শেষের পাতা

ডলার সংকট প্রকট

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২০ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ১০:১১ পূর্বাহ্ন

বেশ কিছুদিন ধরেই দেশে ডলারের বাজারে সংকট চলছে। এ থেকে উত্তরণে প্রতিদিনই বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে সীমিত পরিসরে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রার বিনিময়মূল্য বেঁধে দেয়া হয়। তারপরও স্থিতিশীল হচ্ছে না ডলারের বাজার। টাকার বিপরীতে প্রতিনিয়তই বাড়ছে ডলারের দাম । সংকটের কারণে আমদানির ঋণপত্র খোলায় সতর্ক অবস্থান নিয়েছে ব্যাংকগুলোও। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংক সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডলার সংকট তৈরির মূল কারণ হঠাৎ আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি। যে হারে আমদানি বেড়েছে, সে তুলনায় বাড়েনি রপ্তানি ও প্রবাসী আয়। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ১৬.৩৯ শতাংশ। তবে এ সময় রপ্তানি আয় বেড়েছে ৫.৮১ শতাংশ ও প্রবাসী আয় বেড়েছে ১৭ শতাংশ। এ কারণে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বাড়তে শুরু করে ডলারের দাম। এতে চলতি বছরের শুরু থেকে ডলারের সংকট প্রকট আকার ধারণ করে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এবারের ঈদ উপলক্ষে যারা বিদেশে বেড়াতে গেছেন, তাদের একটি আর্থিক শাস্তি পোহাতে হয়েছে। সবাইকেই ডলার কিনতে হয়েছে বেশি দামে। খোলাবাজারে ডলারের দাম ৮৪-৮৫ টাকার মতো। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাইছে এর দাম ৮৪ টাকায় সীমিত রাখতে। সরবরাহ কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোতে ডলার সংকট তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তারা। এছাড়া ডলারের দাম বাড়লে রপ্তানিকারকরা লাভবান হন আর ক্ষতিগ্রস্ত হন আমদানিকারকরা। তাই ভালো-মন্দ দুটোই আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম আবারো বেড়েছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে একই থাকার পর প্রতি ডলারে ৫ পয়সা বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সায়।

গত ২১শে মে থেকে ডলার ৮৩ টাকা ৭০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। এক ব্যাংক অন্য ব্যাংকের কাছে যে দামে ডলার বেচাকেনা করে, তা আন্তঃব্যাংক দাম হিসেবে বিবেচিত। টাকা-ডলার বিনিময় হার পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩.৯১ শতাংশ বা ৩ টাকা ১৬ পয়সা বেড়েছে। আর ২০১৬ সালের জুন শেষে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ৭৮ টাকা ৪০ পয়সা। সে হিসাবে দুই বছরে ৫ টাকা ৩৫ পয়সা বেড়েছে। আন্তঃব্যাংক লেনদেনের বাইরে কার্ব মার্কেটে (খোলা বাজারে) ডলারের দাম আরো বেশি। কার্ব মার্কেটে (খোলা বাজার) বিনিময় হচ্ছে ৮৫-৮৬ টাকায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ৮৪ টাকা হলেও শিগগিরই তা ৯০ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, দাম বাড়তে থাকায় গত জুন মাসে প্রতি ডলারের বিনিময়মূল্য ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সা মৌখিকভাবে স্থির করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর আর তা বাড়তে দেয়া হয়নি। এতে বৈদেশিক ব্যবসায় লোকসানও গুনছে অনেক ব্যাংক। এদিকে বাজারের চাহিদা মেটাতে রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে গত প্রায় দেড় মাসে ৬ কোটি ২০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিক্রি করেছিল ২৩১ কোটি ডলার। এরপরও গত এক বছরে ডলারের দর ৪ শতাংশ বেড়ে ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সায় উঠেছে। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে হয়েছে ৩ হাজার ২২০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রতি ডলারে দাম ছিল ৮০ টাকা ৭০ পয়সা। বর্তমানে তা কৃত্রিমভাবে ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সায় আটকে রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বিপাকে পড়েছে ব্যাংকগুলো। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ডলার ৮৩ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ব্যাংকগুলোর কাছে বিক্রি করছে। তাই ব্যাংকগুলোকে এ দামেই ঋণপত্রের দায় শোধ করতে হচ্ছে। যেসব ব্যাংকের প্রবাসী ও রপ্তানি আয় কম, তারা বৈদেশিক ব্যবসায় মুনাফাই করতে পারছে না। এর মধ্যে যেসব ব্যাংক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা না করেই বেশি ঋণপত্র খুলেছে তাদের বিপদ আরো বেশি। তাই লোকসানে পড়েছে বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। মূলত আমদানি চাপ বেড়ে যাওয়ায় এটি সৃষ্টি হয়েছে। এটি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সুনির্দিষ্ট প্রদক্ষেপ নিতে হবে। শুধু ডলার বিক্রি করে চাপ কমানো- এটি প্রকৃত সমাধান নয়। এ ক্ষেত্রে কীভাবে রেমিট্যান্স, এক্সপোর্ট বাড়ানো যায়, ইমপোর্ট কমানো যায় এ বিষয়ে সঠিক কিছু কৌশল নিতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। গত অর্থবছরে দেশের পণ্য ও সেবা উভয় বাণিজ্যেই ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে যার পরিমাণ ছিল ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বাণিজ্যেই ঘাটতির ৯২.৭৬ শতাংশ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status