছে ২০ লাখ থেকে ৭৫ লাখ টাকা। ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বোচ্চ সময় হবে ২০ বছর। এ ঋণের জন্য ব্যাংক গড়ে ১০ শতাংশ হারে সুদ নেবে, তবে ঋণগ্রহীতাকে দিতে হবে ৫ শতাংশ। বাকিটা সরকারের পক্ষ থেকে পরিশোধ করা হবে ভর্তুকি হিসাবে।

কে কত টাকা ঋণ পাবে: জাতীয় বেতন স্কেলে পঞ্চম থেকে প্রথম গ্রেডভুক্ত, অর্থাৎ উপ-সচিব থেকে সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে বাড়ি নির্মাণ বা ফ্ল্যাট কেনার জন্য সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। জেলা সদরে এই অঙ্ক হবে ৬০ লাখ টাকা, অন্য এলাকায় ৫০ লাখ টাকা।

নবম থেকে ষষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তারা সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৬৫ লাখ টাকা, জেলা সদরে ৫৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পাবেন গৃহঋণ হিসেবে।

দশম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডের কর্মকর্তারা সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে পাবেন ৫৫ লাখ, জেলা সদরে ৪০ লাখ এবং অন্য এলাকায় ৩০ লাখ টাকা। চতুর্দশ থেকে সপ্তদশ গ্রেডের কর্মচারীরা সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৪০ লাখ টাকা, জেলা সদরে ৩০ লাখ টাকা এবং অন্য এলাকায় ২৫ লাখ টাকা গৃহঋণ নিতে পারবেন।

সর্বশেষ পর্যায়ে অষ্টাদশ থেকে বিংশতম গ্রেডের কর্মচারীরা সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে ৩০ লাখ, জেলা সদরে ২৫ লাখ এবং অন্য এলাকায় ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন আবাসন নির্মাণের জন্য। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ইতিমধ্যে ঋণ আবেদনের অভিন্ন ফরম তৈরি করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনুমোদনও দিয়েছেন।

জানা গেছে, সরকার ১৯৮২ সালে প্রথম সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য গৃহনির্মাণ ঋণ সুবিধা চালু করে। তখন ৪৮ মাসের মূল বেতনের সমপরিমাণ টাকা গৃহনির্মাণ ঋণ হিসেবে পাওয়া যেত, যা ৪৮টি সমান কিস্তিতে পরিশোধ করতে হত। এবারের নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাড়ি (আবাসিক) নির্মাণের জন্য একক ঋণ, জমি ক্রয়সহ বাড়ি (আবাসিক) নির্মাণের জন্য গ্রুপ ভিত্তিক ঋণ, জমিসহ তৈরি বাড়ি কেনার জন্য একক ঋণ এবং ফ্ল্যাট কেনার জন্য ঋণ এই গৃহ নির্মাণ ঋণের আওতায় আসবে।

ব্যক্তিগত জমির ওপর বাড়ি তৈরি করতে চাইলে ঋণের আবেদনপত্রের সঙ্গে জমির মূল মালিকানা দলিল জমা দিতে হবে। মালিকানা পরম্পরার তথ্যও দিতে হবে। সরকারি প্লট বা সরকার থেকে ইজারা নেয়া জমিতেও বাড়ি তৈরি করা যাবে। সেক্ষেত্রে ঋণ আবেদনের সঙ্গে প্লটের বরাদ্দপত্রের প্রমাণপত্র এবং অন্য দলিল জমা দিতে হবে। ডেভেলপারকে দিয়ে বাড়ি তৈরি করালে জমির মালিক এবং ডেভেলপারের সঙ্গে নিবন্ধন করা ফ্ল্যাট বণ্টনের চুক্তিপত্র, অনুমোদিত নকশা, ফ্ল্যাট নির্মাণস্থলের মাটি পরীক্ষার প্রতিবেদন, সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্ধারিত ছকে ইমারতের কাঠামো নকশা ও ভারবহন সনদ জমা দিতে হবে।

গৃহনির্মাণ ঋণের ক্ষেত্রে প্রথম কিস্তির ঋণের অর্থ পাওয়ার এক বছর পর এবং ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ঋণের টাকা পাওয়ার ছয় মাস পর ঋণ গ্রহিতার মাসিক কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে।  

বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ২১ লাখের মতো নতুন এই গৃহঋণ দিতে সরকারকে বছরে এক হাজার কোটি টাকার বেশি ভর্তুকি দিতে হবে বলে হিসাব করেছে অর্থমন্ত্রণালয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status