শেষের পাতা

সড়কে সেই এলোমেলো চিত্রই

হাফিজ মুহাম্মদ

৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, বুধবার, ৯:৪৩ পূর্বাহ্ন

নৈরাজ্য। বিশৃঙ্খলা। সড়কজুড়ে স্টপেজ। রেসিং। একের পর এক দুর্ঘটনা। মৃত্যুর মিছিল। কোনো কিছুই থেমে নেই। রাজধানীর সড়কে গত কয়েকদিন নিয়ম-শৃঙ্খলা কিছুটা ফিরতে শুরু করেছিল। তবে সম্পূর্ণ শৃঙ্খলা ফিরতে না ফিরতেই আবারও সড়কে পুরনো চেহারা। যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা। বাসের দরজা বন্ধ না করা। পাল্লা দেয়া। সবই চলছে। এর প্রেক্ষিতে রাজধানীতে এখন দেখা দিয়েছে গণপরিবহন সংকট। অধিকাংশ বাসের বৈধতা না থাকায় সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলন গড়ে ওঠে। পরে হঠাৎ করেই শুরু হয় ট্রাফিক সপ্তাহ।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিরাপদ সড়কের জন্য দেয়া হয় বেশ কিছু নির্দেশনা। বাস্তবায়নে নির্দিষ্ট তারিখ বেঁধে দেয়া হয়। এতকিছুর পরেও সড়কে ফিরেনি শৃঙ্খলা। আবার নিরাপদ সড়কের জন্য শুধু গণপরিবহনের ক্ষেত্রে নির্দেশনার কথা বলা হচ্ছে। অন্য যেসব ছোট-বড় পরিবহন এবং নন-ইঞ্জিনচালিত বাহন রয়েছে তাদের জন্য নেই কোনো নির্দেশনা। গত মাসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২০১৮-১৯ বাজেটে ৩০টি বাস স্টপেজ নির্মাণের কথা উল্লেখ করে। কিন্তু তার কোনোটাই এখনো চোখে পড়ছে না। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের যে কয়টি নির্দিষ্ট বাস স্টপেজ রয়েছে সেখানেও থামছে না যানবাহন। মূল সড়কের ওপর থেকেই যাত্রী উঠানামা করছে। তবে অন্যান্য পরিবহন কোথায় দাঁড়াবে তার কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও দেখা যাচ্ছে না। গতকাল সরজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায় এসব বিশৃঙ্খলার চিত্র। তবে কিছু কিছু স্থানে নির্দিষ্ট স্টপেজের চিহ্ন লাগাতে শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। কিছু বাস দরজা বন্ধ করেই চলছে। নির্দিষ্ট স্টপেজ ছাড়া যাত্রী তুলছে না। কিন্তু তার সংখ্যা অনেক কম। রাজধানীর মিরপুর এক নম্বর গোলচত্বর। এখানে সড়কের উভয় পাশে রয়েছে নির্দিষ্ট বাস স্টপেজ। তবে তা সড়কের কতটুক অংশ জুড়ে এর কোনো চিহ্ন নেই।

যে যেখানে পারছে সেখানেই বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী তুলছে। অনেক যানবাহন আবার সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করাচ্ছে। মিরপুর এক নম্বর হয়ে দারুসসালাম রোডের কোনো স্ট্যান্ডে নির্দিষ্ট স্টপেজ না থাকায় যে যেখানে পারছে সে সেভাবে যাত্রী উঠানামা করাচ্ছে। কিন্তু টেকনিক্যাল মোড়ের চিত্রটা একটু ভিন্ন। এখানে বাস স্টপেজের একটি সাইনবোর্ড রয়েছে। তবে তা মানছে না কেউই। টেকনিক্যাল মোড় থেকে তালুকদার পরিবহন নামের একটি বাসে যাত্রী হয়ে সড়কের অবস্থা দেখা হয়। বাসটি রাজধানীর চিড়িয়াখানা-যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচল করে। টেকনিক্যাল মোড় থেকে চেকার যাত্রী সংখ্যা লিখে ছেড়ে দেয়। এরপর বাসটির দরজা বন্ধ করে দেয়ার কথা থাকলেও চালক এবং তার সহকারী বন্ধ করেননি। এ ছাড়া কল্যাণপুর, শ্যামলীতে এসে সড়কের মাঝখান থেকেই যাত্রী তুলে শিশুমেলা মোড়ে এসে সড়কে কিছুটা যানঝট লাগে। এখানে বাসটি চলন্ত অবস্থায় চার পাঁচজন নারী যাত্রী তোলে। এভাবে প্রায় প্রতি স্ট্যান্ড এবং মোড় থেকে যাত্রী উঠানামা করায়।

তবে এ বাসটি ফার্মগেট এসে নির্দিষ্ট স্টপেজের ভিতরে থামে। বাসটির চালকের সহকারী জাকিরের কাছে জানতে চাওয়া হয় কেন বাসটি সড়কের মাঝখান থেকে লোক তুলছে। জাকির বলেন, দেখেন দুই বাসের মাঝখান থেকে তারা এসে উঠছেন। আমি কি করবো। দরজা কেন বন্ধ করা হয়নি জানতে চাইলে বলেন, যে কয়টি সিট খালি রয়েছে সে কয়জন লোক তুলছি। দরজা বন্ধ করার নির্দেশনা থাকলেও কেন বন্ধ করছে না এটার উত্তরে থমকে যান তিনি। পরবর্তীতে ফার্মগেট বাস স্টপেজে অনুসরণ করা হয় গণপরিবহনের বর্তমান অবস্থা। নামে মাত্র কিছু বাস স্টপেজের ভিতরে ঢুকে। বাকিগুলো মূল সড়ক থামিয়ে যাত্রী উঠানামা করায়। এছাড়াও টেক্সি, সিএনজি, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য পরিবহনই থামছে মূল সড়কে। একই অবস্থা সড়কের বিপরীত পাশে আনন্দ সিনেমা হলের পাশের স্টপেজেও। এখানে হাতেগোনা কয়েকটি বাস নির্দিষ্ট স্টপেজে প্রবেশ করছে। বাকিগুলো মূল সড়কেই থামছে। এখানে কিছুদূরে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকলেও তারা যেন দর্শক। এরপরে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ের কাওরানবাজার অংশে সড়কের পূর্ব পাশে নির্দিষ্ট স্টপেজ থাকলেও সেখানে বাস ঢুকছে না।

যাত্রী উঠানামা করছে মূল সড়ক থেকেই। অন্যদিকে এ সড়কের পশ্চিম পাশে ফুটপাথের ওপরেই প্রাইভেটকার, ভ্যানগাড়ি পার্কিং করে রাখতে দেখা যায়। ফুটপাথ বন্ধ করে গাড়ি পার্কিং করে রাখছে কেন জানতে চাইলে এক ড্রাইভার বলেন, সড়কে গাড়ি রাখলেই পুলিশ মামলা দেয়, তাই ফুটপাথে রাখছি। এরপরে তারা গাড়ি নিয়ে সটকে পড়েন।

নগরীর সড়কে পরিবহন বিশৃঙ্খলা দেখা গেছে সর্বত্র। তবে কয়েকটি স্থানে সড়ক বিভাজক চিহ্ন, নির্দিষ্ট স্টপেজ চিহ্ন লাগাতে শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। ফুটপাথ এবং ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে নগরবাসীকে উদ্বুদ্ধ করতে দেখা যায়। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে জরিমানা করে তাদের সচেতন করা হচ্ছে। ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া কোনো গাড়িই তারা চলতে দিচ্ছে না। টার্গেট সিস্টেম বাস বন্ধ করতে তারা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনোভাবেই টার্গেট সিস্টেম চলতে দেয়া হবে না। বৈধ কাগজপত্র না থাকায় এবং টার্গেট সিস্টেমমের কারণে ইতিমধ্যে পাঁচটি পরিবহন তারা বন্ধ করে দিয়েছেন। ঢাকা পরিবহন সমিতির পক্ষ থেকে আরো জানান, তারা সরকারের কাছে পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরাতে কয়েকটি দাবি তুলে ধরছেন। এ ছাড়াও দুই সিটি করপোরেশনের কাছে কাউন্টার চালু করার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। এজন্য নির্দিষ্ট স্টপেজ নির্ধারণ করতেও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

মালিক সংগঠন থেকে আরো বলা হয়, সাধারণ মানুষের সচেতনতা এবং নিজেদের নিরাপত্তার জন্য যত্রতত্র বাসে না উঠলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র মো. জামাল মোস্তাফা বলেন, নগরীর শৃঙ্খলা ফিরাতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। উত্তর সিটির যেসব স্থানে বর্তমানে স্টপেজ রয়েছে সেগুলো আধুনিকায়ন করা হবে। আর বাকি স্থানগুলো নির্ধারণ করে খুব শিগগিরই আধুনিক স্টপেজ করা হবে। দুই সিটি করপোরেশন মিলে দ্রুত একটি সমন্বয় সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status