অনলাইন

চট্টগ্রাম কলেজ কমিটি পেয়েই বিক্ষোভ, ভাংচুর ও সংঘর্ষে ছাত্রলীগ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৭:১৭ পূর্বাহ্ন

কমিটির জন্য হা হুতাশ কম ছিল না। কারণ ৩৪ বছর ধরে কমিটি বঞ্চিত ছিল চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ। কিন্তু কমিটি পেয়েই বিক্ষোভে নামে তিনভাগে বিভক্ত কলেজ ছাত্রলীগ। লিপ্ত হয় সংঘর্ষ ও ভাঙচুরে। করেন সড়ক অবরোধ ও ককটেল বিস্ফোরণ। চট্টগ্রাম কলেজ ও আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এমন পরিস্থিতি ছিল আজ মঙ্গলবার দিনভর। এতে সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় মানুষের নানা দুর্ভোগ। আতঙ্কিত হয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা।
আর এসবের নিরব সাক্ষি ছিলেন কলেজ ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা শত শত পুলিশ। ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও ককটেল বিস্ফোরণে কোন আইনি পদক্ষেপ ছিল না পুলিশের। তবে পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা দুপুর ২টার দিকে এসে চকবাজার সড়কে দেওয়া ব্যারিকেড সরিয়ে নেওয়ার পর যানবাহন চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হয়।

ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জানান, সোমবার রাতে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ২৫ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ। এতে মাহমুদুল করিমকে সভাপতি ও সুভাষ মল্লিক সবুজকে সাধারণ স¤পাদক করে কমিটি অনুমোদন দেয় নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হাসান ইমু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ স¤পাদক দস্তগীর চৌধুরী।
মাহমুদুল করিম প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী এবং সবুজ প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির অনুসারী।

আর এই কমিটি প্রত্যাখান করে মঙ্গলবার সকাল থেকে ক্যা¤পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। নতুন কমিটিতে পদ পাওয়া মেয়রের ছয়জন অনুসারী কমিটি থেকে পদত্যাগও করেন।  

যারা ক্যা¤পাস থেকে বের হয়ে চট্টগ্রাম কলেজের সামনে সড়কে অবস্থান নেন। তারা সড়কের উপর টায়ার জ্বালিয়ে দেন। এসময় ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ক্ষুব্ধ কয়েকজন নেতাকর্মী এ সময় কয়েকটি গাড়িও ভাংচুর করেন।

বিক্ষুব্ধ নেতাদের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে কমিটিতে ছাত্রদল ও শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্তদের পদ দেওয়া হয়েছে। ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে রাতের আঁধারে এ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। যা কোনভাবেই মেনে নেবেন না তারা।

অপরদিকে কলেজ ক্যা¤পাসে অবস্থান নেন ঘোষিত নতুন কমিটির নেতারা। ফলে বিকেলে কলেজ চলাকালীন সময় পর্যন্ত মুখোমুখি অবস্থানে ছিল দু‘পক্ষের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কলেজ ক্যাম্পাসের বাইরে চকবাজার থেকে জামালখান পর্যন্ত।

প্রত্যক্ষদশীরা জানান, মঙ্গলবার সকাল ১১ টার দিকে পদবঞ্চিতরা কলেজের সামনের বাঁশ দিয়ে সড়ক অবরোধ করে এবং বিক্ষোভ করতে থাকে। এসময় তাদের সাথে যোগ দেয় কমিটিতে পদ পাওয়া বেশ কয়েকজন নেতাও। এসময় বাইরে থেকে একটি গ্রুপ কলেজের ভিতরে প্রবেশ করলে দুটি পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি ও ধাওয়া-পাল্টা শুরু হয়। পরে দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে।

এ সময় কমিটির নতুন দায়িত্বপ্রাপ্তদের টেনে হিঁছড়ে কলেজ ক্যা¤পাস থেকে বের করে দেয় চকবাজার যুবলীগ নেতা টিনুর সমর্থকরা। উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বাইরে ককটেল বিস্ফোরনের ঘটনাও ঘটে। ভাঙচুর করা হয় বেশ কয়েকটি গাড়ী।

প্রায় দুইঘন্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে রাখায় আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় পাশর্^বর্তি চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মহসিন উচ্চ বিদ্যালয়, কাজেম আলী স্কুল এন্ড কলেজ এবং নগরীর জামালখান এলাকায় ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট মেরিস স্কুলসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি হলে সড়কে পুরোপুরি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তীব্র রোদ ও গরমের মধ্যে যানজটে আটকা পড়া স্কুলশিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সাধারণ মানুষকেও পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের চকবাজার জোনের সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমা এ প্রসঙ্গে বলেন, কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি গঠনের বিরোধ নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। এক পক্ষ সড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করেছিল। পরে আমরা গিয়ে সড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করেছি।

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ স¤পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ৩৪ বছর পর চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের একটি আংশিক কমিটি আমরা দিতে পেরেছি। আমাদের ভুলত্রুটি থাকতেই পারে। কিন্তু আমরা আমাদের মুরব্বী সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে পরামর্শক্রমে কমিটি দিয়েছি। একটি কমিটিতে তো দুজন সভাপতি দেওয়া যায় না কিংবা দুজন সাধারণ স¤পাদক দেওয়া যায় না। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার সময় কমিটি নিয়ে অভিযোগ থাকলে সেটার সুরাহা হবে।

তিনি বলেন, এতবছর পর শিবিরের দখল থেকে আমরা কলেজটাকে মুক্ত করেছি। আমরা চাই, ছাত্রলীগ সেখানে মিলেমিশে রাজনীতি করুক। গ্রুপিং আমাদের সংগঠনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়া সহ-সভাপতি ওবায়েদুল হক বলেন, কাউকে না জানিয়ে রাতের আঁধারে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ স¤পাদক কমিটি করেছেন। প্রকৃত সহযোদ্ধাদের মূল্যায়ন না করে ছাত্রদল ও শিবিরের কর্মীদের পদ দিয়েছেন। এর প্রতিবাদে আমরা ৬ জন কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছি।
সড়ক অবরোধের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা সড়কে শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেছি। এজন্য জনসাধারণের দুর্ভোগ হয়েছে। এর দায়ভার নগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ স¤পাদককে অবশ্যই নিতে হবে।


চট্টগ্রাম শহর ছাত্রলীগের সভাপতি মফিজুর রহমান বলেন, ১৯৮৪ সালে সত্যজিৎ চক্রবর্তী সুজনকে আহ্বায়ক করে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল। এরপর আমরা শিবিরের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে আর কলেজে ঢুকতে পারিনি। তখন আমরা চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের ব্যানারে মুসলিম হলে অনুষ্ঠান করতাম। যেহেতু কলেজ ক্যা¤পাসে যাওয়া সম্ভব ছিল না। ১৯৮৪ সালের পর ছাত্রলীগের আর কোন কমিটি হয়নি।

এরপর ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগ পুলিশের সহযোগিতায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় শিবিরের সাথে রক্তক্ষয়ি সংঘর্ষের পর।  এর পর থেকে প্রতিনিয়ত ছাত্রলীগের বিভিন্ন গ্রুপ নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ চালিয়ে আসছে। গত ৩ বছরে অন্তত ২৫ বার সংঘর্ষ হয়েছে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ বিরোধে। যা কারোই কাম্য নয়।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status