দেশ বিদেশ

এবার দেশে ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসব চিকিৎসাসেবা

স্টাফ রিপোর্টার

১৩ আগস্ট ২০১৮, সোমবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

দেশে প্রথমবারের মতো ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসব চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করেছে রাজধানীর বেসরকারি ইমপালস হাসপাতাল। বর্তমানে বিশ্বে ইপিডুরাল পদ্ধতিতে ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসব করা হয়। এই চিকিৎসাসেবা পেতে খরচ পড়বে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। গতকাল তেজগাঁও শিল্প এলাকায় হাসপাতালের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক সেমিনারে হাসপাতাল কর্তৃৃপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে। সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাঈদ বলেছেন, দেশে মাতৃত্ব নিয়ে শোষণে আছি। সিজারিয়ান পদ্ধতিতে বাচ্চা প্রসবে রোগীর ও চিকিৎসকের ইচ্ছা রয়েছে। তবে রোগীর ইচ্ছার চেয়ে চিকিৎসকদের প্ররোচনাও কম নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। প্রযুক্তি এসে মায়েদের দুঃখ-কষ্ট কমিয়ে দিবে। আমাদের মেয়েরা শান্তিপূর্ণ মাতৃত্ব পাবেন। আমরা শান্তিপূর্ণ মাতৃত্ব চাই। পুরুষ ও নারী আজ প্রায় সমান হয়ে গেছে। কন্ট্রাসেপটিভ এসে বলে দিয়েছে নারী আজ কয়টি সন্তান নেবে। তিনি বলেন, প্রকৃতি থেকে যেটা হয় সেটা সুন্দর হয়। মাতৃত্বে যে কষ্ট। মাতৃত্বে এই কষ্ট কেন দিলো? লেবার পেনটা তো বাদ দিতে পারতো প্রকৃতি। সুন্দর কোনো কিছু পেতে হলে ব্যথা দিয়েই পেতে হয়। সেমিনারে অ্যানেসথেসিয়া বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান খন্দকার লাইজু এক প্রবন্ধে বলেন, প্রসব বেদনা যদিও স্বাভাবিক একটি ব্যথা, তবুও এই ব্যথার তীব্রতা বেশি যে এতে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিসাধন হয়। এই ব্যথা সন্তান প্রসবে সামান্য ভূমিকা রাখে। ব্যথা মুক্ত সন্তান প্রসব বিভিন্ন পদ্ধতিতে করা যায়। সঠিকভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এই পদ্ধতিতে মায়ের ও নবজাতকের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। বর্তমানে সারা বিশ্বে ইপিডুরাল পদ্ধতিতে ব্যথামুক্ত সন্তান প্রসব করা হয়। ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৮৪৬ সালের ১৬ই অক্টোবর ইথার ব্যবহারে অবস একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ৮০ ভাগের উপরে ব্যথামুক্ত ডেলিভারিতে আগ্রহী। এটা ইউরোপে ৭০ ভাগ। ভারতে বিভিন্ন হাসপাতাগুলোতে ব্যথামুক্ত ডেলিভারি সিস্টেম চালু আছে। তবে সামগ্রিকভাবে এর ব্যবহার হয় না। খন্দকার লাইজু দাবি করেন বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে কোনো হাসপাতালে ব্যথামুক্ত ডেলিভারি করা হতো।
কিন্তু বেশির ভাগ জায়গায় এর তেমন কোনো প্রভাব নেই। ফলে পরিসংখ্যানও নেই। আদর্শ ব্যথামুক্ত ডেলিভারি কি ধরনের হবে তা তুলে ধরে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, ব্যথামুক্ত ডেলিভারি মাকে দুশ্চিন্তা ও অবসাদ মুক্ত করে একটি সুস্থ শিশু উপহার দেবে। ব্যথা কমানোর জন্য ব্যবহৃত ওষুধ কোনো প্রকারে মায়ের রক্ত থেকে শিশুর রক্তে প্রবাহিত হবে না। সহজ পদ্ধতিতে ব্যথার ওষুধ প্রয়োগ করা। দ্রুত ব্যথা কমানো এবং দীর্ঘ সময় ধরে ব্যথা কম থাকে। স্বাভাবিক জরায়ু চাপের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না। প্রয়োজনে সিজার লাগলে দ্রুত অবস করার ব্যবস্থা থাকে। কেবলমাত্র ব্যথা কম থাকবে কিন্তু কোনো অবস হবে না। প্রয়োজনে হাঁটাহাঁটি করতে পারবে এবং স্বাভাবিক প্রসব প্রক্রিয়ার কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। ডেলিভারির পরে তাৎক্ষণিক ব্রেস্ট ফিডিংয়ে বাচ্চার কোনো সমস্যা হবে না। কি কি পদ্ধতিতে ব্যথা কমানো যায় তা উল্লেখ করে অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান খন্দকার লাইজু বলেন, পুরনো পদ্ধতিতে মনোযোগ ও শাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম, ইয়োগা, ম্যাসেজ, হিটিং প্যাড, ওয়ার্ম বাথ ও টেন্স। আধুনিক পদ্ধতিতে গ্যাস/ ভ্যাপার মাস্ক এর সাহায্যে প্রয়োগ, শিরা ওষুধ প্রয়োগ ও ইপিডুরাল/স্পইনাল পদ্ধতি। গত ২৩ বছরে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এক হাজারের বেশি ব্যথামুক্ত ডেলিভারি করানো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন তিনি। এতে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা ছাড়াই নরমাল ডেলিভারি হয়েছে। মাত্র ১০ ভাগ ক্ষেত্রে সিজারের প্রয়োজন হয়। নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য বাকি ১০ ভাগের ক্ষেত্রে অন্যান্য যন্ত্রপাতি দরকার হয়েছে। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. জহির আল আমিন, নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির, গাইনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নিয়াজ টি পারভীন. ডা. ফারহানা আহম্মদ প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন হাসপাতালের সিইও ডা. দবির আহমেদ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status