সড়ক নিরাপদ করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা

রাজধানীতে সড়ক নিরাপত্তার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা দেয়ার পর গতকাল উত্তরা থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটির নগর ভবন পর্যন্ত সড়ক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল। পরে নগরভবনে আয়োজিত এক বৈঠকে নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা আলোচনা করেন।

বৈঠকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনসহ সিটি করপোরেশন, বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিট’ এক সভায় ‘ঢাকা শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব মো. নজিবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন।

সভা থেকে পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে বেশকিছু নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে, ঢাকা শহরে চলমান সকল গণপরিবহন (বিশেষত বাস) শহরে চলাচলের সময়ে গাড়ির মূল দরজা বন্ধ রাখা এবং বাস স্টপেজ ছাড়া যাত্রী উঠানামা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও গণপরিবহনে (বিশেষ করে বাস) দৃশ্যমান দু’টি স্থানে চালক এবং  হেলপারের ছবিসহ নাম এবং চালকের লাইসেন্স নম্বর, মোবাইল নম্বর প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান এবং বাস্তবায়ন নিশ্চিত, সকল মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীকে (সর্বোচ্চ দুইজন আরোহী) বাধ্যতামূলক হেলমেট পরিধানের ব্যবস্থা গ্রহণ ও সিগন্যালসহ ট্রাফিক আইন মানার জন্য বাধ্য করার ব্যাপারেও সভায় সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় সব সড়কে বিশেষত মহাসড়কে চলমান সব পরিবহনে (দূরপাল্লার বাসে) চালক এবং যাত্রীর সিটবেল্ট ব্যবহার এবং পরিবহন  কোম্পানিগুলোকে সিট বেল্ট সংযোজনের নির্দেশনা প্রদান করে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। পরিবহন ব্যবস্থাপনার এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য আগামী ২০শে আগস্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বিআরটিএ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকা শহরের যে সব স্থানে ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস রয়েছে সে সব স্থানের উভয় পাশে একশ’ মিটারের মধ্যে রাস্তা পারাপার সম্পূর্ণ বন্ধ করতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রয়োজনে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নাগরিককে ‘ধন্যবাদ’ কিংবা ‘প্রশংসাসূচক’ সম্বোধন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা  মেট্রোপলিটন পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

এছাড়াও ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাসসমূহে প্রয়োজনীয় পরিচ্ছন্নতা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আন্ডারপাসসমূহে প্রয়োজনীয় লাইট, সিসিটিভি স্থাপন এবং আন্ডারপাসের বাইরে আয়নার ব্যবস্থা করা। সভায় ঢাকা শহরের সকল সড়কে জেব্রা ক্রসিং ও রোড সাইন দৃশ্যমান করা, ফুটপাথ হকার মুক্ত রাখা, অবৈধ পার্কিং এবং স্থাপনা উচ্ছেদ করাসহ সকল সড়কের নামফলক দৃশ্যমান স্থানে সংযোজন করার সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় ট্রাফিক সপ্তাহে চলমান সব কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত যথাসম্ভব অব্যাহত রাখা, স্বয়ংক্রিয় বৈদ্যুতিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ঢাকা শহরে রিমোর্ট কন্ট্রোলড অটোমেটিক বৈদ্যুতিক সিগনালিং পদ্ধতি চালুকরণসহ সব সড়কের ডিভাইডারের উচ্চতা বৃদ্ধি করে বা স্থানের ব্যবস্থাপনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়।

এছাড়াও মহাখালী ফ্লাইওভারের পর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত (আপ এবং ডাউন) ন্যূনতম দুটি স্থানে স্থায়ী মোবাইল কোর্ট, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি নিশ্চিত করা এবং প্রতিনিয়ত দৈব চয়নের ভিত্তিতে যানবাহনের ফিটনেস এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করা। শহরের জন্য সকল স্থানে প্রয়োজন অনুযায়ী অস্থায়ী অনুরূপ কাজের জন্য  মোবাইল কোর্ট, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।

সভায় বলা হয়, ঢাকা শহরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে সমন্বয় করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি বা আরম্ভ হওয়ার প্রাক্কালে অপেক্ষাকৃত বয়ঃজ্যেষ্ঠ শিক্ষার্থী, স্কাউট এবং বিএনসিসি’র সহযোগিতা গ্রহণ করে শিক্ষার্থীদের রাস্তা পারাপারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করবে।

পরিবহনের ফিটনেস এবং লাইসেন্স প্রসঙ্গে বলা হয়, অবৈধ পরিবহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ফিটনেস প্রদান প্রক্রিয়াতে অবশ্যই পরিবহন দর্শনপূর্বক ফলপ্রসূ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এছাড়াও রুট পারমিট/ফিটনেসবিহীন যানবাহনসমূহকে দ্রুত ধ্বংস করার সম্ভাব্যতা যাচাই ও লাইসেন্স প্রদান প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে।

এক্ষেত্রে ‘লারনার’ প্রদানের প্রাক্কালেই ড্রাইভিং টেস্ট  নেয়া যেতে পারে এবং উত্তীর্ণদের দ্রুততম সময়ে লাইসেন্স প্রদান করা এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর ঘাটতি থাকলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিআরটিএকে দায়িত্ব প্রদান করা হতে পারে। সভায় গৃহীত পদক্ষেপসমূহ জনসাধারণকে অবহিত করার লক্ষ্যে সকল প্রচার গণমাধ্যমে ব্যাপকভিত্তিক প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কনটেন্টের বিষয়ে প্রয়োজনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।