প্রথম পাতা

খোঁজ মেলেনি পাঁচজনের দিশাহারা পরিবার

মরিয়ম চম্পা

১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন

ছয় দিনেও খোঁজ মেলেনি রাজধানীর বিমানবন্দর ও যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে নিখোঁজ হওয়া পাঁচ ব্যক্তির। সন্তানদের খোঁজ না পেয়ে পাগলপ্রায় পরিবারের লোকজন। হাসপাতাল, থানাসহ  সম্ভাব্য বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন তারা। নিখোঁজ শাফিউল আলম ও মনিরুল আলমের বড় ভাই রাফিউল আলম মানবজমিনকে বলেন, ডিবি কার্যালয় ও স্থানীয় থানাসহ বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজির পরেও সন্ধান মেলেনি দুই ভাইয়ের।

ডিবি কার্যালয়ে গেলে তারা জানায় এখানে নেই। থানায় জিডি করতে গেলে পুলিশ জিডি নিতে চায় না। সব মিলিয়ে পুরো বিষয়টি নিয়ে একটি ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে। রাফিউল জানান, তার বাবা মো. আশারাফ উদ্দীন একজন অবসরপ্রাপ্ত হেলথ কর্মকর্তা। মা রমিছা খানম গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুরের বাধাই গ্রামে। শাফিউল ও মনিরুলের শোকে তাদের সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ বাবা পাগলপ্রায় অবস্থা। তাকে নিয়মিত ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়াতে হয়। কান্নাজড়িত কণ্ঠে রাফিউল বলেন, পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে শাফিউল চতুর্থ ও মনিরুল সবার ছোট। তাদের বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ নেই। শাফিউল ইংলিশে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে ঢাকা বারের শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ছোট ভাই মনিরুল উত্তরার কামারপাড়া আইইউবিটিআই থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। আমরা চাই খুব শিগগিরই আমার দুই ভাই আমাদের কাছে ফিরে আসুক।

আবুল হায়াতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আবুল হায়াতের বাবার নাম আব্দুর রউফ। তিনি একজন প্রবাসী। দুই ভাই-বোনের মধ্যে আবুল হায়াত ছোট। গ্রামের বাড়ি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের বালিয়াডাঙ্গায়। ঢাকার উত্তরার আইইউবিটিআই থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন আবুল হায়াত। চলতি মাসের ২৪ তারিখ রাজশাহী কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে বাগদানের কথা ছিল। একমাত্র ছেলে হওয়াতে প্রবাসী বাবা আব্দুর রউফ খুব ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ছেলে নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ঘন ঘন মূর্ছা যাচ্ছেন হায়াতের মা। এমনকি খাওয়া-দাওয়া পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছেন। ঘটনার দিন দুপুরে বড় বোন আয়েশা সিদ্দিকীর সঙ্গে শেষবারের মতো কথা হয় আবুল হায়াতের। এসময় তার বন্ধু মনিরুল আলমের মা ও বড় ভাইকে বিমানবন্দরে রিসিভ করতে যাবে এমনটি জানান তিনি। পরিবারের দাবি, আবুল হায়াত কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন। এমনকি তার নামে কোথাও কোনো অভিযোগ নেই। সে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলে দাবি করে তার পরিবার। বিভিন্ন জায়গায় অনেক খোঁজাখুজির পরেও হায়াতের সন্ধান পায়নি তার পরিবার।
নিখোঁজ মোশারফ হোসাইন মায়াজের বড় বোন কামরুন্নাহার জানান, মায়াজের বাবা মো. সাইদুল ইসলাম সাবেক ব্যবসায়ী। মা রোকেয়া বেগম গৃহিণী। চার বোন তিন ভাইয়ের মধ্যে মায়াজ সবার ছোট।

তাদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের বানারীপাড়া। বর্তমানে তারা পরিবার নিয়ে ডেমরার ডগাইর পশ্চিমপাড়া সারুলিয়ায় নিজ বাড়িতে থাকেন। মায়াজ ডগাইর দারুস সালাম সুন্নত ফাজিল মাদরাসার নবম শ্রেণির ছাত্র। মায়াজ পড়ালেখার পাশাপাশি ২ থেকে ৩টি টিউশনি করেন। ঘটনার দিন বিকালে টিউশনির কথা বলে বন্ধুর সঙ্গে বাসা থেকে বের হন তিনি। এরপর তার বাসায় ফিরতে দেরি দেখে রাত ১০টার দিকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন তার পরিবার। এসময় তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর থেকে যাত্রাবাড়ী থানাসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ করা হয়। ডিবি কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে সেখান থেকে কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি মায়াজের। স্থানীয় থানায় জিডি করতে গেলে জিডি নেয়া হয়নি বলে জানান মায়াজের বোন।

নিখোঁজ শফিউল্লাহ’র ছোট ভাই নাসরুল্লাহ বলেন, শফিউল্লার বাবার নাম মো. আব্দুল কুদ্দুস। তিনি পিরোজপুরের একটি মাদরাসার সহকারী অধ্যক্ষ। ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী শফিউল্লাহ। তাদের গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানার পশুরিয়ায়। তার মায়ের নাম মমতাজ বেগম। চার ভাইয়ের মধ্যে শফিউল্লাহ দ্বিতীয়। শফিউল্লাহ যাত্রাবাড়ীর মীর হাজারীবাগে একটি মেসে থেকে লেখাপড়া করে। সে কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি পরিবারের। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে কোনো একটা কাজে ছোট ভাই নাসরুল্লাহ মেসের বাইরে যায়। বাসায় ফিরে দেখেন তার ভাই বাসায় নেই। রুমের সবকিছু এলোমেলো। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও ভাইকে না পেয়ে পার্শ্ববর্তী এক বড় ভাইকে বিষয়টা জানান নাসরুল্লাহ। পরবর্তীকালে তিনি যাত্রাবাড়ী থানায় গিয়ে খোঁজখবর করেন। ডিবি কার্যালয়েও খোঁজ নেয়া হয়। এখন পর্যন্ত তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status