বাংলারজমিন

তবুও এগিয়ে যেতে চায় সাগর

প্রতীক ওমর, বগুড়া/দেওয়ান পলাশ, দুপচাঁচিয়া থেকে

২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৮:১৭ পূর্বাহ্ন

হুইল চেয়ারে বসা। দুই পা-ই অচল। তার ওপর ডান হাতও অকেজো। বাম হতে কোনো রকমে কলম ধরতে পারে। আর সেই বাম হাতের সামান্য শক্তির ওপর ভর করেই দুপচাঁচিয়া মহিলা কলেজ কেন্দ্রে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনুষ্ঠিত চলমান ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে আতিকুর রহমান সাগর।
সাগর দুপচাঁচিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় হতে ২০১৩ সালে জিপিএ-৩.০৬ পেয়ে এসএসসি এবং দুপচাঁচিয়া জাহানারা কামরুজ্জামান কলেজ হতে জিপিএ ২.৮১ পেয়ে এইচএসসি পাস করে। সাগর দুপচাঁচিয়া পৌর এলাকায় বসবাসরত আজাহার আলীর ছেলে। তার মাতার নাম জোলেখা খাতুন। পিতা আজাহার আলী পেশায় ভ্যানচালক আর মা জোলেখা খাতুন গৃহিণী। পিতা-মাতার দু’সন্তানের মধ্য সাগর বড়। জন্মের পর থেকে স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে ওঠে সাগর। পাঁচবছর বয়সে হঠাৎ একদিন সে প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়। তার পর থেকে আস্তে আস্তে তার হাত পা বিকলাঙ্গ হয়ে যায়। অর্থাভাব সত্ত্বেও বিভিন্নভাবে চিকিৎসা করিয়েছেন পিতা-মাতা। সাগরকে সুস্থ করানো আর সম্ভব হয়নি। সাগরের হাত পায়ে তীব্র জ্বালা অনুভব করে সব সময়। স্থির থাকতে পারে না, ছটফট করে। তাই শিশুর মতো সাগরকে আগলে রাখে মা জুলেখা খাতুন। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ সাগরের। সাগরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০১ সালে দুপচাঁচিয়ায় প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করত বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন অ্যাকশন অন ডিজঅ্যাবিলিটি এন্ড ডেভলভেমেন্ট (এডিডি)। সংগঠনের ভলেন্টিয়ার মাসুদ তাকে স্নেহের চোখে দেখত। মাসুদের কাছে সাগর লেখাপড়ার প্রতি অদম্য আগ্রহের কথা জানায়। তখন মাসুদ সাগরকে দুপচাঁচিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। ২০০৩ সালে এডিডি’র সহযোগিতায় সাগরের জন্য ব্যবস্থা করা হয় একটি ট্রাই সাইকেলের। মা কিংবা সহপাঠীরা পেছনে ঠেলে তাকে স্কুলে নিয়ে যেত। বর্তমানে ট্রাই সাইকেলটি পুরনো হয়ে যাওয়ায় প্রায় অকেজো হয়ে গেছে। মাসিক ৭০০ টাকা হারে প্রতিবন্ধী ভাতা পায় সাগর। আর এ প্রাপ্ত টাকা থেকেই বই-খাতা কেনা সহ লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে নিতে হয়। শত কষ্ট হলেও মাস্টার্স ডিগ্রি পর্যন্ত লেখাপড়া করার আগ্রহ তার। মানুষের বোঝা হয়ে থাকতে চায় না, লেখাপড়া শেষে বেঁচে থাকার মতো অবলম্বন চায় সাগর। সাগরের পিতা মাতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বসতবাড়ির ২ শতাংশ জায়গা ছাড়া আর কোনো সম্পত্তি নাই। পিতা আজাহার আলীকে সংসার চালানোর জন্য ভ্যান চালাতে হয়। ভ্যানটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কেনা। ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য সপ্তাহে ১০০০ টাকা কিস্তি দিতে হয়। অভাব-অনটনের সংসারে শারীরিক প্রতিবন্ধী সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাড়তি উদ্বিগ্নতা তাদের।
দুপচাঁচিয়া জাহানারা কামরুজ্জামান কলেজের অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ প্রাং জানান, ডিগ্রি পরীক্ষার আগে সামান্য টাকায় তার ফরম ফিলাপ করা হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সরকার প্রদত্ত উপবৃত্তি পাওয়ার জন্য ইতিমধ্যে তাকে নির্বাচন করা হয়েছে।
দুপচাঁচিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, সাগরের বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক। বিত্তশালীদের তার সাহায্যে এগিয়ে আসা উচিত। লিখিত আবেদন পেলে শিগগিরই তার জন্য থ্রি হুইলারের ব্যবস্থা করা হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status