দেশ বিদেশ

গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে ফেলতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন- রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার

২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ৯:১৫ পূর্বাহ্ন

গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে ফেলতে ভোটারবিহীন সংসদে বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। গতকাল বৃহস্পতিবার দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, বাংলাদেশের মানুষের মুখ বন্ধ ও গণমাধ্যমের হাত-পা বেঁধে ফেলতে ভোটারবিহীন সংসদে পাস হলো বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।

গণমাধ্যমে অথবা যে কোনো মাধ্যমইে যেন সরকারের দুর্নীতির কোনো খবর প্রকাশিত না হয় বা প্রকাশ করতে না পারেন সেজন্যই এই ন্যক্কারজনক কালো আইন তৈরি করা হলো। এই আইনে মানুষের সকল বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে। দুর্নীতি ও মানবধিকার লঙ্ঘনের মতো অপরাধের বিস্তার লাভ করার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে এই আইনের মাধ্যমে। এটি সংবিধান বিরোধী একটি আইন।

তিনি বলেন, এ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সংবিধানের মূল চেতনা বিশেষ করে মুক্ত চিন্তা, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতাসহ মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ল। কারণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন বিনা ওয়ারেন্টে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের অফিস প্রবেশ করে তল্লাশির নামে তাণ্ডব চালাতে পারবে। কম্পিউটারসহ সকল কিছু সিজ করতে পারবে। যে কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারবে। সাধারণ মানুষও এই কালো আইনের থাবা থেকে রেহাই পাবে না। রিজভী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামক এই কালো আইনের ৮, ২১, ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ও ৪৩ ধারা সংবিধান পরিপন্থি। এই আইন বাকশালেরই প্রেতাত্মা।

এই কালাকানুনের বিরুদ্ধে দেশবাসীসহ সকল গণমাধ্যমের কর্মী, মুক্তচিন্তার মানুষদের রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে সরকার পদত্যাগে বাধ্য করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে ধ্বংস করার সকল ষড়যন্ত্র সম্পন্ন করেছে সরকার।

বন্দুকের নলের মুখে দেশ ত্যাগ ও পদত্যাগে বাধ্য হওয়া প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে কিভাবে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে তা তাঁর বইয়ে উল্লেখ করেছেন। কিভাবে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করে বিচারবিভাগকে সরকার নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। তিনি তাঁর আত্মজীবনী বইয়ে পরিষ্কার উল্লেখ করেছেন- সরকারের চাপে ও হুমকির মুখে দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। বিচারপতি সিনহা তাঁর ‘এ ব্রোকেন ড্রিম’ বইয়ে পরিষ্কার বলেছেন- বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার হুমকি ও ভীতি প্রদর্শনের মুখে তিনি দেশ ছেড়েছেন। তাঁর পরিবারকে জিম্মি করে বিদেশে থাকাকালীন অবস্থায় তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। বিবিসি’র রিপোর্টসহ দেশের কিছু গণমাধ্যমে আজকে তা প্রকাশ পেয়েছে।

রিজভী বলেন, এসকে সিনহার বক্তব্যে আরও পরিষ্কার হলো বন্দুকের নলের মুখে বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণে নিয়েই সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা সাজানো মামলায় রায় দিয়ে কারাবন্দি করে এক নম্বর মিশন কার্যকর করেছে। এখন দুই নম্বর মিশন কার্যকর করতে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২১শে আগস্টের মামলায় আগামী ১০ই অক্টোবর রায় দেয়া হবে। দীর্ঘ ১৪ বছর ঝুলন্ত রাখার পর আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা সুপরিকল্পিত নীল-নকশারই অংশ। কারণ রায় প্রকাশের আগেই সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা নানা ধরণের বক্তব্য রাখছেন। বলছেন- এই রায় প্রকাশিত হওয়ার পর বিএনপি বিপাকে পড়বে। তার মানে সরকার জানে কি রায় হতে যাচ্ছে অথবা সরকারই ২১শে আগস্ট মামলার রায় লিখে দিচ্ছে।

রিজভী বলেন, এ মামলার রায়ে ন্যায়বিচার সমুন্নত রাখা হবে কি না তা নিয়ে জনমনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর আক্রোশবশতই ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অন্যায়ভাবে তাকে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। দলের চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, দেশনেত্রী গুরুতর অসুস্থ হওয়ার পরও সরকার তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন না। বরং তাকে চিকিৎসা না দিয়ে তিলে তিলে মারার চক্রান্ত করছে। আমরা অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে বিশেষায়িত ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানাচ্ছি।

এ সময় তিনি বলেন, বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি’র সভাপতি হাবিব-উন- নবী খান সোহেলকে অন্যায়ভাবে ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। আমি সোহেলকে রিমান্ডে নেয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। অবিলম্বে তার রিমান্ড বাতিল, সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর বাসভবনে আওয়ামী লীগের লোকেরা হামলা চালিয়ে ভাঙচুর এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইয়াছিন আলীর বাসভবনে তল্লাশির নামে পুলিশি তাণ্ডবের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান রুহুল কবির রিজভী।

এছাড়া আদালতে হাজিরা শেষে ফেরার পথে নাটোর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ফয়সাল আলম আবুল এবং জেলা ছাত্রদল সভাপতি কামরুল ইসলামসহ ৭ জন নেতাকর্মীকে তুলে নিয়ে গিয়ে কোন হদিস দিচ্ছে না পুলিশ। আমি তাদেরকে আটক ও আটকের বিষয়ে পুলিশের অস্বীকারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে তাদের অবস্থান নিশ্চিতের জোর দাবি করছি। ব্রিফিংয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন ও নির্বাহী কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status