দেশ বিদেশ

লাউয়াছড়া বন পুড়িয়ে ‘ফলদ বাগান’ ধ্বংস

সাজিদুর রহমান সাজু, কমলগঞ্জ থেকে

১৫ আগস্ট ২০১৮, বুধবার, ১০:১৯ পূর্বাহ্ন

বন্য প্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃৃতি সংরক্ষণ বিভাগের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সংরক্ষিত বন পুড়িয়ে ফলদ বৃক্ষের নতুন বনায়ন করেছে বন বিভাগ। এতে সংরক্ষিত বনের বিশাল বিশাল টিলার নানা প্রজাতির গাছ, বাঁশ ব্যাপক হারে পোড়ানো হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে বন পোড়ানোর আগে বনের ওই টিলাগুলোতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় গাছগাছালি ও হাজার হাজার কালিবাঁশ কেটে বিক্রি করা হয়েছে। গাছ-বাঁশ বিক্রির পর সবুজ বনে আগুন লাগিয়ে বিক্রি করা গাছ ও বাঁশের মুথা পুড়িয়ে তৈরি করা হয়েছে নতুন এ বনায়ন। এতে একদিকে যেমন বনের নানা জীববৈচিত্র্য পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়েছে, অন্যদিকে বনের পশুপাখি হারিয়েছে তাদের নিরাপদ আবাসস্থল। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ১২৫০ হেক্টর আয়তনজুড়েই প্রকৃতি তার সৌন্দর্য ভাণ্ডার অকৃপণভাবে বিতরণ করেছে। এ বনে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা, বিচিত্র রকমের বন্য প্রাণি। লাউয়াছড়া বনে সেগুন, চাপালিশ, আগর, রক্তনসহ মোট ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রকার উভচর প্রাণী, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ ও ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণি রয়েছে। সবুজ এ বনে রয়েছে নানা প্রজাতির উদ্ভিদ। গত মাসের মাঝামাঝি (জুলাই) সময়ে লাউয়াছড়া উদ্যানের বাঘমারা নামক এলাকার কয়েকটি পাহাড়ি টিলায় করা হয়েছে ফলদ বাগান। নতুন ওই ফলদ বাগান করতে গিয়ে ইউনুছ মিয়া নামে স্থানীয় এক শ্রমিক সরদার নিয়োগ করে বন্য প্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃৃতি সংরক্ষণ বিভাগ। অভিযোগ রয়েছে, বনের পশুপাখিদের খাবার নিশ্চিত করতে বনের বাঘমারা এলাকায় প্রায় ১০ হেক্টর টিলাভূমিতে নতুন ফলদ বাগান করতে গিয়ে বন্য প্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃৃতি সংরক্ষণ বিভাগ ধ্বংস করেছে বন বিভাগের সিলভিকালচার রিসার্চ বিভাগের বনায়নকৃত বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও কালিবাঁশ বাগান। নতুন ওই ফলদ বাগান করতে গিয়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পাহাড়ি টিলা পরিষ্কার করার আগে সবুজ বনের পাহাড়ি টিলাগুলোয় থাকা বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য গাছ ও হাজার হাজার কালিবাঁশ কেটে গোপনে বিক্রি করে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের নিজেদের পকেট ভারি করেছেন। সরজমিন দেখা যায়, জাতীয় উদ্যানের ইকো পর্যটন ব্যবস্থাপনাধীন সংরক্ষিত বনে বন বিভাগের সিলভিকালচার রিসার্চ বিভাগের বনায়নকৃত গাছ ও বাঁশ বাগান পোড়ানো হলেও পাচারকৃত গাছ ও বাঁশের মুথাগুলো পাচারের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আলাপকালে লাউয়াছড়া বনবিট কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বনে বনায়ন করতে গেলে বন পোড়াতে হয়। বন না পুড়িয়ে ঝোপ-জঙ্গলে তো আর বনায়ন করা যায় না। বন পোড়ালে জীববৈচিত্র্য পুড়বে- এটাই স্বাভাবিক। এটা তো আর ইচ্ছাকৃত করা হয়নি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো আলামত নষ্টও করা হয়নি। পাচার করাও হয়নি কোনো গাছ-বাঁশ। এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে আলাপকালে বন্য প্রাণি ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন সংরক্ষক আবু মুসা শামসুল মোহিত গাছ-বাঁশ পাচারের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বনের পশুপাখিদের খাবার নিশ্চিত করতে বনের বাঘমারা এলাকায় প্রায় ১০ হেক্টর টিলাভূমির ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার করে নানা প্রজাতির ১৬ হাজার ফলদ গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। সংরক্ষিত বনের যে টিলাগুলোতে নতুন ফলদ বাগান করা হয়েছে সেখানে কোনো গাছগাছালি কিংবা বাঁশ বাগান ছিল না। যেখানে গাছগাছালি ছিল না সেখানে গাছ-বাঁশ পাচারের প্রশ্নই ওঠে না।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status