প্রথম পাতা

ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলের মতামত নিচ্ছে না ইসি

সিরাজুস সালেকিন

১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

ইভিএম বিতর্ক কাটাতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আর কোনো সংলাপ করবে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামীতে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) যে প্রদর্শনী মেলার আয়োজন করা হচ্ছে সেখানেও কোনো রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না। ফলে ইভিএম নিয়ে অনেকটা অন্ধকারেই থেকে যাচ্ছে ইসি’র মূল অংশীজনরা। এর আগে সিইসি কেএম নুরুল হুদা ইভিএম মেলায় রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানোর কথা বলেছিলেন।

আগামী ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে ঢাকায় এই মেলা অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে। মেলা সফল হলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ৩০০ আসনে অন্তত একটি করে কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে ইসি’র। ইসি সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনাকে সামনে রেখে প্রদর্শনী মেলার আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ মেলার আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটির। ইতিমধ্যে মেলা উপলক্ষে কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও সমন্বয় কমিটি গঠন করেছে ইসি।

দু’দিনব্যাপী ইভিএম মেলায় লোকসমাগম ঘটাতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে ইসি’র ওই কমিটি। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক (ডিজি)কে এ মেলার আয়োজনের সার্বিক দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। ইভিএমের এই প্রদর্শনীতে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের। কিন্তু ইসি’র মূল অংশীজন রাজনৈতিক দলকে সেখানে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে না।

গত ৩০শে আগস্ট নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা বলেন, আগামী নির্বাচনে কতটি আসনে ইভিএম ব্যবহার হবে কমিশন সে সিদ্ধান্ত নেয়নি। আইন যদি পাস করে পার্লামেন্ট, তারপর আমরা প্রদর্শনী করবো। সেখানে স্টেকহোল্ডারদের সম্মতি যদি থাকে তাহলে কমিশন সেটা নিয়ে বসবে। পরিবেশ পরিস্থিতি যদি অনুকূলে থাকে তাহলে ইভিএম ব্যবহার হবে। এর আগে নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আর কোনো সংলাপের সম্ভাবনা নেই।

ইভিএম মেলা বাস্তবায়নের জন্য গত ২৮শে আগস্ট সভার আয়োজন করা হয়। সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইভিএম প্রদর্শনী মেলা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, টেলিভিশন, ওয়েবসাইট এবং ফেসবুকের মাধ্যমে মেলা সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে। এজন্য ইসি’র ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশন পেইজ খোলা হবে।

প্রথমদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর রাত নয়টা পর্যন্ত মেলা চলবে। দ্বিতীয় দিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সভায় বড় বড় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়কে পত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের মেলায় অংশ নেয়ার জন্য আহ্বান জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরীর থানা নির্বাচন অফিসসমূহ সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ড হতে ১০-১৫ জনের বিভিন্ন বয়সী ভোটারদের একটি করে গ্রুপকে মেলায় আনার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। বিষয়টি সম্পর্কে ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার থানা নির্বাচন অফিসারগণ তথ্য দেবে এবং ঢাকা জেলার নির্বাচন অফিসার তা নিশ্চিত করবেন। মেলার খরচ ডাটা শেয়ারিং চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানসমূহের কাছ থেকে গ্রহণ করা হবে।

ওই সভায় নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, আগামীতে সকল উপজেলা, সিটি করপোরেশন এবং সংসদের ৩০০ আসনের প্রতিটিতে অন্তত একটি করে কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করলে আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। তাছাড়াও আগামী অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিতব্য উন্নয়ন মেলায় নির্বাচন অফিসসমূহের স্টলসমূহে যাতে ইভিএম প্রদর্শন করতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এনআইডি’র ডিজিকে অনুরোধ জানান সচিব।

সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে মেলায় আমন্ত্রণের বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। মেলা সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সেখানে চাইলে রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিতে পারবে। তবে সেখানে কোনো পরামর্শ গ্রহণ বা আপত্তি জানানোর সুযোগ থাকবে না।

উল্লেখ্য, আগামী ৩০শে অক্টোবরের পর যেকোনো দিন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। ২০১৯ সালের ২৮শে জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছে নির্বাচন কমিশন। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিপক্ষে। এমনকি প্রধানমন্ত্রীও ইভিএম ব্যবহারে তাড়াহুড়ো না করার পরামর্শ দিয়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে পাঁচ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্পের অধীনে দেড় লাখ ইভিএম কেনার পরিকল্পনা করছে ইসি। এজন্য জাতীয় নির্বাচনের চার মাসেরও কম সময় সামনে রেখে অনেকটা তড়িঘড়ি করেই কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়। ইভিএম যুক্ত করে আরপিও সংশোধনে উঠেপড়ে লাগে ইসি। ৩০শে আগস্ট কমিশন সভায় আরপিও সংশোধনের বিরোধিতা করে নোট অব ডিসেন্ট দেন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। কমিশন সভাও বর্জন করেন তিনি। পরবর্তীতে বাকি কমিশনারদের সম্মতির ভিত্তিতে আরপিও’র খসড়া ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status