শেষের পাতা

দুর্ভোগ সঙ্গী করেই বাড়ি ফিরছে মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার

১৯ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ৯:৫৩ পূর্বাহ্ন

বাস, ট্রেন ও লঞ্চে ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। স্বজন ও প্রিয়জনের সান্নিধ্যে যেতে সবাই ছুটছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। সবার চোখেমুখে বাড়ি ফেরার আনন্দ। কিন্তু  ঈদযাত্রা বাড়িতে ফিরতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘরমুখো মানুষ। সড়কগুলোতে তীব্র যানজট। ছিল ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ও। কিছু ট্রেন সময়মতো স্টেশনে না পৌঁছায় যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। নাড়ির টানে মানুষ ঢাকার বাইরে যাওয়ায় ফাঁকা হয়ে আসছে রাজধানী।

রেলপথের আগাম টিকিট সংগ্রহ করতে না পারা ও সড়কপথের ভোগান্তি এড়াতে বাড়তি দামে হলেও এয়ারলাইন্সগুলোর কাউন্টারগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন অনেকে। শেষ মুহূর্তে ট্রাভেল এজেন্টদের কাছে ধর্না দিয়েও লাভ হচ্ছে না টিকিট প্রত্যাশীদের। কমলাপুর স্টেশনে দেখা গেছে, ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মেই ট্রেনের অপেক্ষায় ঘরমুখো মানুষ। ট্রেন ছাড়ার অনেক আগেই স্টেশনে হাজির হয়েছেন যাত্রীরা। সবার হাতেই ব্যাগ-লাগেজ।

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৯ই আগস্ট যারা অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন তারাই শনিবার বাড়ি যান। শুক্রবারের তুলনায় গতকাল যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে বেশি। আজ ও আগামী দু’দিন এই ভিড় আরো বাড়বে বলে মনে করছেন স্টেশন সংশ্লিষ্টরা। ট্রেনে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। গতকাল ট্রেনে ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিন। তবে প্রথম দিনের মতো গতকালও কমলাপুর থেকে দেরিতে ছেড়েছে ট্রেন।

গত ৯ই আগস্ট দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কেটেছিলেন তারাই গতকাল বাড়ি ফিরেছেন। শনিবার সারা দিনে কমলাপুর থেকে ৬৮টি ট্রেন সারা দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে রওয়ানা দেয়। তবে সকাল থেকেই বেশ কয়েকটি ট্রেন বিলম্বে ছেড়ে গেছে। নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ছেড়ে না যাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপ। তাদের ওঠানামার সুবিধার্থেই ট্রেন ছাড়তে দেরি করছে কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনের শুরুতে আন্তঃনগর ট্রেন রাজশাহী অভিমুখী ধূমকেতু এক্সপ্রেস সকাল ৬টায় কমলাপুর ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়ে গেছে সকাল ৭টায়। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে গেছে সকাল ৮টায়। এছাড়া দিনাজপুর চিলাহাটিগামী  নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়ে গেছে ১০টার পরে। রংপুর এক্সপ্রেস সকাল ৯টায় স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও প্রায় ১০টার দিকে স্টেশন ছেড়েছে।

দিনের প্রথম ঈদ স্পেশাল ট্রেন লালমনি এক্সপ্রেস ৯টা ১৫ মিনিটে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও এটা ছাড়ে ১০টা ৫৫ মিনিটে। যাত্রী আমির হোসেন বলেন, চরম ভোগান্তি। নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দুই ঘণ্টা পরও ট্রেনটি ছেড়ে যেতে পারেনি। কখন বাড়ি যাবো? এই প্রসঙ্গে কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ঈদে যাওয়া-আসা দুই সময়েই প্রতিটি স্টেশনে অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানামা করে। ফলে অতিরিক্ত সময়ের জন্য ট্রেন কিছুটা দেরিতে পৌঁছায়।

ট্রেনগুলো বিলম্বে আসে সেই কারণে ট্রেনগুলো দেরিতে ছেড়ে যায়। তবে আমরা চেষ্টা করছি সব ট্রেনের শিডিউল ঠিক রাখতে। তিনি বলেন, তেজগাঁওয়ে একটি ট্রেনে ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রায় ১ ঘণ্টা বন্ধ ছিল, যার প্রভাব অন্য ট্রেনগুলোর উপর পড়েছে। ফলে বাকি ট্রেনগুলো কমলাপুর থেকে বিলম্বে ছেড়ে গেছে।

এদিকে, নৌপথে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন ঘরমুখো মানুষ। ঈদ সামনে রেখে নির্ধারিত ভাড়ার দোহাই দিয়ে লঞ্চের টিকিটে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, সদরঘাট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪৩টি রুটে লঞ্চ চলাচল করে। লঞ্চে কেবিনের ক্ষেত্রে সাধারণত অগ্রিম টিকিট দেয়া হয়। বছরের অন্য সময় একজনের (সিঙ্গেল) কেবিন ভাড়া ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা হয়। সেখানে নেয়া হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা। দুজনের (ডাবল) দুই হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত। যা আগে দুই হাজার টাকা ছিল।

অন্যদিকে সায়দাবাদ, গাবতলী  ও মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নিয়ে একের পর এক বাসগুলো দূরপাল্লার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছেন। বিভিন্ন বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। এদিকে, রেলপথের আগাম টিকিট সংগ্রহ করতে না পারা ও সড়কপথের ভোগান্তি এড়াতে বাড়তি দামে হলেও এয়ারলাইন্সগুলোর কাউন্টারগুলোতে ভিড় জমাচ্ছে অনেকে। ট্রাভেল এজেন্টদের কাছেও ধর্না দিচ্ছেন তারা।

যদিও  অভ্যন্তরীণ রুটের সব টিকিট ফুরিয়ে গেছে আরো আগেই। মোহাম্মদপুরের শিক্ষার্থী অমিত রায় গণমাধ্যমকে বলেন, ভেবেছিলাম বিমানে রাজশাহী গিয়ে তারপর সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে পাবনা যাবো। কারণ বাস ট্রেন কোনোটারই আগাম টিকিট কাটা হয়নি। কিন্তু কোনো এয়ারলাইন্সেই টিকিট পেলাম না।

দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ও রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, সড়কপথে দীর্ঘ সময় ও ভোগান্তি এড়াতে আকাশপথে যাত্রীদের আগ্রহ বেড়েছে। সৈয়দপুর ও রাজশাহী রুটে যাত্রী বেশি থাকে। এখনো অনেকে টিকিটের জন্য যোগাযোগ করছেন। কিন্তু আমাদের কাছে আর কোনো টিকিট অবশিষ্ট নেই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status