শেষের পাতা

বিকল্প ছাড়া লেগুনা বন্ধে দুর্ভোগ

স্টাফ রিপোর্টার

৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ১০:২৫ পূর্বাহ্ন

রাজধানীতে হঠাৎ করে লেগুনা বন্ধ করার ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন এলাকার যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও নির্দিষ্ট গন্তব্যে যেতে পারছেন না তারা। বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা চালু না করে লেগুনা বন্ধের সিদ্ধান্তে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ।

যেসব সড়কে গণপরিবহন চলে না সেসব সড়কে কেন লেগুনা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সেই জিজ্ঞাসা ভুক্তভোগীদের। লেগুনা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে অনেকে। তারা বলছেন, এসব অবৈধ যানবাহন বন্ধ করা ঠিকই হয়েছে। একদিকে এদের বৈধতা নেই, তার পরেও এসব গাড়ির ড্রাইভারদের বেশির ভাগ অপ্রাপ্তবয়স্ক। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর অভ্যন্তরের প্রধান সড়কে লেগুনা চলেনি। বিভিন্ন পয়েন্টে লেগুনা যাত্রীদের দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে।

তবে রাজধানী পার্শ্ববর্তী এলাকার বিভিন্ন রুটে লেগুনা চলছে। রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর। এখান থেকে স্বল্প ও দীর্ঘ দূরত্বের একাধিক রুটে লেগুনা চলাচল করে। এই এলাকার যেসব রুটে বাস চলে সেসব রুটে যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়নি। ভোগান্তিতে পড়েছেন গণপরিবহনবিহীন রুটের লেগুনা যাত্রীরা। রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর থেকে লেগুনা চলে মহাখালী, মোহাম্মদপুর, ঝিগাতলা, রূপনগর, গাবতলী, আমিনবাজার, সাভার, দিয়াবাড়ী রুটে। এরমধ্যে শুধু বেড়িবাঁধ হয়ে বিরুলিয়া-সাভার রুটের লেগুনা চলছে। অন্যসব রুটের লেগুনা বন্ধ রয়েছে।

মিরপুর-১ নম্বর থেকে ঝিগাতলা রুটে নিয়মিত চলাচল করেন মো. আল-আমিন। তিনি বলেন, আমার ইউনিভার্সিটি ধানমন্ডিতে। ওই রুটে কোনো বাস চলে না। নিয়মিত লেগুনায় আসা যাওয়া করি। গতকাল থেকে খুব সমস্যায় পড়তে হয়েছে। এখান থেকে মোহাম্মদপুর বাসে যাই, তারপরে আরেক বাসে যাই ধানমন্ডিতে। তিনি বলেন, সরকার আগে লেগুনার বিকল্প পরিবহন এ রুটে দিয়ে লেগুনা বন্ধ করে দিক। তার আগে যেন আমাদের কথা চিন্তা করে লেগুনা চলতে দেয়।

কামরুন্নাহার নামের এক সরকারি চাকরিজীবী বলেন, আমি মিরপুর-১ নম্বর থেকে প্রতিদিন মহাখালী রুটের লেগুনায় যাতায়াত করতাম। লেগুনা থেকে পাসপোর্ট অফিসের পাশে নামতাম। কিন্তু গত দুদিন খুব কষ্ট হচ্ছে। এই রুটে কোনো বাস নেই। আগে বাস চালু হোক, তারপরে যেন লেগুনা বন্ধ করে।
তবে ভিন্ন কথা বলছেন আসগর নামের এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার জন্য এই লেগুনা দায়ী। ওদের কোনো লাইসেন্স নেই। ছোট ছোট বাচ্চারা স্টিয়ারিংয়ে বসে। এগুলো বন্ধ করে সরকার ভালো করেছে। তবে এখন এসব রুটে পর্যাপ্ত গণপরিবহন দিতে হবে।


মিরপুর মাজার রোড থেকে বিরুলিয়া-সাভার রুটের লেগুনা গতকালও চলছে। এ রুটের লেগুনাচালক মহসিন বলেন, আমাদের লাইনম্যান বলছেন আমাদের লেগুনা বন্ধ না করতে। আমাদের রুটে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। এজন্য লেগুনা বন্ধ করিনি। রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের মতো অন্যসব এলাকার অধিকাংশ রুটেই লেগুনা বন্ধ রয়েছে। ফার্মগেট থেকে ধানমন্ডি, ৬০ ফিট, মোহাম্মদপুর সড়কে লেগুনা চলছে না। এছাড়া মোহাম্মদপুর-গুলশান, ফার্মগেট-নিউ মার্কেট, মহাখালী-মিরপুর-২ নম্বর, মগবাজার-মহাখালী এসব রুটের লেগুনা বন্ধ ছিল। তবে নিউ মার্কেট থেকে গুলিস্তান, চকবাজার, কামরাঙ্গীরচর রুটের লেগুনা মাঝেমধ্যে চলাচল করছে। একইভাবে গাবতলী থেকে মিরপুর-১৪ নম্বর রুটে চলাচলকারী লেগুনা চলতে দেখা গেছে। চালকদের দাবি, এগুলো হিউম্যান হলার নয়, মিনিবাস। চালকের এক সহকারী বলেন, আমরা ম্যানেজ করে চলছি। প্রথম পুলিশ বাধা দিয়েছিল পরে লাইনম্যান ঠিক করে ফেলছেন।

বৃহস্পতিবার সকালে ধানমন্ডি ১৫ নম্বর বাসস্টান্ডে ফার্মগেট যাওয়ার উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে ছিলেন সোহরাব হোসেন। মিনিট বিশেক দাঁড়িয়ে থাকার পরও ফার্মগেটগামী কোনো লেগুনা দেখতে না পেয়ে হাঁটা শুরু করে জিগাতলার দিকে। সেখানে গিয়েও দেখেন একই পরিস্থিতি। ফার্মগেটগামী ঢাকা ইন্দিরা পরিবহনের কোনো লেগুনায় পাননি তিনি। জিগাতলা থেকে মিরপুর-১ নম্বরগামী লেগুনাও ছাড়েনি। কিন্তু আটি বাজার থেকে ছেড়ে আসা নিউ মার্কেটগামী লেগুনা চলাচল করছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে সোহরাব বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে লেগুনা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ভালো কথা। কিন্তু সব রুটে লেগুনা বন্ধ হয়নি কেন? সোহরাবের মতোই ফার্মগেটে যাওয়ার উদ্দেশ্যে লেগুনা খুঁজছিলেন আরও অনেকে।

মিরপুর লিংক কোম্পানির একজন লেগুনাচালক বলেন, পুলিশে ঝামেলা করছে। কিন্তু কী করবো বলেন। আমাদেরও তো পরিবার আছে। তাদের পেটের ক্ষুধা মেটাতেই, অলিগলি দিয়ে রিস্ক নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। তবে দুই-একদিনের বেশি আর লেগুনা চালানো সম্ভব হবে না বলেও জানান তিনি।  নিউ মার্কেট নীলক্ষেত থেকে প্রতিদিন ফার্মগেটের মধ্যে যাতায়াত করা লেগুনা বন্ধ রয়েছে। তাই এ সড়কে যাতায়াতকারীদের রিকশায় গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। এতে বাড়তি টাকা খরচের পাশাপাশি সময় খরচ হচ্ছে কয়েক গুণ। তবে একই স্থান থেকে ছেড়ে যাওয়া নীলক্ষেত থেকে বিজিবি গেট, হাজারীবাগ, টালি অফিসের লেগুনা ঠিকঠাক চলাচল করছে। এদিকে নীলক্ষেত থেকে বাবুবাজার, চকবাজার, গুলিস্থান, চানখাঁরপুলে লেগুনা চলাচল করেছে। 

নীলক্ষেত-ফার্মগেট রুটে চলাচলকারী বেসরকাররি চাকরিজীবী লিজা আক্তার বলেন, দুই বছর যাবৎ চাকরির জন্য নিয়মিতই নীলক্ষেত থেকে লেগুনায় চেপে ফার্মগেটে যাওয়া-আসা করতে হয় তার। এত কষ্টের পাশাপাশি সময়ও বাঁচে তার। কিন্তু লেগুনা বন্ধ হওয়াই বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছেন তিনি। লিজা বলেন, নিউ মার্কেট, গ্রিন রোড পার হলেই ফার্মগেট। রাস্তা বেশি না। তাই লেগুনাই যাতায়াত করতাম আমি। লেগুনা বন্ধ করে দিয়েছে, ভালো কথা। কিন্তু এর বিকল্প কোনো ব্যবস্থা তারা করেনি।

মঙ্গলবার মাসব্যাপী ট্রাফিক সচেতনতা কার্যক্রম উদ্বোধন করে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ঘোষণা দেন রাজধানীর প্রধান সড়কে কোনো লেগুনা, হিউম্যান হলার চলতে পারবে না। এর পরপরই বন্ধ করে দেয়া হয় এসব অবৈধ যানবাহন। রাজধানীর প্রধান সড়কে এ ধরনের যানবাহন চলাচলের অনুমতিও নেই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status