দেশ বিদেশ

চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে ধস থামছে না

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৭ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ৯:৫২ পূর্বাহ্ন

দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চামড়া ও চামড়াজাত শিল্পের প্রসার ঘটাতে ২০১৭ সালে বর্ষপণ্য ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি এ খাতের উন্নয়নে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর করেছে সরকার। কিন্তু এরপরও দ্বিতীয় এই রপ্তানি খাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও প্রবৃদ্ধিতে ধস থামানো যাচ্ছে না। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পোশাক শিল্পের হাত ধরে দেশের সামগ্রিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির চিত্র স্বস্তি দিলেও অন্য খাতগুলোতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত হলেও তা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য অনেক খাতের রপ্তানি বরং আগের বছরের তুলনায় কমেছে। এর মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১২ শতাংশ। এজন্য শুধু পোশাকনির্ভর না হয়ে রপ্তানির এমন সম্ভাবনাময় খাতে মনোযোগ বাড়ানোর পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের। আর ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাভারে চামড়া কারখানা সরানোর বিষয়ে নানা জটিলতায় কমছে ক্রেতা। এ ছাড়া ট্যানারিশিল্প সাভারে স্থানান্তর, সেখানে যথাযথ অবকাঠামো গড়ে না ওঠা, কাঁচামাল সংগ্রহে জটিলতা ও নতুন বিনিয়োগ না হওয়াসহ নানা কারণে বাজার হারাচ্ছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য।
ইপিবির পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ছে চামড়া খাত। গত অর্থবছর (২০১৭-১৮) চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ১৩৮ কোটি ডলার রপ্তানি লক্ষ্য ধরা হলেও তা অর্জন হয়নি। আগের বছরের চেয়ে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১২ ভাগেরও বেশি। তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ১৩৮ কোটি ডলারের বিপরীতে আয় হয়েছে ১০৮ কোটি ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২১.৩৪ শতাংশ কম। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ১২.০৩ শতাংশ কম। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ১২৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। চামড়া রপ্তানিতে ২৪ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ২৩.৭১ শতাংশ কমে রপ্তানি হয়েছে ১৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার; যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ২৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। চামড়াজাত পণ্য থেকে ৫৪ কোটি ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার; যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই খাত থেকে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২৮ কোটি ডলার। এ ছাড়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ১১৩ কোটি ডলারের চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানিতে আয় হয়েছিল ১১৬ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এদিকে জুতা ও অন্যান্য পণ্যে গত অর্থবছরে ৬০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৫৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় হয় ৫৩ কোটি ডলার। জানা যায়, বিশ্বে চামড়াজাত পণ্যের বাজার ২২ হাজার কোটি ডলারের বেশি। এ বাজারে বাংলাদেশের অংশীদারিত্ব খুবই কম। এ ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা পরিবেশগত ক্ষতি ও নেতিবাচক শ্রম পরিবেশ। তবে সরকারের নীতিনির্ধারকরাও এর প্রতি গুরুত্ব দেয়া শুরু করে। সেই অনুসারে রাজধানী থেকে সাভারের চামড়া পল্লীতে ট্যানারি স্থানান্তরও করা হয়। তবে ২০০৩ সালে সাভারের চামড়াশিল্পের কাজ শুরু হলেও সিইটিপি এখনো পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হয়নি।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, আদালতের নির্দেশনায় ২০১৭ সালে হাজারীবাগের ২২২টি কারখানা বন্ধ করে দেয়া হয়। ওই সব কারখানার মধ্যে ১১৫টি ট্যানারি আংশিক বা কেউ পুরোপুরি চালু করতে পেরেছেন। এর ফলে বিদেশি অনেক ক্রেতা দেশ থেকে চামড়া নেয়া বন্ধ করে দেয়। তাদের এখনো ফেরানো যায়নি। অন্যদিকে সিইটিপির কাজ শেষ না হওয়ায় পরিবেশের দোহাই দিয়ে আসছে না ইউরোপের ক্রেতারা।
বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, সাভারের ট্যানারি পল্লীতে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট কাটলেও সেখানকার রাস্তাঘাটের অবস্থা বেহাল। সিইটিপি এখনো পুরোপুরি চালু হয়নি। গড়ে ওঠেনি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। আসন্ন ঈদুল আজহায় রাজধানীতে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছে সরকার। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১৩ সাল থেকে চামড়ার দাম ধারাবাহিকভাবে নিম্নগামী। যা ২০১৮ সালেও অব্যাহত রয়েছে। ২০১৩ সালে ব্যবসায়ীরা ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়া কেনেন ৮৫-৯০ টাকায়। ঢাকার বাইরে তা কেনা হয় ৭৫-৮০ টাকায়। এ ছাড়া সারা দেশে প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়ার দাম ছিল ৫০-৫৫ টাকা। একইভাবে ২০১৪ সালে প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৭০ থেকে ৭৫ টাকা। ২০১৫ সালে ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া ৫০ থেকে ৫৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর দেশজুড়ে খাসির প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়া ২০ থেকে ২২ টাকা ও বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা। ২০১৬ সালে গরুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়ার প্রতি বর্গফুটের সর্বনিম্ন দাম ছিল ৫০ টাকা। গতবছর ২০১৭ সালে গরুর চামড়ার প্রতি বর্গফুটের নির্ধারিত দাম ছিল সর্বনিম্ন ৪০ টাকা। এটি ছিল সারা দেশের গড় দাম। খাসির চামড়ার মূল্য সারা দেশে প্রতি বর্গফুট ২০ থেকে ২২ ও বকরির চামড়া ১৫ থেকে ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। এবার অর্থাৎ ২০১৮ সালে ঢাকায় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দর ৪৫ থেকে ৫০ আর ঢাকার বাইরে দর ঠিক করা হয় ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর সারা দেশে প্রতিফুট খাসির চামড়ার দর ঠিক করা হয়েছে ১৩ থেকে ১৫ টাকা। এভাবে বছর বছর দাম কমেছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status