এক্সক্লুসিভ

বাণিজ্য ঘাটতি

১৮২৫ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৯ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ৮:৫১ পূর্বাহ্ন

আমদানি ব্যয় বাড়লেও এর বিপরীতে সে অনুযায়ী বাড়ছে না রপ্তানি আয়। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে বাংলাদেশের অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে। গেল ২০১৭-১৮ অর্থবছর (জুলাই-জুন) শেষে সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি ইতিহাসের সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫ হাজার ৪৪৬ কোটি ৩০ লাখ (৫৪.৪৬ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। একই সময়ে পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৩ হাজার ৬২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ হিসাবে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এর আগে কখনই এক অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্যে এতো বড় ঘাটতি হয়নি।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৯৪৭ কোটি ২০ লাখ ডলার ছিল। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে ৯২.৭৬ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় রপ্তানি আয় না বাড়ায় বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনা চাপে রয়েছে। আমদানি বাড়লেই বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যায়। ইতিমধ্যে ডলারের তুলনায় টাকা দুর্বল হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ে আমদানি ও শিল্পপণ্যের দামে। তাদের মতে, আমদানির এ প্রভাব উৎপাদনশীল খাতের বিনিয়োগে পড়লে অর্থনীতির জন্য ভালো। তবে এই অর্থ যদি পাচার হয়ে থাকে তাহলে এর ফল অত্যন্ত ভয়াবহ হবে। বর্তমান অবস্থা অব্যাহত থাকলে চাপের মুখে পড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে এর মূল কারণ আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সে তুলনায় রপ্তানি হয়নি। এখন এটি কমাতে হলে রপ্তানি বাড়াতে হবে; এর কোনো বিকল্প নেই। তিনি বলেন, দেশে অবকাঠামোর উন্নয়ন হচ্ছে। এছাড়া নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান করতে হলে আমদানি বাড়বেই এটি কমানোর কোনো উপায় নেই। তবে সঠিকভাবে আমদানি হলে ব্যয় অনেকটা কমবে। তিনি বলেন, বর্তমানে আমদানি তুলনামূলক বেড়েছে। এটি যদি মূলধনী যন্ত্রপাতি বা পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল হয়ে থাকে ভালো। তবে যে হারে আমদানি ব্যয় বেড়েছে সেই হারে দেশে বিনিয়োগ বাড়েনি। তাই আমদানির নামে অর্থপাচার হচ্ছে কি না তা সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে ইপিজেডসহ রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে তিন হাজার ৬২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৫ হাজার ৪৪৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এ হিসাবে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৮২৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যা বর্তমান বিনিময় হার (৮৪ টাকা) অনুযায়ী এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকার বেশি। আলোচ্য সময়ে, আমদানি বেড়েছে ২৫.২৩ শতাংশ। এর বিপরীতে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ৬.৪৩ শতাংশ। অন্যদিকে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৭.৩৩ শতাংশ। ফলে চলতি হিসাবে ঘাটতি বড় হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো। কিন্তু গত কয়েক বছর উদ্বৃত্তের ধারা অব্যাহত থাকলেও গত অর্থবছরে ঋণাত্মক ধারায় চলে গেছে। এখনো তা অব্যাহত আছে। সর্বশেষ ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে ৯৭৮ কোটি ডলার ঋণাত্মক হয়েছে। যা এর আগের অর্থবছরে ঋণাত্মক ছিল ১৩৩ কোটি ১০ লাখ ডলার।

এদিকে আলোচিত সময়ে সেবা খাতে বেতন-ভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করা হয়েছে ৯১১ কোটি ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে মাত্র ৪৫৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৫৭ কোটি ডলার। যা গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের একই সময়ে ছিল (ঘাটতি) ৩২৮ কোটি ডলার।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অর্থ বছরের মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে বিদেশি ঋণ গ্রহণ বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে আর্থিক হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের ঋণ এসেছে ৫৭৮ কোটি ৫০ লাখ ডলার, যা আগের একই সময়ের তুলনায় ৭৯.৭৭ শতাংশ বেশি। বিদেশি ঋণ বাড়লেও বিদেশি বিনিয়োগ কমে এসেছে।

এ সময় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ২৭৯ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা গত অর্থ বছরের চেয়ে ৭.৯০ শতাংশ কম। অন্যদিকে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। অর্থবছর শেষে শেয়ারবাজারে ৩৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ৪৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
এদিকে অর্থপাচার সম্পর্কে সমপ্রতি বাংলাদেশে ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজি হাসান বলেন, ৪ হাজার কোটি টাকার উপরে অর্থ পাচার সংক্রান্ত অনিয়ম পাওয়া গেছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে নথি পাঠানো হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status