শেষের পাতা

বগুড়ায় মাদক বিক্রিতে সরব নারীরা

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:০৭ পূর্বাহ্ন

সারা দেশেই মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। গ্রেপ্তার, ক্রসফায়ার, মামলাও হয়েছে। ধ্বংস করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। তার পরেও থেমে নেই বগুড়ার মাদক  ব্যবসায়ীরা। তারাও রীতিমতো পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে কৌশলী হয়েছে। মাদকের মূল আস্তানাগুলো পরিবর্তন করেছে তারা। অচেনা জায়গা এবং পুলিশের সন্দেহের বাইরের স্পটগুলোকে তারা এখন কাজে লাগাচ্ছে। বিভিন্ন কৌশলের মধ্যে অন্যতম কৌশল হচ্ছে ব্যবসায় নারীদের ব্যবহার করছে।
বগুড়ায় ইতিমধ্যেই বেশি কিছু নারী মাদকব্যবসায়ী পুলিশের হাতে ধারাও পড়েছে। রোববার ভোরে শহরের বিভিন্ন অভিজাত অ্যাপার্টমেন্টে অভিযান চালিয়ে চার বোনসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিবি পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- নওগাঁ সদর থানার হারিছ আহম্মেদের মেয়ে লাবনী (২৮), মরিয়ম আক্তার নিপু (২৫), শিমু (২৩), মনিকা (২০) লাবনীর স্বামী নওগাঁ সদরের আনন্দ নগর এলাকার মৃত আবুল কাসেমের ছেলে লোকমান হোসেন (৪৫) এবং বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া হাজীপাড়ার মৃত জাহেদুর রহমানের ছেলে নাইমুল হাসান শান্ত (২৫)। তাদের নিকট থেকে ২১০০ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এর আগে মার্চের ৮ তারিখে বাধন আক্তার নামে এক নারী মাদক বিক্রেতাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। কয়েক দফা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছিল বগুড়া সদরের সেউজগারী এলাকার মাদক ব্যবসায়ী তাসলি বেগম। তাসলি এবং তার স্বামী আলম ওই এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী।
চলতি বছরের ৭ই এপ্রিল পুলিশ ২০০ পিছ ইয়াবাসহ যুব মহিলা লীগ নেত্রী শিল্পী বেগমকে (৩১) গ্রেপ্তার করেছিল জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।

সাম্প্রতি সময়ে আরো তিন নারী মাদক ব্যবসায়ীর লাশ পাওয়া গেছে শহরের বিভিন্ন জায়গায়। চলতি মাসের ১২ই সেপ্টেম্বর পুলিশের তালিকাভুক্ত নারী মাদক ব্যবসায়ী রিনা বেগমের (৩৫) মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
ওইদিন দুপুর ১টার দিকে বগুড়া শহরতলির মাটিডালী এলাকায় করতোয়া নদীর ব্রিজের নিচ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। বনানী-মাটিডালী দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়কে করতোয়া ব্রিজের নিচে কচুরিপানার মধ্যে মরদেহটি পড়েছিল। যদিও রিনার স্বামী মুক্তার হোসেন জানান, ১২ তারিখ রাত ১২টার দিকে পুলিশ পরিচয়ে সাদা পোশাকে একদল ব্যক্তি বাড়ি থেকে রিনাকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর সকালে থানা এবং ডিবি অফিসে খোঁজ নিতে গেলে পুলিশ গ্রেপ্তারের বিষয়টি অস্বীকার করে।

পুলিশ অবশ্য রিনাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেছে। বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম বদিউজ্জামান জানান, পুলিশের ভুয়া পরিচয়ে অন্য কেউ রিনাকে তুলে নিয়ে যেতে পারে।

এদিকে রোববার ভোর রাতে যে চার নারীকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের নিয়ে শহরজুড়ে চলছে নানা ধরনের গুঞ্জন। তারা চার জন নিজের বোন। পারিবারিকভাবেই তারা মাদক ব্যবসায়ী বলে জানা গেছে। পুলিশ তাদের শহরের বিভিন্ন ফ্লাটবাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ সূত্রে জানাগেছে, নওগাঁ সদরের বাসিন্দা চার বোন ও বড় বোনের স্বামী বগুড়া শহরের কয়েকটি অভিজাত আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ইয়াবা ব্যবসা করে আসছিল। গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পেরে রোববার ভোর ৬টার দিকে প্রথমে সূত্রাপুরের কমফোর্ট হাউজিংয়ে অভিযান চালায়। সেখান থেকে শিমু ও তার স্বামী নাইমুল ইসলাম শান্তকে গ্রেপ্তার করে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালায় মিশন হাসপাতালের পাশে এ্যাবকন দেওয়ান টাওয়ারে। সেখান থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মরিয়ম আক্তার নিপু ও তার ছোট বোন মনিকাকে। এরপর মফিজ পাগলার মোড়ে বিকর্ণ টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে লাবনী ও তার স্বামী লোকমান হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। চার বোনের কাছ থেকে পুলিশ মোট ২১০০ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের ওসি নূরে আলম সিদ্দিকী।

বগুড়ায় মাদক ব্যসায়ীদের কৌশল বদলে নারীদের ব্যবহার দিনদিন চরম আকার ধারণ করছে। সুন্দরী নারীদের এই ব্যবসায় কাজে লাগাচ্ছে চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা। যদিও তারা পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযানে পুলিশ লোক দেখানো কিছু ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করলেও মূল ব্যবসায়ীদের ধারেকাছেও যায়নি। তারা গোপনে ঠিকিই মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে। গত রমজানের ১ তারিখে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে তিনজন।

চলতি বছরের ১৫ই মে থেকে ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাদকবিরোধী অভিযানে ২৯৯২ বোতল ফেনসিডিল, ১৮৫ কেজি ৮৩০ গ্রাম গাজা, ৫১৭.৯ গ্রাম হেরোইন, ৩২ হাজার ৪১৪ পিস ইয়াবা, ২০৭ লিটার চোলাইমদ, ২৭৩ বোতল অ্যালকোহল, ৬০ লিটার স্পিরিট, ২৮২৫ অ্যাম্পল নেশা জাতীয় ইনজেকশন উদ্ধার করেছে পুলিশ।
বগুড়ায় মাদক ব্যবসায় নারীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধির পেছনে কিছু শক্তি কাজ করছে বলে সাধারণ মানুষ মনে করলে পুলিশ বলছে অন্য কথা।

এবিষয়ে বগুড়া জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশের সুপার (সদর সার্কেল) সনাতন চক্রবর্তী বলেন, ‘ নারী মাদক ব্যবসায়ীদের পেছনে বিশেষ কোনো শক্তি নেই। এরা বিচ্ছিন্নভাবে লোভ এবং লাভের বশবর্তী হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এ পেশায় নেমেছে। তিনি আরো বলেন, বগুড়ার পুলিশ শক্তভাবে এসব মাদক ব্যসায়ীদের দমন করতে কাজ করে যাচ্ছে’।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status