এক্সক্লুসিভ

প্রধানমন্ত্রীর গাড়িবহর নিলামে তুলছেন ইমরান খান

মানবজমিন ডেস্ক

২১ আগস্ট ২০১৮, মঙ্গলবার, ৭:২৪ পূর্বাহ্ন

সরকারি খরচ কমানোর লক্ষ্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর জন্য বরাদ্দকৃত গাড়িবহরের বেশির ভাগ পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ৪
গাড়ি নিলামে বিক্রি করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি নিজের দাপ্তরিক কাজে ব্যবহারের জন্য ২টি গাড়ি রেখে বাকিগুলো বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের কর্মকর্তার সংখ্যাও কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন। রোববার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতির উদ্দেশে দেয়া প্রথম ভাষণে এ ঘোষণা দেন ইমরান খান। ওদিকে তার ১৬ সদস্যের শক্তিশালী মন্ত্রিপরিষদ শপথ গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া শপথ নিয়েছেন ৫ জন উপদেষ্টা। সোমবার সকালে রাজধানী ইসলামাবাদে প্রেসিডেন্টের বাসভবনে এক অনুষ্ঠানে তাদের শপথ পড়ানো হয়। তাদের শপথবাক্য পাঠ করান প্রেসিডেন্ট মামনুন হোসেন। এ সময় নতুন শপথ নেয়া প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান তার পাশে ছিলেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা ও ডন। আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সরকারের ব্যয় সংকোচন ও দুর্নীতি প্রতিরোধের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর রোববার তিনি প্রথমবারের মতো জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। টেলিভিশনে প্রচারিত ওই ভাষণে তিনি সরকারি ব্যয়ের ব্যাপক সংকোচন ও দুর্নীতি দমনের প্রতিশ্রুতি দেন। বলেন, ক্রমবর্ধমান রাজস্ব ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তিনি সরকারি ব্যয় ব্যাপক হারে কমিয়ে আনবেন। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি কাটিয়ে ওঠার জন্য পাকিস্তানে বসবাসকারী লাখ লাখ বিদেশিকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে আমরা যে অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছি, তা পাকিস্তানের ইতিহাসে পূর্বে কখনো হয়নি। আমরা অর্থহীন ঋণগ্রস্ত জাতি। আমাদের সন্তান, দরিদ্র জনগণ ও কৃষকদের জন্য ব্যয় করার মতো কোনো অর্থ নেই। এমনকি আমরা মানুষদের সুপেয় পানিও দিতে পারি না। ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে ইমরান খান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের জন্য নির্ধারিত যে ৮০টি গাড়ির বহর রয়েছে, তা কমিয়ে আনার ঘোষণা দেন। তিনি নিজের জন্য মাত্র দুইটি গাড়ি রেখে বাকিগুলো নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনে কর্মরত ৫২৪ জন কর্মকর্তার বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি সরকারি কর্মকর্তা ও নেতাদের জন্য অনাড়ম্বর জীবনযাপনের একটি উদাহরণ রেখে যেতে চান। রোববার তিনি প্রায় ১ ঘণ্টা বক্তৃতা করেন। এতে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও সরকারি চাকরিতে ব্যাপক সংস্কারের ঘোষণা দেন। একই সঙ্গে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতকেও ঢেলে সাজানোর অঙ্গীকার করেন তিনি। ৭ম শতাব্দীতে মহানবী মুহাম্মদ (সা:) যে আদর্শের আলোকে মদীনা রাষ্ট্র গঠন করেছিলেন, সে অনুযায়ী পাকিস্তানকে একটি ‘ইসলামী কল্যাণ রাষ্ট্র’ গড়ে তোলার অঙ্গীকার করেন ইমরান খান।
ওদিকে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় নতুন মন্ত্রিসভার যাত্রা। এর আগে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করা হয়। জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর নতুন মন্ত্রীরা উঠে দাঁড়ান শপথ নেয়ার জন্য। পাকিস্তানে নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হচ্ছেন পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ দলের ভাইস চেয়ারম্যান মাখদুম শাহ মেহমুদ কোরেশি। এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত পিপিপি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় তিনি এ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময় প্রেসিডেন্ট ছিলেন আসিফ আলী জারদারি এবং প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইউসুফ রাজা গিলানি। মন্ত্রিপরিষদের রদবদলকে কেন্দ্র করে দলের নেতৃত্বের সঙ্গে দ্বন্দ্বে তিনি পদত্যাগ করেন। জেনারেল জিয়াউল হকের সামরিক শাসনের সময় পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন পিএমএলএনের নেতা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। ওই সময় ওই রাজ্যের প্রাদেশিক অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন কোরেশি। নতুন মন্ত্রিসভায় অর্থ ও রাজস্ব বিষয়ক মন্ত্রী করা হয়েছে আসাদ উমরকে। তথ্য ও সম্প্রচার বিষয়ক মন্ত্রী বানানো হয়েছে পিটিআইয়ের তথ্য বিষয়ক সচিব ফাওয়াদ চৌধুরীকে। তিনি এক সময় সাবেক স্বৈরাচার পারভেজ মোশাররফের অল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (এপিএমএল)-এর মুখপাত্র ছিলেন। পেট্রোলিয়াম বিষয়ক মন্ত্রী বানানো হয়েছে গুলাম সারওয়ার খানকে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের প্রথম দুটি সরকারে তিনি এই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব সামলেছেন। মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রণালয় দেয়া হয়েছে ড. শিরিন মাজারিকে। খাইবার পখতুনখাওয়া রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী পারভেজ খাত্তাককে বানানো হয়েছে প্রতিরক্ষামন্ত্রী। কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও পেশাগত প্রশিক্ষণ বিষয়ক মন্ত্রী বানানো হয়েছে পিটিআইয়ের সাবেক সচিব শাফকাত মেহমুদকে। এ ছাড়া তাকে বাড়তি দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জাতীয় ইতিহাস ও সাহিত্য বিষয়ক বিভাগের। পানিসম্পদ বিষয়ক মন্ত্রী করা হয়েছে মাখদুম খুশরু বখতিয়ারকে। জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা, রেগুলেশন্স ও সমন্বয় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন রাওয়ালপিন্ডির আমির মেহমুদ কিয়ানি। পিটিআইয়ের মিত্র হিসেবে যারা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেয়েছেন তারা হলেন- মুক্তাহিদা কওমি মুভমেন্টের সিনেটর ফারুক নাসিম (আইন ও বিচার মন্ত্রী)। পিএমএল-কিউয়ের সিনেটর চৌধুরী তারিক বশির চিমাকে দেয়া হয়েছে ‘স্টেটস অ্যান্ট ফ্রন্টিয়ার রিজিওনসের দায়িত্ব। প্রতিরক্ষা বিষয়ক উৎপাদন মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন বেলুচিস্তান আওয়ামী লীগ পার্টির জুবাইদা জালাল। রেলমন্ত্রী করা হয়েছে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রধান শেখ রশিদ আহমেদকে। তথ্য প্রযুক্তি ও টেলি যোগাযোগ বিষয়ক মন্ত্রী বানানো হয়েছে এমকিউএম-পি’র খালিদ মকবুল সিদ্দিকীকে। আন্তঃপ্রাদেশিক সমন্বয় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন গ্রান্ড ডেমোক্রেটিক এলায়েন্সের ড. ফেহমিদা মির্জাকে। ধর্ম বিষয়ক ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বিষয়ক মন্ত্রী করা হয়েছে স্বতন্ত্র সিনেটর ফাতা নুরুল হক কাদরিকে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন ৫ জন উপদেষ্টা। তারা হলেন- বাবার আওয়ান (পার্লামেন্ট বিষয়ক উপদেষ্টা), শেহজাদ আরবাব (রাষ্ট্রীয় বিভাগ), আবদুর রাজ্জাক দাউদ (বাণিজ্য, বস্ত্রখাত, শিল্প উৎপাদন ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা), ড. ইশরাত হোসেন (প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও সংযম বিষয়ক উপদেষ্টা) এবং আমিন আসলাম (জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা)।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status