অনলাইন

ছাত্রকে পিটিয়ে থানায় গিয়ে ক্ষমা চাইলেন অধ্যক্ষ!

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৮:২২ পূর্বাহ্ন

নম্বরপত্র চাইতে গিয়ে অধ্যক্ষের হাতে বেধড়ক পিটুনির শিকার হন জাকারিয়া হোসেন নাহিদ (১৯) নামে চট্টগ্রাম বিজ্ঞান কলেজের এক ছাত্র। থানায় সোপর্দও করা হয় তাকে। কিন্তু ওসির ভর্ৎসনায় থানায় গিয়ে লিখিতভাবে ক্ষমা চাইলেন ওই কলেজের অধ্যক্ষ ড. জাহেদ খান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ড. জাহেদ খান বলেন, ছেলেটার সমস্যা আছে। সে কলেজের ফি নিয়ে আগেও আন্দোলন করেছিল। এখন সানগ্লাস পড়ে আমার রুমে ঢুকায় আমি একটু রেগে গিয়েছিলাম। তাই তাকে একটু বকাঝকা করেছি। মারধর করিনি।

মারধর না করলে থানায় গিয়ে লিখিতভাবে ক্ষমা চাইলেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে জাহেদ খান বলেন-ওসি সাহেব বলেছেন সেজন্য আমি লিখিত একটা বক্তব্য দিয়েছি। আমার কলেজের অবস্থা এখন খুবই খারাপ। তাই যে কোনভাবে বিষয়টি সামাল দিতে হয়েছে।

চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ এ প্রসঙ্গে বলেন, বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষ সোমবার দুপুরে জাকারিয়া হোসেন নাহিদকে থানায় সোপর্দ করেন। ড. জাহেদ খান তখন নাহিদের বিরুদ্ধে মামলাও করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে নাহিদ জানান, বিনয়ের সঙ্গে মার্কশিট চাওয়ার পরও অধ্যক্ষ ড. জাহেদ খান রেগে গিয়ে তাকে কিল-ঘুষি ও চড়-থাপ্পড় মেরেছেন।

নাহিদের দাবি, অধ্যক্ষ জাহেদ খান তাকে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের পদত্যাগী সভাপতি নুরুল আজিম রনির অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী বলে সন্দেহ করে এই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছেন। মারধরে আঘাত পাওয়ার পর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলেও জানান নাহিদ।

বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর অধ্যক্ষ ড. জাহেদ খান নিজেই আপোষ করেন। লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে অধ্যক্ষ ও ছাত্র উভয়ে স্বাক্ষর করেছেন। অধ্যক্ষ ওই ছাত্রের মার্কশিট দিয়ে দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

জাকারিয়া হোসেন নাহিদ জানান, তিনি পরীক্ষার নম্বরপত্রের জন্য সোমবার দুপুরে কলেজে অধ্যক্ষের কক্ষে যান। তাকে দেখেই রেগে যান জাহেদ খান। তিনি নিজের চেয়ার ছেড়ে গিয়ে তাকে কিল-ঘুষি মারেন। এসময় কয়েকজন শিক্ষক দাঁড়িয়ে ঘটনা দেখলেও অধ্যক্ষকে বাধা দেননি।

নাহিদ বলেন-প্রিন্সিপ্যাল স্যার আমাকে পেটাচ্ছিলেন আর বলছিলেন-তোকে মেরে ফেলব। তোকে জেলে ঢুকিয়ে দেব। তুই আগেও কলেজের বিপক্ষে আন্দোলন করেছিলি। তুই মামলার আসামি।
নাহিদ জানান, মারধরের পর অধ্যক্ষ নিজেই পুলিশ ডেকে তাকে চকবাজার থানায় সোপর্দ করেন। এসময় জাহেদ খান থানায় গিয়ে নাহিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে চাইলে ওসি রেগে যান। ওসি এসময় বলেন-মামলা আপনার বিরুদ্ধে হবে। আপনি তার গায়ে হাত তুললেন কেন? আইন নিজের হাতে নিলেন কেন?

নাহিদ বলেন- কিছুক্ষণ পর চকবাজার থানা যুবলীগ নেতা টিনুর অনুসারী কয়েকজন নেতাকর্মী থানায় যান। তারা অধ্যক্ষের পক্ষ নিয়ে পুলিশকে বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করতে শুরু করেন। এসময় পুলিশ কারও মামলা নেওয়া হবে না জানিয়ে উভয়পক্ষকে সমঝোতার জন্য লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলেন। তখন প্রিন্সিপ্যাল স্যার লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আমারে বাবাকে রাজি করিয়ে আমার কাছ থেকেও ক্ষমা প্রার্থনার বক্তব্যে স্বাক্ষর নেন ওসি।
উল্লেখ্য, পাঁচ হাজার টাকা করে উন্নয়ন ফি আদায়ের জন্য গত মার্চে তিন শতাধিক এইচএসসি পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছিল বিজ্ঞান কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। সেই প্রবেশপত্র আদায়ের জন্য নগর ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ স¤পাদক নুরুল আজিম রনি আন্দোলনে নেমেছিলেন। এ আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন নাহিদ। তবে আন্দোলনের মুখে প্রবেশপত্র ফেরত দিতে বাধ্য হন জাহেদ খান।

তবে ২৯ মার্চ সেই আন্দোলনের সময় জাহেদ খানকে ঘুষি দেওয়ার একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিতর্কের মুখে পড়েন রনি। রনিসহ তার কয়েকজন অনুসারীর বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় মারধর ও চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status