এক্সক্লুসিভ

বন্ধ হচ্ছে না অবৈধ পাথর উত্তোলন

সাবিবুর রহমান সাবিব, পঞ্চগড় থেকে

১১ আগস্ট ২০১৮, শনিবার, ৭:৫৩ পূর্বাহ্ন

ভূমিকম্পে ভূমিধস ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি বেড়ে চললেও এখনো পঞ্চগড় জেলার বিভিন্ন স্থানে ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও নিয়মিত অভিযানের অভাবে এসব মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না বলে মনে করা হচ্ছে। অনেক গভীর থেকে উন্মুক্ত ও অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের জন্য সমতল ভূমির পাশাপাশি নদীর নিচে বিশালাকার শূন্যতার সৃষ্টি হচ্ছে। কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে উন্মুক্ত ও অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলন করার কারণে প্রতি বছর শত শত একর জমিও অনাবাদী হয়ে পড়ছে। এভাবে পাথর উত্তোলনের কারণে অনেক এলাকার ভূমিধস ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ার পাশাপাশি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা বাড়লেও শুধু আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে উত্তোলনকারী ও সুবিধাভোগী লোকজন। মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলনের জন্য হাজার হাজার শ্রমিক কাজের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সরকারি জমি থেকে পাথর উত্তোলন করা হলেও সরকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না। অল্প খরচে ব্যাপক লাভ হওয়ায় সুযোগ সন্ধানী নানা পর্যায়ের লোকজন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য ও রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের ম্যানেজ করে দীর্ঘদিন থেকে সদর উপজেলার মীরগড়, সাতমেরা ও তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুরসহ শালবাহানের বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে প্রকাশ্যে বা রাতের আঁধারে পাথর উত্তোলন করছে। ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধের জন্য গত ৩১শে জুলাই মঙ্গলবার পঞ্চগড় পাথর বালি ও ভাসা কাঠ উত্তোলনকারী শ্রমিক ইউনিয়ন জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। স্মারকলিপিতে বলা হয় ধাক্কামারা ইউনিয়নের মীরগড় এলাকার দিপু মিয়া, জুয়েল, দুলাল, মুন্না, সাদ্দাম, রাশেদ, আরমান, বাবু, মুন, মামুন, সুবা, জুয়েল, কাবুল, সুমন, সৈয়দ, সফিকুল, রাজু, জাহেদার ও আমিনুল ১৮টি ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী থেকে নিয়মিতভাবে পাথর উত্তোলন করছে। এতে মীরগড় এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকার ৫০০০ হাজারের বেশি শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এছাড়া তেঁতুলিয়ার ভজনপুর ও শালবাহানের ডাহুক এলাকায় দুশতাধিক ড্রেজার ও বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে, সূত্র মতে, প্রতি মেশিনে কম পক্ষে ৫০ হাজার টাকার পাথর উত্তোলন করা যায়। এ হিসেবে ওই এলাকায় ২০০ মেশিনে প্রতি রাতে এক কোটি টাকার পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। সূত্রটি জানায়, ভজনপুরের বক্কর, এশারুল ও আলমগীর এবং শালবাহানের শেখ ফরিদ ও রানা লাইনম্যান ও ব্যবসায়ী হিসেবে অবৈধভাবে উত্তোলনকৃত পাথর বৈধ করার জন্য প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা চুক্তিকৃত লোকজনদের কাছে সরবারাহ করে। মীরগড় এলাকার মেশিন মালিকরাও একই নিয়মে টাকা দিয়ে সবাইকে ম্যানেজ করছে।  
এদিকে, সাম্প্রতিক বিভিন্ন সময়ে পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও বোদা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে যৌথ অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু বোমা মেশিন ধ্বংস করা হয়েছে। মামলাও হয়েছে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। গত ১৬ই জুলাই সদর উপজেলার ধাক্কামারা ইউনিয়নের মীরগড় এলাকায় করতোয়া নদীতে পাথর তোলার অপরাধে ১৪টি নিষিদ্ধ বোমা মেশিন ধ্বংস করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের খবর পেয়ে আগেই সটকে পড়ছে পাথর উত্তোলনকারী ও ব্যবসায়ীরা। প্রশাসনের নজরদারি ও অভিযানের পরও বন্ধ হচ্ছেনা নিষিদ্ধ বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন। এভাবে চলতে থাকলে ভূমিকম্প অথবা ভারি বৃষ্টিপাত হলে ভয়াবহ ভূমিধ্বসের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এহেতেশাম রেজা বলেন, সদরের মধ্যে সাতমেরা ও ধাক্কামারা ইউনিয়নের করতোয়া নদী থেকে বোমা মেশিন দিয়ে পাথর উত্তোলন করার অপরাধে আমরা বেশ কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেছি। অনেক মেশিন ধ্বংস করা হয়েছে। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। খবর পাওয়ামাত্রই আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। আমরা বোমা মেশিন মালিকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি।  
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status