প্রথম পাতা

ছিনতাইকারীদের কল্যাণ তহবিল ৮ লাখ টাকা উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ১০:০২ পূর্বাহ্ন

কল্যাণ তহবিল। বিপদ-আপদের জরুরি প্রয়োজনে সহায়ক সঞ্চয়। তবে, এবার  এক ভিন্ন কল্যাণ তহবিলের সন্ধান পেয়েছে গোয়েন্দারা। সর্বস্ব হাতিয়ে মানুষের সর্বনাশকারী ছিনতাইকারীরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য গঠন করেছিল এই কল্যাণ তহবিল। ‘ছিনতাইকারী কল্যাণ তহবিল’।

ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়লে দ্রুততার সঙ্গে জামিনে মুক্তি পেতে বা গণপিটুনির শিকারের পর চিকিৎসার ব্যয় বহনের জন্য এই তহবিল গড়ে তোলে তারা। সেই তহবিলের টাকায় কয়েকজন ছিনতাইকারী এ পর্যন্ত সাত থেকে আট বার জামিনে মুক্তি পেয়ে বহাল তবিয়তে একই অপরাধে রয়েছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। রাজধানীতে দু’ছিনতাইকারীর স্ত্রীর কাছ থেকে এই তহবিলের আট লাখ টাকা উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (পূর্ব) বিভাগের সদস্যরা।

গত শুক্রবার রাজধানীর নিউ মার্কেট ও যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেপ্তার হওয়া ছয় ছিনতাইকারী ও তহবিলের অর্থ জমা রাখা দুই নারী ছিনতাইকারীর স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে এই তথ্য।

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, ছিনতাইকারীদের স্বীকারোক্তিতে আমরা অবাক। ছিনতাইকারীরা কল্যাণ ফান্ড গঠন করেছে। তাদের কেউ গ্রেপ্তার হলেই সেই টাকায় দ্রুততার সঙ্গে জামিন নিয়ে তারা আবার একই অপরাধে জড়াচ্ছে। অপরাধে ঝুঁকি কমিয়ে টিকে থাকার জন্য তারা সংঘবদ্ধ হচ্ছে। এমন চক্র আরো থাকতে পারে বলেও ধারণা করছে পুলিশ।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিবি পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগ সূত্র জানায়, রাজধানীর নিউ মার্কেট ও যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় অভিযান চালায় দু’বিভাগের গোয়েন্দা সদস্যরা। তাতে গ্রেপ্তার হয় ছিনতাইকারী দলের ছয় সদস্য- মো. সাজ্জাদ হোসেন ওরফে সাগর, মো. আলী হাসান, সবুজ বিশ্বাস, মো. রকি ওরফে নুরুজ্জামান ও মো. লিটন মিয়া।

তারা ছিনতাইয়ে দুর্দান্ত। একজনেই প্রতিমাসে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকার অর্থসহ জিনিসপত্র ছিনতাই করে আসছিল। তাদের একজন একমাসে পাঁচ লাখ টাকা ছিনতাই করে। কয়েকজনের বিরুদ্ধে পাঁচ থেকে ছয়টি মামলা রয়েছে। সাত থেকে আট বার গ্রেপ্তার হয়েছে। কারাগারে গেছে। ছাড়া পেতে স্বজনদের দৌড়-ঝাঁপ করতে হয়েছে আদালতে। এজন্য মাঝে মধ্যে অর্থকষ্টে স্বজনদেরকে বিড়ম্বনায়ও পড়তে হয়।

এছাড়া কেউ কেউ একাধিকবার গণপিঠুনির শিকার হয়। যেতে হয়েছে হাসপাতালে। হাসপাতালের শয্যায় পড়ে থাকতে হয়েছে দীর্ঘদিন। এসব বিপদে এক ছিনতাইকারী অন্যজনের উপকারে এগিয়ে আসলেও আপদকালীন টাকার সংকটে পড়েছিল বার বার। তা মোকাবিলার জন্য ছিনতাইকারীরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে গড়ে তোলে কল্যাণ তহবিল। অবশ্য সে টাকা রাখার জন্য ব্যাংকে কোনো অ্যাকাউন্ট করা হয়নি।

উদ্যোক্তা ও সহযোগী ছিনতাইকারীদের স্ত্রী ও সহযোগীদের কাছে জমা রাখা হয় টাকাগুলো। তারাও ছিনতাইয়ে পারদর্শী। গত শুক্রবার রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকা থেকে কল্যাণ তহবিলের দুই জমাকারী বেবী আক্তার এবং নুপুর ওরফে ঝুমুরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে কল্যাণ তহবিলের আট লাখ টাকা। অবশ্য তারা দু’জনও ছিনতাইয়ে পারদর্শী। আর দামি পোশাকে ভদ্র বেশ-ভূষায় কারো মনে হওয়ার উপায়ই নেই যে তারা ছিনতাইকারী। ব্যস্ততম মার্কেটে ঘোরাঘুরির সময় তারা আগত নারী ক্রেতাদের টার্গেট করে।

তারপর তাদের ব্যাগের মোবাইল ফোন সেট বা টাকা কৌশলে ছিনিয়ে নেয়। দু’দিন আগে একজনেই চার ঘণ্টায় পাঁচটি মোবাইল ফোন সেট ছিনতাই করে। তাদের কাছ থেকে ৯টি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই ছিনতাইকারী চক্রের কাছ থেকে মোট ১২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। জব্দ করা করা হয়েছে ছিনতাইয়ে ব্যবহারের ১টি মাইক্রোবাসও। উদ্ধার করা হয়েছে ১টি চাপাতি ও দুইটি চাকু।

ডিবি পূর্ব বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) খন্দকার নুরুন্নবী মানবজমিনকে বলেন, ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারের পর তাদের কল্যাণ তহবিল থাকার বিষয়টি জানা যায়। তারপর ডিবি পূর্ব বিভাগের সদস্যরা অভিযান চালিয়ে তহবিলের টাকা জমা রাখা দু’নারীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। এখন থেকে ছিনতাইকারী ধরা হলে এমন তহবিলের বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্ত করা হবে বলে জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status