এক্সক্লুসিভ

সিলেটে খেলার মাঠে এবারও পশুর হাটের পাঁয়তারা, উত্তেজনা

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে

১৬ আগস্ট ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৮ পূর্বাহ্ন

ফাইল ছবি

সিলেটে এবারো শাহী ঈদগাহের খেলার মাঠে পশুর হাট বসানোর পাঁয়তারা চলছে। গত ৯ই আগস্ট পশুর হাট না বসানোর জন্য সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিলেও মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ করে বাঁশ এনে ঢোকানো হয়েছে ওই মাঠে। একই সঙ্গে হেলমেট পরা যুবকরাও মাঠে প্রবেশ করে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিলে আইনশৃঙ্ক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছলে ওই যুবকরা বাঁশ মাঠে রেখেই চলে যায়। গেলো কয়েক বছর ধরে ওই এলাকার মানুষের আপত্তি সত্ত্বেও সদর উপজেলার প্রশাসন শাহী ঈদগাহের খেলার মাঠে পশুর হাটের অনুমতি দিয়েছিল। আর এতে ভূমিকা পালন করেছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশফাক আহমদ। এবার আগে থেকেই বিতর্ক শুরু হওয়ায় প্রশাসন এখন পর্যন্ত এই মাঠকে হাট হিসেবে ঘোষণা করেনি। এদিকে, আশফাক আহমদ গতকাল এক বিবৃতিতে দাবি করেছেন- ওই মাঠে হাট বসানোতে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। নগরীর শাহী ঈদগাহ খেলার মাঠের নামকরণ করা হয়েছে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম। এক দশক আগেও এই মাঠ ছিল নগরীর বৃহত্তর শাহী ঈদগাহ এলাকাবাসীর একমাত্র খেলার মাঠ। প্রায় ১০ বছর ধরে এই মাঠ পরিণত হয়েছে মেলা ও হাটের মাঠে। প্রতি বছর মাঠে মেলার আয়োজন করা হয়। পাশাপাশি ঈদুল আজহা এলেই বসানো হয় পশুর হাট। সিলেট নগরীর গা-ঘেষা ওই মাঠ সদর উপজেলার আওতাভুক্ত হওয়ায় এখানে কর্তৃত্ব খাটে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদের। তার নির্দেশেই এই মাঠে মেলা এবং পশুর হাট বসে বলে দাবি সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতাদের। আর ওই মাঠে হাট বসানোর কারণে প্রতি বছর মারামারি হয়। পাশাপাশি মাঠও ভরে গেছে নানা জঞ্জালে। ইট-সুরকি দখলে থাকায় এখন খেলার উপযোগী নয় ওই মাঠ। এ নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যেও ক্ষোভের অন্ত নেই। এই অবস্থায় গত ৯ই আগস্ট সিলেট নগরীর শাহী ঈদগাহ সংলগ্ন সদর উপজেলা খেলার মাঠে (শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম) কোনো ধরনের মেলা ও পশুর হাট না বসানোর দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা। স্মারকলিপিতে তারা উল্লেখ করেন, সিলেট মহানগরীর শাহী ঈদগাহ সংলগ্ন খেলার মাঠ। কতিপয় স্বার্থান্বেষী মহল সারাবছর একের পর এক মেলা ও ঈদুল আজহার সময় কোরবানির পশুর হাট বসিয়ে নিজেরা ফায়দা হাসিল করে। যার ফলে দীর্ঘসময় ছাত্র ও যুবসমাজ খেলাধুলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। মেলা আয়োজন ও পশুর হাট বসানোর ফলে খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে ওঠে মাঠটি। স্মারকলিপিতে বলা হয়, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে স্বার্থান্বেষী মহলটি আবারো এই খেলার মাঠে পশুর হাট বসানোর পাঁয়তারা শুরু করেছে। নেতৃবৃন্দ জোর দাবি জানান, এই খেলার মাঠে আগামীতে কোনোধরনের মেলা ও পশুর হাট যেন  বসানোর সুযোগ দেয়া না হয়। সিলেট মহানগরী ও সদর উপজেলাবাসীর পক্ষে স্মারকলিপিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে    পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ১
উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিক, সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য মোহাম্মদ শাহনূর, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক সাইফুল আলম রুহেল, সিলেট জেলা জজ আদালতের এপিপি নূরে আলম সিরাজী, সিলেট অনলাইন প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগ নেতা মকসুদ আহমদ, মোগলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হিরণ মিয়া, যুবনেতা কুতুব উদ্দিন প্রমুখ। শাহী ঈদগাহ এলাকার বাসিন্দা ও সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ফয়জুল আনোয়ার জানিয়েছেন- এই মাঠে এখনো হাট বসানোর পাঁয়তারা চলছে। মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ করে হেলমেট পরা যুবকরা বাঁশ নিয়ে মাঠে প্রবেশ করলে এলাকার মানুষ সেখানে ছুটে যান। পরে পুলিশ এলে ওই যুবকরা পালিয়ে যায়। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুজাত আলী রফিক জানিয়েছেন- সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ উপজেলা পরিষদের এক সভায় স্বীকার করেছিলেন মাঠে মেলা ও হাটের আয় বাবদ তার ব্যক্তিগত ফান্ডে ৫০ লাখ টাকা রক্ষিত আছে। এরপর গত তিন বছর তার তত্ত্বাবধানেই এখানে মেলা ও অবৈধ পশুর হাট বসেছে। এ তিন বছরের টাকার কোনো হিসাব নেই। এবারো চেয়ারম্যান আশফাক আহমদের নেতৃত্বে অবৈধভাবে পশুর হাট বসানোর প্রক্রিয়া চলছে বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে- সিলেট মহানগর পুলিশ গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে- সিলেটে এবার ১২টি বৈধ পশুর হাট বসছে। এর মধ্যে রয়েছে- কোতোয়ালি থানার কাজীরবাজার পশুর হাট, জালালাবাদ থানার শিবের বাজার পশুর হাট, কুড়িরগাঁও (ইসলামগঞ্জ বাজার) পশুর হাট, এয়ারপোর্ট থানার সাহেব বাজার সুন্নিয়া হাফিজিয়া দাখিল মাদরাসার মাঠ, দক্ষিণ সুরমা থানার লালাবাজার পশুর হাট, কামালবাজার পশুর হাট, মোগলাবাজার থানার জালালপুর পশুর হাট, হাজীগঞ্জ বাজার, রাখালগঞ্জ বাজার পশুর হাট। পাশাপাশি শাহপরান (র.) থানা এলাকায় আরো ৩টি পশুর হাট বসবে। তবে- শাহী ঈদগাহ পশুর হাটের কোনো নাম পুলিশের তালিকায় নেই। শাহী ঈদগাহস্থ সদর উপজেলা পরিষদের খেলার মাঠ নিয়ে অপপ্রচার এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন সদর উপজেলা পরিষদের একাধিক বারের চেয়ারম্যান আলহাজ আশফাক আহমদ। বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় তিনি বলেন, সদর উপজেলা মাঠটি বর্তমানে শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম নামে নামকরণ করা হয়েছে। কিছু দিন থেকে একটি মহল আমার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ঈর্ষান্বিত হয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। উপজেলা চেয়ারম্যান আশফাক আহমদের নাম ভাঙিয়ে কে বা কারা ষড়যন্ত্রমূলকভাবে পশুর হাট বসানোর পাঁয়তারা করছে। এর সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি বলেন, এবারের ঈদে খেলার মাঠে কোনো পশুর হাট বসবে না। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের উপর একাত্মতা পোষণ  করে পশুর হাট না বসানোর জন্য সবরকমের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status