বিনোদন

মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

মহানায়কের চলে যাওয়ার এক বছর

কামরুজ্জামান মিলু

২১ আগস্ট ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন

গেল বছরের এই দিনটি ছিল চলচ্চিত্র জগতের জন্য কালো একটি অধ্যায়। এই দিনে আমরা চলচ্চিত্রে দীর্ঘ সময় রাজত্ব করা নায়করাজ রাজ্জাককে হারিয়েছি। দেখতে দেখতে তার চলে যাওয়ার একটি বছর কেটে গেল। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের হিরো বলা হতো তাকে। চিত্রালীর সম্পাদক প্রয়াত আহমদ জামান চৌধুরী নায়ক রাজ্জাককে ‘নায়করাজ’ উপাধি দিয়েছিলেন। রাজ্জাকের সঙ্গে তার বেশ অন্তরঙ্গ সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সে কারণে জামান সাহেব তাকে এ উপাধি দেননি। পূর্ববাংলা তথা বাংলাদেশের অভিনেতা হিসেবে রাজ্জাকের সাফল্য ছিল ঈর্ষণীয়। তিনি অনেক ধরনের চরিত্রে প্রতিনিয়ত সাবলীল অভিনয় করতে পারতেন। শুধু রোমান্টিক নায়ক নয়, অ্যাকশন ও জীবনের গল্প পাওয়া যায় এমন প্রায় সব বাঙালি চরিত্রের সঙ্গে হুবহু মিলিয়ে তাকে পাওয়া গেছে। বাংলার প্রচলিত লোককাহিনী, মনসামঙ্গল কাব্যের বেহুলা-লখিন্দরের উপাখ্যান অবলম্বনে ১৯৬৬ সালে মুক্তি পায় জহির রায়হান পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘বেহুলা’। এ ছবিতে অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন আবদুর রাজ্জাক। এ ছবি দিয়েই ঢাকাই চলচ্চিত্রে দীর্ঘ অভিনয় জীবনের যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। এরপর অসংখ্য হিট চলচ্চিত্রে আমরা তাকে নায়ক হিসেবে পেয়েছিলাম। ১৯৪২ সালের ২৩শে জানুয়ারি কলকাতায় তার জন্ম। ১৯৬৪ সালে কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার কারণে সপরিবার ঢাকায় চলে আসেন তিনি। এখানে এসে টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের একটি নাটকে অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করেন। সে সময় তার অভিনয় জীবনে সবচেয়ে বড় সুযোগটি দেন পরিচালক জহির রায়হান। ‘বেহুলা’ ছবির নায়কের চরিত্রে তিনি অভিনয় করান রাজ্জাককে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি এই মহানায়ককে। কয়েক দশকের অভিনয় জীবনে তিনি ‘জীবন থেকে নেয়া’, ‘অবুঝ মন’, ‘রংবাজ’, ‘আলোর মিছিল’, ‘অশিক্ষিত’, ‘অভিযান’, ‘মৌচোর’, ‘পাগলা রাজা’সহ প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এছাড়াও পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র। ঢালিউডে নায়ক হিসেবে রাজ্জাকের প্রথম ছবি জহির রায়হানের ‘বেহুলা’ (১৯৬৬)। ‘বেহুলা’য় লখিন্দরের ভূমিকায় অভিনয়ের সুযোগ পান তিনি। আর তার প্রথম নায়িকা ছিলেন সুচন্দা। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর ঢাকায় ভারতীয় ছবি আসা বন্ধ হয়ে যায়। বাংলা সিনেমার এখানকার দর্শক সেদিন উত্তম-সুচিত্রা জুটির পর রাজ্জাক-সুচন্দা জুটিকেই সাদরে নিয়েছিল। সামাজিক-পারিবারিক ছবি বা সে সময়ের লোককথার ছবিতে এ জুটি সমাদৃত হন। ষাট দশকের সেই রোমান্টিক নায়িকা সুচন্দার সঙ্গে রাজ্জাকের দর্শকনন্দিত সিনেমাগুলো হচ্ছে আনোয়ারা (১৯৬৭), দুই ভাই (১৯৬৮), সুয়োরানী দুয়োরানী (১৯৬৮), কুচবরণ কন্যা (১৯৬৮), মনের মতো বউ (১৯৬৯), সখিনা (১৯৬৯), জুলেখা (১৯৬৮), যোগ বিয়োগ (১৯৭০), জীবন থেকে নেয়া (১৯৭০), যে আগুনে পুড়ি (১৯৭০), সংসার (১৯৬৮), প্রতিশোধ (১৯৭২), জীবন সংগীত (১৯৭২) এবং অশ্রু দিয়ে লেখা (১৯৭২)। সুদর্শন চেহারার অধিকারী ছিলেন এই নায়ক। তিনি সুচন্দার পর শবনম, কবরী, ববিতা, শাবানাসহ তখনকার প্রায় সব অভিনেত্রীকে নিয়ে একের পর এক ব্যবসা সফল চলচ্চিত্র উপহার দেন ঢালিউডকে। একটা সময় চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বাংলা সিনেমায় আবির্ভাব ঘটে রাজ্জাক-কবরী জুটির। একের পর এক ছবিতে অভিনয় করেছেন তারা। ‘আবির্ভাব’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘ময়নামতি’, ‘ক খ গ ঘ ঙ’, ‘ঢেউ এর পরে ঢেউ’ এবং স্বাধীনতার পর ‘রংবাজ, ‘বেঈমান’সহ বিভিন্ন সফল ছবি উপহার দেন এই জুটি। রাজ্জাক সবচেয়ে বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন শাবানার বিপরীতে। ১৯৭০ সালে ‘মধুমিলন’ ছবি দিয়ে রুপালি পর্দায় জুটি বাঁধেন তারা। তারপর ‘অবুঝ মন’, ‘সাধু শয়তান’, ‘মাটির ঘর’, ‘দুই পয়সার আলতা’সহ অনেক সিনেমায় তারা অভিনয় করেছেন। রাজ্জাক-ববিতা অভিনীত ‘অনন্ত প্রেম’ ছবিটি ছিল সুপারহিট। এ ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭৭ সালে। সেই সময়ের তুলনায় ছবিটি ছিল দারুণ সাহসী। ছবির শেষ দৃশ্যে নায়ক নায়িকার চুম্বনের দৃশ্য ছিল যা সেই সময়ে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। জহির রায়হান পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ পূর্ববর্তী বিপ্লবী সিনেমা ‘জীবন থেকে নেয়া’য় রাজ্জাক অভিনীত ‘ফারুক’ চরিত্রটি সব সময়ই অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এদিকে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে দীর্ঘদিনের কর্মস্থল এফডিসিতে তাকে ঘিরে আজ কোনো আয়োজন থাকছে কি-না জানতে চাইলে পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, আমরা এ বিষয়ক একটি মিটিং পরিচালক সমিতির সদস্যদের নিয়ে করেছি। তবে ঈদের সময় সকলে দেশের বাড়ি চলে যাচ্ছে তাই আমরা তাকে নিয়ে অনুষ্ঠানটা ঈদের সাতদিন পর করার পরিকল্পনা করেছি। আমাদের পরিচালক সমিতির পরবর্তী সভায় এ বিষয়ে আলোচনা করে রাজ্জাক সাহেবের স্মরণে অনুষ্ঠানের কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। প্রসঙ্গত শাইখ সিরাজ নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’ আজ প্রদর্শন হবে বসুন্ধরা স্টার সিনেপ্লেক্সে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status