শেষের পাতা

শুল্ক বাধা দূর হলে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্য দ্বিগুণ করা সম্ভব-বিশ্বব্যাংক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন

বিশ্বব্যাংক মনে করে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্ভাবনার অর্ধেকও কাজে লাগাতে পারছে না বাংলাদেশ। ফলে বাড়ছে ঘাটতি। যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায় ভবিষ্যতে সংকট বাড়াতে পারে। শুল্ক-অশুল্ক বাধার কারণে বাণিজ্য বাড়ছে না। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্য হচ্ছে ৭৬০০ কোটি ডলারের। আস্থার সংকট ও বাধাগুলো দূর করতে পারলে এটি ১৮৯০০ কোটি ডলারে উন্নত করা সম্ভব বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে ‘এ গ্লাস হাফ ফুল: দ্য প্রমিজ অব রিজিওনাল ট্রেড ইউনিয়ন ইন সাউথ এশিয়া’ শীর্ষক প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচনকালে এই তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়, বিশ্বে বাংলাদেশের বাণিজ্য এখন ৮৪৩০০ কোটি ডলারের। অথচ দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের বাণিজ্য হচ্ছে মাত্র ৭৬০০ কোটি ডলারের। সারা বিশ্বে যেখানে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হচ্ছে, সেখানে গত ২৫ বছরে এ অঞ্চলের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ২৩ বিলিয়ন ডলারে আটকে আছে। শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো দূর করতে পারলে এ অঞ্চলের বাণিজ্য তিন গুণ অর্থাৎ ৬৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত সম্ভব বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে রিপোর্টের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ও সমন্বয়ক সঞ্জয় কাঠুরিয়া। তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সাফটা চুক্তি রয়েছে। অর্থাৎ কোনো শুল্ক থাকার কথা নয়। অথচ এই অঞ্চলেই বেশি শুল্ক রয়েছে। সরাসরি শুল্কের বাইরে প্যারা ট্যারিফ রয়েছে। এটাকে বলা যায় কোনো শুল্ক নেই তবু সবচেয়ে বেশি শুল্ক।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পৃথিবীর অন্য অঞ্চলের চেয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বাণিজ্যে ব্যয় সবচেয়ে বেশি। এ অঞ্চলের গড় শুল্কহার অন্য অঞ্চলের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। পৃথিবীর যেকোনো অঞ্চলের চেয়ে এই অঞ্চলে আমদানিতে সবচেয়ে বেশি বাধা দেয়া হয়। দেশগুলো উচ্চহারে নিয়ন্ত্রণমূলক ও সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে। পাশাপাশি সংবেদনশীল পণ্যের তালিকায় ফেলানো হয় অন্তত এক-তৃতীয়াংশ পণ্যকে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালের আগে দক্ষিণ এশিয়া এক বাজার ছিল। সেই অবস্থায় তো আর এখন ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। তবে এ দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য উন্নয়নে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের আগ্রহ শুধু ইউরোপ ও আমেরিকা নিয়ে। মন্ত্রী বলেন, প্রতিবেদনে যেসব সমস্যার কথা বলা হয়েছে, তাতে আমি একমত। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে বিশ্বের অন্য অঞ্চলের চেয়ে দক্ষিণ এশিয়া পিছিয়ে রয়েছে। তবে শুল্ক ও অশুল্ক বাধাগুলো দূর করার জন্য সরকারগুলো কাজ করছে বলেও জানান তিনি। বলেন, এ অঞ্চলের ভৌত যোগাযোগ বৃদ্ধির অনেক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

পিআরআই-এর চেয়ারম্যান ড. জায়েদি সাত্তার বলেন, পিআরআই-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৪ সালে যখন সাফটা (সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়া) চুক্তি হয়, তখন বিশ্ববাণিজ্যে দক্ষিণ এশিয়ার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যেও অংশগ্রহণ ছিল ৫ শতাংশ। এখন তা কমে হয়েছে আড়াই শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্ববাণিজ্যে এশিয়ার অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের অবদান ২৫ শতাংশ। অন্যদিকে ইউরোপের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের অবদান ৬৩ শতাংশ। ১৯৪৭ সালের আগে এটি ছিল ৩০ শতাংশ। ড. সাত্তার বলেন, শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার জন্য সরকারগুলো অনেক কিছু করেছে। রাস্তা-ঘাট নির্মাণ হচ্ছে। তবে এটি আরো বেগবান করা দরকার। প্লাসের অর্ধেক ভরে গেছে বলে বসে থাকার সুযোগ নেই। বাকি অর্ধেকের জন্য কাজ করতে হবে।

বিশ্ব ব্যাংকের বাংলাদেশ কান্ট্রি ডিরেক্টর চিমিয়াও ফান বলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘ সীমান্ত থাকার পরও দুই দেশের মধ্যে বৈধ পথে মাত্র ১৭ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। অথচ সম্ভাবনা রয়েছে কমপক্ষে সোয়া ৩ লাখ কোটি টাকার বাণিজ্যের। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো তাদের নিজেদের সঙ্গে সম্পন্ন করে থাকে ৬৩ শতাংশ বাণিজ্য। এমন বাস্তবতায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো এবং চলমান সংকট দূর করার পরামর্শ দেন তিনি। বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়া দেশগুলোর মধ্যে মোট বাণিজ্য হয় ২৩ বিলিয়ন ডলারের। যার চার ভাগের তিন ভাগই দখলে রেখেছে ভারত। বিশ্বব্যাংক বলছে, এই অঙ্ক বাড়ানো সম্ভব আরো তিনগুণ। যাতে অংশ বাড়বে অন্য দেশগুলোরও।

প্যানেল আলোচনায় প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও আহসান খান চৌধুরী বলেন, আঞ্চলিক বাণিজ্যে বড় বেনিফিশিয়ারি প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রাণের পণ্য এখন ভারত, নেপালে প্রচুর রপ্তানি হচ্ছে। এটি শুরুতে এতটা সহজ ছিল না। এখনো অনেক সমস্যা রয়েছে। আমাদের সনদের মান নিয়ে এখনো আপত্তি আছে অন্য দেশগুলোর। বিএসটিআইকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। এ অঞ্চলে আস্থার সংকট বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্ডার হাট এ সংকট কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করছে। তিনি বলেন, ভারতের ৩৪ রাজ্যের মধ্যে ১০টিতে এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে প্রাণের পণ্য। সরাসরি ট্রাক চলাচলের অনুমতি পেলে অচিরেই পুরো ভারতের ভোক্তাবাজারে বড় দখল নেয়া সম্ভব- এমন আশা তার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status