শেষের পাতা

ভোগান্তি মাথায় নিয়ে ঈদযাত্রা

স্টাফ রিপোর্টার

১৮ আগস্ট ২০১৮, শনিবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন

ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানী ছাড়তে শুরু করেছে মানুষ। নাড়ির টানে কর্মস্থল ছেড়ে ঈদযাত্রীদের ভিড় এখন রাজধানীর বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন ও লঞ্চ ঘাটে। ঈদযাত্রার শুরুতেই ভোগান্তি মাথা নিয়ে বাড়ি ফিরছেন মানুষ। ঈদযাত্রার প্রথম দিনেই কয়েকটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। গতকাল মহাসড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজটের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষকে রাস্তায় থাকতে হয়েছে। কোথায়ও ১০ ঘণ্টা মানুষকে রাস্তায় কাটাতে হয়েছে।

গাজীপুরে পোশাক শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে ২০ কিলোমিটার যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন ঈদে ঘরমুখো মানুষ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৫০ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়। এদিকে ঈদের অগ্রিম টিকিট অনুযায়ী গতকালই শুরু হয়েছে ট্রেনে ঈদযাত্রা। নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে তাই সকাল থেকেই কমলাপুর স্টেশনে ছিল ঘরমুখো মানুষের উপচে পড়া ভিড়। আর ঈদযাত্রার প্রথম দিনেই কয়েকটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যেতে পারেনি ৩টি ট্রেন। পরে সেগুলো পৌনে  ১ ঘণ্টা থেকে পৌনে ২ ঘণ্টা দেরি করে কমলাপুর ছেড়ে গেছে। জানা গেছে, গতকাল কমলাপুর স্টেশন থেকে ৫৯টি ট্রেন চলাচল করেছে। জামালপুর দেওয়ানগঞ্জ অভিমুখী তিস্তা এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৭টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের নীলসাগর এক্সপ্রেস সকাল ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে যায় ৯টা ১০ মিনিটে। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও গেছে ৭টায়। নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী মুকুল আহমেদ বলেন, মানুষের ভিড় ঠেলে ট্রেনে উঠেছি। এর মধ্যে আবার ট্রেন লেট। এ বিষয়ে কমলাপুর স্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ট্রেনগুলো সময়মতো কমলাপুরে আসতে না পারার কারণে ছেড়ে যেতে কিছুটা দেরি হয়েছে। আমরা সঠিক সময়ে ট্রেন চলাচলের জন্য চেষ্টা করছি।

গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনালে দেখা যায়, ঘরমুখো মানুষের ভিড়। টার্মিনালে সকালের দিকে যাত্রীর সংখ্যা কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। সঠিক সময়েই সিরিয়াল মেনেই দূরপাল্লার বাসগুলো ছেড়ে যাচ্ছিল। প্রায় প্রতিটি বাস নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে গেছে বলে কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতারা জানিয়েছেন। ঈদযাত্রার প্রথম দিন রেলওয়ে স্টেশন ও বাস টার্মিনালে ভিড় বাড়লেও সদরঘাটে চাপ একটু কম ছিল।
গাজীপুর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, গাজীপুরে ঈদের আগে চলতি মাসের বেতনের দাবিতে পোশাক শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে। এতে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে বিশাল যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সদর উপজেলার হোতাপাড়া এলাকায় শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন এ্যালিগেন্ট গ্রুপ নামের একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। এতে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কে অচল অবস্থা বিরাজ করছে। কারখানার শ্রমিকরা জানান, আগস্ট মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বেতনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন তারা। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের কথায় রাজি হননি। এছাড়াও কারখানায় সদ্য যোগদান করা শ্রমিক ঈদ বোনাস না পাওয়ায় তারা চলতি মাসের অর্ধেক বেতন বোনাসের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কর্তৃপক্ষ তা না করে কারখানায় বন্ধের নোটিশ দিয়েছে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।

হোতাপাড়া শিল্প পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিব ইস্কান্দার জানান, চলতি মাসের অর্ধেক বেতনের দাবিতে হোতাপাড়ায় অবস্থিত এ্যালিগেন্ট কারখানার শ্রমিকরা সকাল ১০টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরানো চেষ্টা চলছে। নাওজোড় হাইওয়ে ফাঁড়ির ইনচার্জ ওয়াহিদ জানান, শ্রমিক অবরোধের কারণে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট শ্রমিক পক্ষ ও মালিক পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সমঝোতার চেষ্টা চলছে। ৩টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছেন শ্রমিকরা। পুলিশ ও মালিকপক্ষ তাদের বোঝানোর চেষ্টা করে এখনো সফল না হওয়ায় যানজট অব্যাহত রয়েছে। এতে সড়কের উভয় পাশে প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকা যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

চান্দিনা (কুমিল্লা) থেকে প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা সেতু থেকে কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার রাস্তায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। শুক্রবার ভোর থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ১০ ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে। এতে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হন। যানজটের কারণে ঢাকা-কুমিল্লার দুই ঘণ্টার রাস্তার যাতায়াতে সময় লাগছে সাত থেকে আট ঘণ্টা। দাউদকান্দি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) নুরুল ইসলাম বলেন, ট্রাফিক সপ্তাহে মামলার ভয়ে ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় নামানো হয়নি। ওইসব গাড়ি এখন সড়কে নেমেছে। এ ছাড়া কোরবানির গরুবাহী গাড়ির চাপও বেড়েছে মহাসড়কে। এ কারণে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং করে রাখার কারণে আরো তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে মহাসড়কে একটানা ১০ ঘণ্টা যাবত সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। শুক্রবার হওয়ায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যানবাহনের চাপ ছিল মাত্রাতিরিক্ত বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহনের চাপও বৃদ্ধি পেতে থাকে। দূরপাল্লার যানবাহনগুলোকে মহাসড়কে আটকে থাকতে হয়েছে। ঢাকা থেকে গৌরীপুরে আসা যাত্রী মো. আমির হোসেন জানান, তার এক আত্মীয়র জানাজায় অংশগ্রহণ করার জন্য ভোর পাঁচটায় বাসে উঠে, কখনোবা সিত্রনজি করে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে সকাল ১০টায় গৌরীপুরে পৌঁছেন বলে জানান। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা একটি কার্গো গাড়ির ড্রাইভার রহমত আলী জানান, মেঘনা সেতু থেকে ইলিয়টগঞ্জ পৌঁছাতে সময় লেগেছে তার ৫ ঘণ্টা। নোয়াখালী গামী অনেক যাত্রী জানান, চালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা এবং নিয়ম না মেনে অনিয়ন্ত্রিতভাবে চালাবার কারণে প্রায় প্রতিদিনই যানজট লেগে থাকে।

দীর্ঘ যানজটের কারণে গৌরীপুর থেকে দাউদকান্দি সেতু পেরিয়ে গজারিয়া এলাকা পর্যন্ত ১০-১২ কিলোমিটার রাস্তা বহু যাত্রী ছোট ছোট শিশু, ভারী ব্যাগ নিয়ে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা গেছে। দাউদকান্দি হাইওয়ে পুলিশের ওসি আবুল কালাম আজাদ বলেন, গাড়িগুলো এলোপাতাড়ি চলাচল করার কারণেই দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়।
জানা গেছে, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌ-রুটের যানবাহনের বাড়তি চাপ আর তীব্র স্রোতে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা কমে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে পাটুরিয়া দৌলতদিয়া ফেরি ঘাটে। বাড়তি প্রস্তুতি হিসেবে ফেরি সংখ্যা বাড়ানো হলেও কোরবানির পশুবাহী ট্রাক পারাপার বেড়ে যাওয়ায় যানবাহনগুলোকে ঘাটে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।

ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই নৌ-রুটে ঈদের সময় যাত্রী দুর্ভোগ আরো বাড়ার শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। পরিবহন যাত্রী ও চালকরা জানান, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ রুটে কয়েকদিন ধরে পারাপারে তাদের বেশ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ফেরি পারের অপেক্ষায় পাটুরিয়া ঘাটে দেড় থেকে ২ ঘণ্টা এবং দৌলতদিয়া ঘাটে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে। পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনে কিছুটা শৃঙ্খলা থাকলেও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দৌলতদিয়া ঘাটে। বাস, গরুর ট্রাকসহ সব যানবাহনকে একই লাইনে ফেরি পারের অপেক্ষায় থাকতে হয় বলে সময় বেশি লাগছে। ফলে ঈদযাত্রায় এবার ভোগান্তি আরো বাড়ার শঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। এক যাত্রী জানান, ঘাটের বর্তমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষকে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হবে। তাই কর্তৃপক্ষকে এখনই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের ম্যানেজার (মেরীন) আব্দুস সাত্তার জানান, শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌ রুটের অনেক যানবাহন বিকল্প পথ হিসেবে পাটুরিয়া দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবহার করছে। একইসঙ্গে নদীতে স্রোত বেড়ে যাওয়ায় ফেরি পারাপারে আগের চেয়ে প্রায় দেড়গুণ সময় বেশি লাগছে। ফলে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা কমে গেছে। এছাড়া অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক পারাপার করতে গিয়ে যানবাহনগুলোর পার হতে সময় লাগছে বেশি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status