বাংলারজমিন

সরাইল ৫০ শয্যা হাসপাতাল

নৈশপ্রহরী ও ব্রাদার-ই ডাক্তার!

মাহবুব খান বাবুল, সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে

১৬ আগস্ট ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৯ পূর্বাহ্ন

সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে চলছে এখন সরাইল উপজেলা ৫০ শয্যা হাসপাতাল। জরুরি বিভাগে দিনরাত সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছেন ব্রাদার (স্টাফ নার্স) রাজুসহ কয়েকজন। সেলাই ব্যান্ডেজের কাজটা সামাল দিচ্ছেন নৈশপ্রহরী নাছির মিয়া। প্রয়োজনে হাড় ভাঙার প্রাথমিক ব্যবস্থাও করছেন তিনি। বিশেষজ্ঞ কয়েকজন চিকিৎসকরা সপ্তাহে ২-৩ দিন আসছেন শুধু হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর দিতে। সকাল ৯টার আগেই হাসপাতাল চত্বর দখল করে নেয় দালালরা। আর দশটার পর রোগীরা টিকিট হাতে এদিক ওদিক ছুটতে থাকেন চিকিৎসকের সন্ধানে। অধিকাংশ কক্ষে ঝুলছে তালা। ২-১টি কক্ষের দরজা খোলা। কিন্তু চেয়ার টেবিল ফাঁকা। দাঁড়িয়ে বসে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন রোগীরা। ভর্তিকৃত রোগীদের দশা আরো করুন। নেই সিলিং ফ্যান। নেই জেনারেটর। অপরিচ্ছন্ন টয়লেটে নেই বৈদ্যুতিক বাল্ব। বিদ্যুৎ চলে গেলে ভ্যাঁসপা গরমে ছটফট করতে থাকে রোগীরা। একযুগ পর অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া গেলেও চালক সমস্যায় বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। রোগীদের খাবার ও বেডশিট ওয়াশের নামে বিল উত্তোলন নিয়ে নানা কথা চাউর হচ্ছে চারদিকে। দুর্বল ব্যবস্থাপনায় ভেঙে পড়ছে এ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা।
গত কয়েকদিন সরজমিনে হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায় দায়িত্বে ফাঁকি, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ও নানা অনিয়মের কারণে ভেঙে পড়ছে সরাইল হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা। জরুরি বিভাগে মেডিকেল অফিসারের পরিবর্তে নিয়মিত রোগী দেখছেন স্টাফ নার্সরা (ব্রাদার)। ব্রাদার রাজু সকল ধরনের রোগীদের প্রেসক্রাইব করছেন। নিচ্ছেন ভর্তিও। নৈশপ্রহরী মো. নাছির আহত রোগীদের সেলাই করছেন। রোগী বুঝে হাড় ভাঙারও চিকিৎসা দিচ্ছেন। করছেন ব্যান্ডেজ ও প্লাস্টার। দিনে ও রাতে একই চিত্র। আর একটু জটিল বা রক্তযুক্ত রোগী আসলেই রেফার করে দিচ্ছেন জেলা সদর হাসপাতালে। আর দায়িত্বে থাকা মেডিকেল অফিসার নাকে তেল দিয়ে কখনো অফিসে কখনো বাসায় ঘুমোচ্ছেন। চিকিৎসক সংকট চলছে দীর্ঘদিন ধরে। এরপর রয়েছে ডেপুটেশন নামক ব্যাধি। যা সরাইলের মানুষের গলার কাটা। মাত্র ২-৩ জন চিকিৎসক রোগী দেখছেন। কোন দিন একজনকেও সামলাতে হয় সকল রোগী। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে আগত অসুস্থ বৃদ্ধ নারী পুরুষদের পোহাতে হয় দুর্বিষহ কষ্ট। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন চিকিৎসাসেবার জন্য। সুযোগ কাজে লাগায় দালাল চক্র। তারা ফুসলিয়ে গরিব রোগীদের বাগিয়ে নিচ্ছে পছন্দের প্রাইভেট হাসপাতালে। সম্প্রতি ঠিকাদারের দ্বারা শুধু হাসপাতালে ৩০-৪০ লাখ টাকার সংস্কার কাজের নামে হয়েছে লুটপাট। জোড়া তালি ও নিম্নমানের কাজের প্রতিবাদ করেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি স্থানীয় কিছু লোক। সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের সমঝোতায় কাজের নামে লেপছেপ দিয়ে বিল তুলে নিয়েছেন। উপজেলার ৫টি কমিউনিটি মেডিকেল সেন্টারের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজও হয়েছে যেনতেন ভাবে। ক্ষমতার দাপটের কাছে অসহায় সকলেই। এরপর রয়েছে মহল বিশেষের তদবির। আর ওয়ার্ডগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। দুর্গন্ধ! নেই বৈদ্যুতিক পাখা। বাতিও অপর্যাপ্ত। বেসিনে ময়লার স্তূপ। ভ্যাসপা গরমে রাতে বিদ্যুৎ চলে গেলে রোগীরা যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন। টয়লটের অবস্থাও স্যাঁতসেঁতে। হাসপাতালের ভেতরের কোয়ার্টারে গোপনে গড়ে উঠেছে ওষুধের ফার্মেসি। ওই ফার্মেসিগুলো পরিচালনা করছেন স্টাফ নার্সই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) ডা. কাজী মো. আইনুল ইসলাম জরুরি বিভাগে নৈশপ্রহরী ও ব্রাদারদের রোগী দেখার কথা স্বীকার করে বলেন, এরা দেখতে দেখতে দক্ষতা অর্জন করেছে। প্রাথমিক সেবাটা দিতে পারে। চিকিৎসক সংকট। কি করব বলেন? চিকিৎসক সংকটের কারণে গত ৫ বছর ধরে সরাইল হাসপাতালে ১টিও সিজার অপারেশন না হওয়ার কথাও তিনি স্বীকার করেছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের ফাঁকির বিষয়ে ভুক্তভোগী রোগী ও কিছু স্টাফের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, উনারা ৫-৬ দিনই আসেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেক সময় আসেন না। অনেক পড়াশোনা করেছেন। তাই উনাদের লক্ষ্যটা থাকে অনেক উপরে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status