দেশ বিদেশ
প্রযুক্তির নতুন ছোঁয়া ডিঙ্গি লাইফ
কাজী সোহাগ
১১ আগস্ট ২০১৮, শনিবার, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন
বিশ্বের সবচেয়ে বড় সার্চ ইঞ্জিনখ্যাত গুগলের অনেকটা বিকল্প হিসেবে চালু হয়েছে ডিঙ্গি লাইফ। তবে এটা কেবল বাংলাদেশের জন্যই। এরইমধ্যে ৮১ হাজার ব্যবহারকারী এ থেকে সুবিধা পাচ্ছেন। ঢাকা শহরের পূর্ণাঙ্গ ও বিস্তারিত মানচিত্র, গাড়ি চালানোর জন্য প্রতিটি সড়কের সুনির্দিষ্ট গতিপথসহ ট্র্যাকিং সার্ভিস ছাড়াও যুক্ত হয়েছে নতুন ধরনের কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবার তথ্য। নতুন এই সেবাই ‘ডিঙ্গি লাইফ’কে দিয়েছে অনন্য বৈচিত্র্য। এরই মধ্যে এই প্রতিষ্ঠানের বিশেষায়িত অ্যাপ্লিকেশন ‘ডিঙ্গি লাইফ’ যুক্ত হয়েছে গুগল প্লে স্টোর এবং আইফোনের অ্যাপল স্টোরে। ২১শে ফেব্রুয়ারি অ্যাপটি অবমুক্ত করা হয়। এই অ্যাপের মাধ্যমে রাস্তার ম্যাপসহ ট্রাফিক আপডেট এবং দূরত্ব জানা যাবে। দেড় হাজার ট্যাক্সি ক্যাবসহ যানবাহনের ডাটা নিয়ে ম্যাপিং জোন তৈরি করা হয়েছে। এই অ্যাপে জানা যাবে, ঢাকা সিটি বাস’ এর মাধ্যমে কোন রুটে কোন বাস, ভাড়া কত, দূরত্ব কতটুকু, পৌঁছাতে কত সময় লাগবে। আন্তঃনগর ট্রেনের স্টেশন, লোকেশন, ভাড়ার তথ্যও থাকবে এখানে। এছাড়াও রয়েছে নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটানোর উপায়। গুগল সেবায় পাওয়া যায় না, এমন বৈচিত্র্যময় সেবার মধ্যে আছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, পানি, গ্যাস, স্যানিটারি মিস্ত্রি এবং কাঠমিস্ত্রিদের ছবি ও অন্যান্য তথ্যসহ ফোন নম্বর। বিশ্বের অনেক দেশই গুগলনির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে তাদের স্থানীয়ভাবে অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার শুরু করেছে। বাংলাদেশে এ ধরনের একটি স্থানীয় অ্যাপ্লিকেশনের চাহিদা প্রকট হয়ে উঠছিল। সেই চাহিদা অবশেষে পূরণ করেছে বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান ডিঙ্গি টেকনোলজিস লিমিটেড। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তিন প্রকৌশলী তৈরি করেছেন বিকল্প গুগল ম্যাপ। এই ম্যাপ দিয়ে যে কেউ পথের নির্দেশনা পাবেন। ঢাকা শহরের প্রায় ৮০ শতাংশ বাসার ঠিকানা স্থান পেয়েছে এই ম্যাপে। বৃহস্পতিবার স্থানীয় একটি হোটেলে টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রতিবেদকদের সংগঠন ‘টিআরএনবি’ আয়োজিত কর্মশালায় বিশেষায়িত অ্যপ্লিকেশন ‘ডিঙ্গি লাইফ’ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিঙ্গি টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সজল কুমার হাজরা। তার সঙ্গে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুস এবং জনপ্রিয় রিদমিক কি-বোর্ডের নির্মাতা শামীম হাসনাত। বক্তব্য রাখেন টিআরএনবি সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সজল এবং সাধারণ সম্পাদক সমীর কুমার দে। উদ্যোক্তারা বলছেন, স্থানীয়ভাবে তৈরি হওয়ায় গুগল ম্যাপের উপর নির্ভরতা কমবে এবং দেশের অর্থ সাশ্রয় হবে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ টাকা গুগলকে দিতে হয় তাদের সেবা পাওয়ার জন্য। এখন সেটা আর দিতে হবে না। এ প্রসঙ্গে সজল হাজরা জানান, ‘ডিঙ্গি লাইফ’ প্রথম পর্যায়ে ঢাকাবাসীর জন্য তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ধাপে ধাপে এর বিস্তৃতি বাড়বে। এই অ্যাপ্লিকেশনে পরিচিত ও সহজ বাংলায় ঢাকা মহানগরী ও ঢাকা জেলার পুরো মানচিত্র তৈরি হয়েছে। আর ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন সড়কের গতিপথও বাংলায় তথ্যসহ সন্নিবেশিত আছে। পাওয়া যাচ্ছে ঢাকার বিভিন্ন সড়কের যানজটের লাইভ আপডেটও। এই অ্যাপে গুগল ম্যাপের চেয়ে ঢাকার অনেক বেশি অবস্থান, অলিগলির গতিপথ এবং এলাকা অনুযায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার তথ্য রয়েছে। ফলে ঢাকার গলিপথে যেতেও আপনার নির্ভরযোগ্য সহায়ক হবে ‘ডিঙ্গি লাইফ’ সন্দেহ নেই। প্রতিষ্ঠানের এমডি আরো জানান, অ্যাপটিকে সমৃদ্ধ করতে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার মিস্ত্রিদের পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেস তৈরির কাজ এখনো চলছে। ভবিষ্যতে এই অ্যাপে পাওয়া যাবে ঢাকার সিটি সার্ভিসের বাসের ‘লাইভ আপডেট’। অর্থাৎ একটি বাস সড়কে চলার সময়ে নির্ধারিত রুটের কতটি স্টপেজে থামছে, গাড়িতে কী পরিমাণ যাত্রী আছে, তার তথ্য আপনি স্মার্টফোন থেকে পেয়ে যাবেন ‘ডিঙ্গি লাইফে’র মাধ্যমে। এছাড়া ভবিষ্যতে এই অ্যাপ ব্যবহার করে ঢাকার কোন কাঁচাবাজার ও মুদি দোকানে কী ধরনের পণ্য পাওয়া যাচ্ছে, দাম কত তা যেমন জানা যাবে, একই সঙ্গে বাজার থেকে পণ্য কেনার সুযোগও পাওয়া যাবে। সজল হাজরা জানান, তারা বর্তমানে ইনডোর ম্যাপ নিয়েও কাজ করছেন। অর্থাৎ কেউ যদি যমুনা ফিউচার পার্ক, ঢাকা চিড়িয়াখানা বা অন্য কোথাও হারিয়ে যান বা পথ খুঁজে না পান সেক্ষেত্রে সহায়তা করবে ডিঙ্গি লাইফ।