অনলাইন

ড. শহিদুল আলমের মুক্তি চেয়ে নোম চমস্কিসহ বিশ্ববরেণ্য বুদ্ধিজীবীদের বিবৃতি

অনলাইন ডেস্ক

১০ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ৫:৫১ পূর্বাহ্ন

দৃক ফটো গ্যালারি ও পাঠশালার প্রতিষ্ঠাতা ও বিশ্বনন্দিত আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলমকে নির্যাতনের নিন্দা ও তাঁর মুক্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছেন মার্কিন ভাষাবিদ ও রাজনীতি বিশ্লেষক নোম চমস্কিসহ বিশ্ববরেণ্য বুদ্ধিজীবীরা। শুক্রবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২৫ লেখক-সাংবাদিক-অ্যাকাডেমিশিয়ানের এ বিবৃতি প্রকাশিত হয়।

বিবৃতিতে এমআইটির প্রফেসর এমিরেটাস নোম চমস্কি ছাড়াও লাহোর/হুস্টোন-এর লেখক বাপসি সিদ্ধা, পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী ফটোসাংবাদিক প্যাট্রিক ফ্যারেল, ম্যারি রিচার্ডসন বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাসের অধ্যাপক আয়েশা জালাল, যুক্তরাজ্যর বাথ স্পা বিশ্ববিদ্যালয়ের সালিমা হাশমি, ফ্রেন্ড অব বাংলাদেশ পুরস্কার বিজয়ী কবি ড. আব্দুল হামিদ স্বাক্ষর করেছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট ইউনিফর্মহীন বেশ কয়েকজন গোয়েন্দা পুলিশ শহিদুল আলমকে তুলে নিয়ে যায়। তারা সিসিটিভি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে ও প্রত্যক্ষদর্শীদের মোবাইল জব্দ করে। টানতে টানতে শহিদুল আলমকে পুলিশ ভ্যানে তোলে। পরের দিনই তাকে আদালতে নেওয়ার সময় দেখা যায় হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে তার। শহিদুল শারীরিক নিপীড়নের অভিযোগ করেন। সঙ্গে থাকা এক সহজনকে উদ্ধৃত করে বিবৃতিতে বলা হয়, তার রক্তাক্ত পোশাক ধুয়ে নতুন করে তাকে পড়ানো হয়। বিবৃতিদাতারা বলেন, আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও সংবাদমাধ্যমে কর্মরত শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, লেখক, শিল্পী ও আলোকচিত্রীরা বিশিষ্ট ফটোসাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমকে আটক ও নিপীড়নের তীব্র নিন্দা এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে তার আশু মুক্তির আহ্বান জানাই।

বিবৃতিতে বলা হয়, গ্রেফতারের আগে আল-জাজিরাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন শহিদুল আলম। সাক্ষাৎকারে তিনি নিরাপদ সড়কের দাবিতে করা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় আক্রান্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। সে সময় তার ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়। ১১৫ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আহত হন অন্তত আরও ৫ সাংবাদিক। আল-জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শহিদুল আলম বলেন, ধারালো অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালালেও পুলিশ কিছু বলেনি। বরং তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, আল-জাজিরাকে এসব বলার কারণেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বলা হয়, বিভিন্ন মিডিয়ায় মিথ্যা ও উসকানিমূলক তথ্য দেওয়ার জন্য তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

বিবৃতিতে শিক্ষাবিদরা বলেন, শহিদুলকে গ্রেফতারের ঘটনা বাংলাদেশে ভিন্নমত দমন প্রচেষ্টা জোরালো হওয়ার একটি উদাহরণ, অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রেও এমন প্রচেষ্টা দৃশ্যমান। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে সাতদিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন। পরে অবশ্য এটি বাতিল করে তাকে হাসপাতলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে তিনি এখনও ডিবি পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, তার মতো একজন বিশিষ্ট বাংলাদেশি, যিনি শিল্প অবদানে সর্বোচ্চ পুরস্কার শিল্পকলা পদক পেয়েছেন, তার সঙ্গে এমন আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। বিবৃতিতে শহিদুলকে ‘বৈশ্বিকভাবে সুপরিচিত একজন মানবাধিকারকর্মী’ উল্লেখ করে বলা হয়, দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের পক্ষে সারা বিশ্বে তিনি তথ্য সংগ্রহ এবং মানবাধিকারের পক্ষে লড়াই করে গেছেন। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, তিনি সান্ডারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অতিথি অধ্যাপক ও রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সম্মানিত ফেলো। ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো জুরির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। লাইফ ম্যাগাজিনের ছবি বিষয়ক সম্পাদক জন মরিস শহিদুল আলমের লেখা ‘মাই জার্নি এস অ্যা উইটনেস’কে ‘কোনও ফটোগ্রাফারের লেখা সবচেয়ে গুরুত্বপূণ বই’ আখ্যা দিয়েছেন।

বিবৃতিতে শহিদুল আলমের বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ তুলে নিয়ে তার সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা এবং অবিলম্বে তাকে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কর্তৃক তার বাড়ির সম্পদ নষ্টের ঘটনা তদন্তের দাবি জানানো হয়। বিবৃতিদাতারা বাকস্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক আইন পরিবর্তন এবং শিশুসহ তরুণ আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে আরও সংযত আচরণের পরামর্শ দিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেছেন, রাবার বুলেট বা টিয়ার গ্যাস ব্যবহার না করে আগে যেভাবে সামাল দেওয়া হচ্ছিলো সেই পদক্ষেপ বজায় রাখা জরুরি। একইসঙ্গে সরকার সংশ্লিষ্টতা থাকার কারণে কোনও হামলাকারী যেন বেঁচে না যায় সেটাও লক্ষ্য রাখা জরুরি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status