বিশ্বজমিন

ভারত-বাংলাদেশের বন্ধন কি পাকিস্তানকে নিঃসঙ্গ করতে পারবে?

এশিয়া মাকসুদ

১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, সোমবার, ২:৩২ পূর্বাহ্ন

২০১৮ সালের ১লা মার্চ রাশিয়া ও বাংলাদেশের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা বিষয়ক ত্রিপক্ষীয় একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত। বাংলাদেশে রাশিয়া যে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে সেখানে সরঞ্জাম সরবরাহ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে চায় নিউক্লিয়ার পাওয়ার কো-অপারেশন অব ইন্ডিয়া লিমিটেড (এনপিসিআইএল)। পর্যায়ক্রমে এ প্রকল্পের পারমাণবিক বিষয়ক বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের প্রশিক্ষণ দেবে ভারত।


ওই চুক্তিটি মস্কোতে স্বাক্ষর করেছেন রাশিয়ার বেসামরিক পারমাণবিক সংস্থা রোসাটমের উপ মহাপরিচালক নিকোলাই স্পাসকি, রাশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এসএম সাইফুল হক ও রাশিয়ায় ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণ। উপরন্তু রোসাটমের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের একটি বিদ্যুত কেন্দ্র চুক্তি ভিত্তিতে নির্মাণ করবে রোসাটম। এ ছাড়া তারা এর ডিজাইন, উৎপাদন ও সরঞ্জাম সরবরাহ, প্রতিস্থাপন, প্রি-কমিশনিং ও কমিশনিংয়ে সহযোগিতা করবে।

এতে ব্যতিক্রমি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে, যাতে ঘূর্ণিঝড়, হারিকেন, ভূমিকম্প ও বিমাণ বিধ্বস্ত হওয়ার মতো অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রভাবমুক্ত থাকবে। এভাবে এতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে।

এর আগে ভারত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করেছে ও পরিচালনা করেছে। তা করা হয়েছে রাশিয়ার সহায়তায়। বাংলাদেশে রাশিয়ার প্রকল্পে অংশগ্রহণ করেছে ভারত। কর্মকর্তারা বলেছেন, এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ ও তা প্রতিস্থাপন কাজে জড়িত থাকতে পারে ভারতীয় কোম্পানিগুলো। এমনকি তারা এ প্রকল্পের অতি গুরুত্বপূর্ণ নয় এমন ক্যাটেগরির মালামাল সরবরাহ দিতে পারে। ওই কর্মকর্তা বলেন, এটা উভয় দেশের জন্য ও শিল্পের জন্য একটি বিশেষ ইভেন্ট।
চুক্তি স্বাক্ষরের পর স্প্যাসকি বলেন, এ অঞ্চলের সহযোগিতামূলক এজেন্ডার ক্ষেত্রে এটা একটি নতুন ও অগ্রগামী প্রথম পদক্ষেপ। এ বিষয়ে আমাদের বিশ্বাস আছে। এটা হবে বাংলাদেশে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে মসৃণ বাণিজ্যিক সম্পর্ক। তারা বেসামরিক পারমাণবিক বিদ্যুতখাতে রাশিয়ার সঙ্গে তাদের কর্ম অভিজ্ঞতা শেয়ার করবে।

রাশিয়া, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা বিষয়ক এই ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতা হবে প্রথম ঘটনা, যেখানে বাংলাদেশে কোনো বেসামরিক বিদ্যুত বিষয়ক প্রকল্পে নয়াদিল্লি যুক্ত হবে। এটাই হবে পারমাণবিক ক্ষেত্রে মূলধারায় ভারতের প্রবেশ। একই সঙ্গে ভারতে পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণের জন্য রাশিয়ার কাছে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অধীনে প্রস্তাব অনুমোদন দিচ্ছে ভারত।

তুলনামূলকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বময় প্রভাব কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে রাশিয়া, ভারত ও চীনের মতো উদীয়মান শক্তিধর দেশগুলো বিশ্বময় ও আঞ্চলিক ক্ষেত্রে তাদের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে। পরিবর্তনশীল আন্তর্জাতিক বিশ্ব রাজনৈতিক পরিবেশে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও রাশিয়া ও চীনের মতো অন্য অংশীদারদের খুঁজছে পাকিস্তান। আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য পাকিস্তানের নীতিনির্ধারকদের অবশ্যই সুপথ অনুসরণ করতে হবে। তা করতে হবে রাশিয়া, চীন ও বাংলাদেশ ইত্যাদি দেশের সঙ্গে যৌথ ভেঞ্চারে কাজ করার মাধ্যমে, যাতে আঞ্চলিক রাজনীতিতে পাকিস্তানকে একঘরে করার ভারতীয় নীতিকে এড়ানো যায়।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রে দুটি ইউনিট আছে। এর প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট। এটি পদ্মা নদীর পাড়ে অবস্থিত। এটি হবে ভিভিইআর-১২০০ পারমাণবিক চুল্লিভিত্তিক। এটি ৩+ প্রজন্মের প্রযুক্তি, যা রাশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী পারমাণবিক চুল্লি।

পাকিস্তান একটি বিদ্যুত ঘাটতির দেশ। তাই বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতায় রাশিয়াকে আকৃষ্ট করতে পাকিস্তানের উচিত নীতি তৈরি করা। শীতল যুদ্ধের সময় থেকেই ভারতের প্রচলিত প্রতিরক্ষা বিষয়ক অংশীদার হলো রাশিয়া। ২০১৭ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ ঘোষণা করে ভারত। এর বাইরে ঢাকার জন্য প্রতিরক্ষা বিষয়ক হার্ডওয়ার বিক্রির জন্য দেয়া হয় ৫০ কোটি ডলার। এর উদ্দেশ্য, দুই দেশের মধ্যে রাজনীতিকে আরো গভীর করা ও তাদের মধ্যকার কৌশলগত সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করা।  

এ দুটি দেশের কারো সঙ্গেই অব্যাহত ও আস্থার সম্পর্ক নেই পাকিস্তানের। তাদের মধ্যে সম্পর্ক যেভাবে বাড়ছে তাতে একটি বিষয় ফুটে ওঠে। তাহলো, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে আঞ্চলিক রাজনীতি থেকে নিঃসঙ্গ করে ফেলছে পাকিস্তানকে। এর আগে বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক বিষয়ে পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইএইএ’র ৬১তম সাধারণ সম্মেলনে ভারতের আণবিক শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান শেখর বসু বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেছেন, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে আমাদের রাশিয়ান ও বাংলাদেশী অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা করছি। এটাই দেশের বাইরে ভারতের প্রথম আণবিক বিদ্যুত বিষয়ক কর্মকান্ড। এখন এই উদ্যোগটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরিত হয়েছে।

চলমান এসব উদ্যোগের ভিতরে এখন বাংলাদেশ ও ভারত মিলে এ অঞ্চলে পাকিস্তানকে সফলভাবে নিঃসঙ্গ করে দিতে পারে কিনা তা দেখাই হবে আগ্রহের বিষয়। রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে পাকিস্তানের কি এখন দৃষ্টি দেয়া উচিত?

(এশিয়া মাকসুদ ইসলামাবাদে কায়দে আজম ইউনিভার্সিটি থেকে ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্রাটেজিক স্টাডিজে এমফিল করেছেন। তিনি চায়না পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর, দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক স্ট্রাটেজি ও আঞ্চলিক ইস্যুতে লেখালেখি করেন। তার এই লেখাটি প্রকাশিত হয়েছে অনলাইন ইউরোশিয়া রিভিউয়ে)
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status