দেশ বিদেশ

২ কোটিরও বেশি মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে দুই কোটিরও অধিক লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত বলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। ৪০ হাজার লোক দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যু বরণ করে, আরো ১৫ থেকে ২০ হাজার লোক আকস্মিক কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করে প্রতিবছর। ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করে ৫ জন রোগী। কিডনি বিকল হয়ে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজন। এখনো কিডনি সংযোজনের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। গতকাল “দৈনিক প্রথম আলো” পত্রিকার সেমিনার কক্ষে “কিডনি রোগ প্রতিরোধযোগ্য, প্রয়োজন জনসচেতনতা” শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা এসব কথা বলেন। দেশব্যাপী সচেতনতামূলক কার্যক্রমকে আরো বেগবান করতে বিআরবি হসপিটালস্‌ লিমিটেড ও প্রথম আলো যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে। “সুস্থ কিডনি, সুস্থ জীবন” এই স্লোগানকে সামনে রেখে, সেপ্টেম্বর মাসের ১৫ থেকে ২১শে তারিখ পর্যন্ত কিডনি রোগ সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে “কিডনি সচেতনতা ও সেবা সপ্তাহ-২০১৮” পালন করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে নামমাত্র মূল্যে বিআরবি হাসপাতালে কিডনি রোগ নির্ণয়ের কার্যক্রম চলছে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। গোলটেবিল বৈঠকে বিআরবি হসপিটালস্‌ লিমিটেডের কিডনি বিভাগের প্রধান ও বিশিষ্ট কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ, দেশব্যাপী কিডনি সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে, কিডনি রোগের ওপর এক বিশেষ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, শুধু লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করে, ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। মূল বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, কিডনি সপ্তাহ পালনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কিডনি রোগের ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা সম্পর্কে দেশব্যাপী মানুষকে সচেতন করা ও কিডনি বিকল প্রতিরোধে প্রাথমিক অবস্থায় কিডনি রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা করা ও সুস্থ জীবনধারায় সবাইকে অভ্যস্ত করা। তিনি বলেন, আমাদের কাছে জাতীয় সার্ভের মাধ্যমে সঠিক কোনো তথ্য নেই। তবে বিভিন্ন উপাত্ত থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে দুই কোটিরও অধিক লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। ৪০ হাজার লোক দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যুবরণ করে, আরো ১৫ থেকে ২০ হাজার লোক আকস্মিক কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করে প্রতিবছর। ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করে ৫ জন রোগী। কিডনি বিকল হয়ে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় ডায়ালাইসিস্‌ বা কিডনি সংযোজন। এখনো কিডনি সংযোজনের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য। একজন কিডনি বিকল রোগীর বেঁচে থাকতে সপ্তাহে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ বার ডায়ালাইসিস করতে হয়। ডায়ালাইসিস করতে প্রতি মাসে ওষুধসহ খরচ হয় প্রায় ৪০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। যদিও একই মানসম্পন্ন চিকিৎসা নিতে উন্নত দেশে খরচ হয় প্রায় ১০ গুণ। বাংলাদেশের শতকরা ১০ ভাগ লোকেরও সামর্থ্য নাই এই বিশাল ব্যয়ভার বহন করার। তাই শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি রোগী মৃত্যুবরণ করে বলতে গেলে বিনা চিকিৎসায়। আমরা জানি কিডনি রোগ ভয়াবহ, কিন্তু প্রতিরোধযোগ্য। আর সেই প্রতিরোধ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য। কিডনি রোগ প্রতিরোধে, বিশ্বব্যাপী গৃহীত স্বর্ণালী উপায়গুলো নিয়ে তিনি বিশদ আলোচনা করেন। তিনি বলেন, কিডনি ভালো রাখতে হলে, অলসতা পরিহার করে, কায়িক পরিশ্রম ও নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। সমীক্ষায় দেখা গেছে, শুধু নিয়মিত হাঁটার কারণে গড় আয়ু ১৩ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সুপ্ত উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করতে হবে। মনে রাখতে হবে, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস কিডনি বিকলের প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমাদের দেশের প্রাপ্তবয়স্ক লোকের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ ভাগ লোকেরই উচ্চ রক্তচাপ আছে। কিন্তু শতকরা ৫০ ভাগের অধিক লোকই জানেন না যে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে। কারণ এর কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তাই সুপ্ত রক্তচাপ নির্র্ণয়ের জন্য বছরে ৩/৪ বার রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত। রক্তচাপ এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যেন তা ১৩০/৮০ নিচে থাকে। এ ছাড়াও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পরিমিত সুষম খাবার সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত অপরিহার্য। তবে মনে রাখতে হবে যে, অতি ভোজন ও অতি ওজন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। খাবারের সঙ্গে আলগা লবণ (ঊীঃৎধ ঝধষঃ) পরিহার করতে হবে। অতি মসলাযুক্ত, বেশি ভাজা পোড়া খাবার, অতিরিক্ত ঝাল এবং প্রাণিজ তেল যেমন- গরু-খাসির চর্বি, ঘি, মাখন নিয়ন্ত্রণ করে খেতে হবে। পানির অপর নাম জীবন। কিডনি সচল রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। একজন বয়স্ক লোকের প্রতিদিন দেড় থেকে তিন লিটার পানি পান করা উচিত। ধূমপান ও মাদক সেবন থেকে বিরত থাকার কথাও তিনি উল্লেখ করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি বছর শুধু ধূমপানের জন্য সারা বিশ্বে মৃত্যু হয় ৬৬ লাখ মানুষের। বক্তারা আরো বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে হাঁটার পরিবেশ নেই। ফুটপাথ হকারদের দখলে, অধিকাংশ স্কুলে বাচ্চাদের খেলার মাঠ নেই। ফলে স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েরা ফেসবুক, ভিডিও গেম্‌স, টিভি দেখার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন। ফলে অলস নিষ্ক্রিয় জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। অবশ্যই সকলে মিলে সমস্যাগুলোর সমাধান করা সময়ের দাবি। সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন বিআরবি হসপিটালস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু আলতাফ হোসেন এবং একেএম শাহরিয়ার, হেড অব ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাগণ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status