এক্সক্লুসিভ

নাব্য সংকট

মাওয়া রুটে ভোগান্তিতে ২১ জেলার যাত্রী

সিরাজুস সালেকিন, মাওয়া থেকে ফিরে

১২ আগস্ট ২০১৮, রবিবার, ৯:৪১ পূর্বাহ্ন

শুক্রবার দুপুর আড়াইটার দিকে মাওয়া ঘাট থেকে ফেরিতে কাঠালবাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব জমিলা খাতুন। ঢাকা থেকে ডাক্তার দেখিয়ে ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু মাঝ রাস্তায় এসে লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে আটকে যায় রো রো ফেরি এনায়েতপুরী। সেখানেই প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে থাকা। নানা তৎপরতার পর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সহায়তায় ফেরিটি উদ্ধার হয়। গত শুক্রবার সরজমিন ঘটনাস্থলে দেখা যায়, নাব্য সংকটের কারণে একের পর এক ফেরি লৌহজং চ্যানেলে আটকে যাচ্ছে। শুক্রবার এনায়েতপুরীর পেছনে আরো ছয় থেকে সাতটি ফেরি আটকে যায়। প্রতিটি ফেরি যানবাহনে ভরা ছিল।

যাত্রীদের বেশিরভাগ ঈদ উপলক্ষে বাড়ি ফিরছিলেন। কয়েকটি ফেরিতে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সও দেখা গেছে। ডাম ফেরি লেংটিংয়ের স্টাফ অহিদুল জানান, মাওয়া রুট থেকে দক্ষিণের প্রায় ২১ জেলার মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করে। গত এক সপ্তাহ লৌহজং টার্নিং পয়েন্টে এসে ফেরি আটকে যাচ্ছে। মাঝ নদীতে প্রচণ্ড গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ফেরির অপেক্ষায় দুই পাড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সামনে ঈদে ভোগান্তি আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। শুক্রবার সকাল ৮টায় একই পয়েন্টে আটকা পড়ে রো রো ফেরি শাহপরাণ।

প্রায় তিন ঘণ্টা আটকে চেষ্টার পর বিআইডব্লিউটিএ তাদের টাগ বোট দিয়ে ফেরিটিকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা জানান, শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে ওই পয়েন্ট পানির সর্বনিম্ন গভীরতা ছিল ৭ থেকে ৮ ফুট। কিন্তু বেলা ৩টার দিকে তিন ঘণ্টার ব্যবধানে তা কমে দাঁড়ায় ৬ ফুটে। ওই রুটে চলাচলকারী ফেরিগুলোর অধিকাংশই পুরনো। কিছু ফেরি বৃটিশ আমলের। যে কারণে আন্ডার লোড নিয়ে চলতে গিয়েও তারা আটকা পড়ছে। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, বর্ষার কারণে পাড় ভেঙে বেশি পরিমাণে পলি আসছে। আবার উজান থেকেও পলি আসছে। ড্রেজিং করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আবার চ্যানেল ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে মাঝেমধ্যেই ফেরি আটকে যাচ্ছে। আটকে যাওয়া ফেরি টাগ বোট উদ্ধার করতে হচ্ছে।

সময়মতো টাগ বোট পাওয়া না যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছে ফেরির যাত্রীরা। অন্যদিকে বিআইডব্লিউটিসি উদ্ধারকারী টাগবোটের জ্বালানি সরবরাহের কথা থাকলেও তারা সঠিকভাবে তা করছে না। বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর এম মোজাম্মেল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাতটি ড্রেজার দিয়ে চ্যানেলটি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চলছে। আশা করছি খুব দ্রুতই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। তবুও পলি জমার হার বেড়ে গেলে বিকল্প হিসেবে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুট দিয়ে গাড়ি চলাচলের পরামর্শ দেয়া হবে। বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, মাওয়া-কাঠালবাড়ী সরাসরি রুটে ৯ দশমিক ৫ কিলোমিটার। কিন্তু পদ্মা সেতু প্রকল্পের কার্যক্রমের কারণে বিকল্প লৌহজং চ্যানেল দিয়ে ফেরি চলাচল করছে। এতে দূরত্ব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। এ চ্যানেলে স্রোতের গতিবেগ ৭-৮ নটিক্যাল মাইল বা ১৫ কিলোমিটার।

স্রোতের কারণে ড্রেজার ও ড্রেজারের সঙ্গে থাকা পাইপ ধরে রাখা যাচ্ছে না। এছাড়া পদ্মা সেতু প্রকল্পের বড় আকারের (৩২ ইঞ্জি ডায়াগ্রামের) ড্রেজার মেশিন দিয়ে খননের উদ্যোগ নিয়েছিল বিআইডব্লিউটিএ। তবে খনন কাজের দর নিয়ে সমঝোতায় না হওয়া বিআইডব্লিউটিএর নিজস্ব ড্রেজার দিয়েই খনন কাজ চালিয়ে যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২রা আগস্ট একটি ফেরির ধাক্কায় ২৬ ইঞ্চি ডায়াগ্রামের একটি ড্রেজারের ব্লেড ভেঙে যায়।

ফলে লৌহজংয়ের সোজাসুজি চ্যানেলে ড্রেজিংয়ে বেগ পেতে হচ্ছে বিআইডব্লিউটিএকে। বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. ছাইদুর রহমান বলেন, এ রুট সচল রাখতে ২০১৪-২০১৫ সালে ৮ থেকে ৯ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণের প্রয়োজন হতো। এখন তা বেড়ে ৩০ থেকে ৩২ লাখে দাঁড়িয়েছে। নদীর পাড় ভেঙে পড়ায় বেশি সমস্যা হচ্ছে। আমরা ৭টি ড্রেজার দিয়ে খনন করছি। আমাদের প্রায় ১০০ জনবল কাজ করছে। প্রতিদিনই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দাঁড়িয়ে থেকে ড্রেজিং কার্যক্রম মনিটর করছেন। গত পহেলা জুন থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে। আশা করছি খুব শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status