প্রথম পাতা

শহিদুলকে নির্যাতন করা হয়েছে কিনা পরীক্ষার নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার

১০ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১৭ পূর্বাহ্ন

খ্যাতিমান আলোকচিত্রী ও দৃক গ্যালারির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলমকে রিমান্ডে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে কি-না তা পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে শহিদুল আলমের ওই স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন আগামী সোমবারের মধ্যে সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালতে জমা দিতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিবকে এ আদেশ বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে আদেশে। বিচারপতি সৈয়দ মো. দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল শুনানি নিয়ে এ আদেশ দেন। আদালতে শহিদুল আলমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারা হোসেন। এ সময় শহিদুলের পক্ষে আরো উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, ড. শাহদীন মালিক, ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়ুয়া, তানিম হোসেইন শাওন প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ ও অমিত তালুকদার। মঙ্গলবার হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী শহিদুল আলমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন গতকাল আদালতে জমা দেয়া হয়। গতকাল আদেশ শেষে আইনজীবী সারা হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন-২০১৩’ এর ২ (৬) ধারা  অনুযায়ী শহিদুল আলমকে রিমান্ডে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে কি-না তা পরীক্ষা করে সোমবারের মধ্যে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’  

এদিকে শহিদুল আলমকে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠাতে হাইকোর্টের দেয়া আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল আবেদনের শুনানি আগামী ১৩ই আগস্ট পর্যন্ত মুলতবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গতকাল দুপুরে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে  চার বিচারপতির আপিল বিভাগ বিষয়টি শুনানি না করে স্ট্যান্ডওভার (মুলতবি) রাখেন। আইনজীবী সারা হোসেন দুপুর ১টার কিছু পরে আপিল বিভাগের আদেশ এবং শহিদুল আলমের স্বাস্থ্য প্রতিবেদনের বিষয়টি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে অবহিত করেন। এ সময় আদালত বলেন, ‘রিপোর্ট আমরা দেখলাম। রিপোর্ট তো ভালো।’ শুনানিতে সারা হোসেন বলেন, নির্যাতনের দু’টি দিক আছে- একটি শারীরিক একটি মানসিক। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের ২(৬) ধারায় ‘নির্যাতন’ এর অর্থ কষ্ট হয় এমন ধরনের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনকে বোঝায়। এজন্য আমরা তার মানসিক অবস্থাও পরীক্ষার আবেদন জানাই।’ শুনানিতে সারা হোসেন বলেন, স্বাস্থ্য প্রতিবেদনে চারজন ডাক্তারের নাম ও পদবি দেয়া আছে। তারা যার যার অবস্থান থেকে বিশেষজ্ঞ। কিন্তু তারা কেউই সাইকোলজিক্যাল বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন। বেশকিছু শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু কোন মানসিক পরীক্ষা করা হয়নি। এখন সাইকোলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য একজন সাইকোলজিস্ট প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, ‘চিকিৎসকদের প্রতিবেদনের সঙ্গে আলাদা কোনো ফাইন্ডিং নেই। উনার (শহিদুল আলম) মুখে ঘুষি মারা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। কিন্তু এ ধরনের কিছু প্রতিবেদনে আসেনি। রিমান্ড শুনানির দিন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক বলেছেন, ‘উভয়ের বক্তব্য শুনলাম।’ কিন্তু তিনি কোনো বক্তব্য লিপিবদ্ধ করেননি। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আইনজীবী, গণমাধ্যমকর্মী, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। সবার সামনেই তিনি (শহিদুল আলম) বলেছেন। এখন উনি (সংশ্লিষ্ট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট) যদি অস্বীকার করেন তাহলে কিছু করার নেই। আমাদের কথা হলো ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে যা উনি (শহিদুল আলম) বলেছেন তা তাৎক্ষণিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হয়নি।’ সারা হোসেন বলেন, রিমান্ড বিষয়ে আইনে বলা আছে, ম্যাজিস্ট্রেটকে অবশ্যই সন্তোষ্ট হতে হবে যে রিমান্ড কেন প্রয়োজন এবং ২৪ ঘণ্টার বেশি কেন প্রয়োজন। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আদালতের উদ্দেশে সারা হোসেন বলেন, আমাদের বেশি কিছু চাওয়ার নেই। যেভাবে রিমান্ড হয়েছে সেটি বিধিসম্মতভাবে হয়নি।

শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রিমান্ডের বিষয়ে ফৌজদারি কার্যবিধিতে আলাদা ফোরাম আছে। সেখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা আছে। কিন্তু তারা যে বিষয়ে রিট করেছেন সেটি এখানে চলে না। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে মামলা হয়েছে। এই পিটিশনটি টোটালি মিসকনসেপ্ট রিট। এটিকে তারা হেভিয়াস কর্পাস বলতে চেয়েছেন। কিভাবে তারা এই রিমান্ড চ্যালেঞ্জ করেছেন? অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উনারা তো রিটে বলেননি যে, তিনি (শহিদুল আলম) মানসিকভাবে অসুস্থ। যদি এ বিষয়টি উল্লেখ করা হতো তাহলে তো তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা অন্যরকমভাবে করার ব্যবস্থা নেয়া হতো।  শহিদুল আলমের আইনজীবীদের বক্তব্য খণ্ডন করে এটর্নি জেনারেল আরো বলেন, একজনকে মারধর করা হলো তার তো কিছু চিহ্ন থাকবে। কিন্তু সেটিও ছিল না। আমার মতে এই রিট গ্রহণযোগ্য ও চলমান হতে পারে না। এটর্নি জেনারেলের বক্তব্য শেষে সারা হোসেন আবারো বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, তাকে (শহিদুল আলম) চোখ বেঁধে নেয়া হয়েছে। হ্যান্ডকাফ পরানো হয়েছে। মুখে ঘুষি মারা হয়েছে। তাকে কোনো টর্চার করা হয়নি- এ ধরনের কোনো তথ্য-প্রমাণ তারা দিতে পারেনি। উভয়পক্ষের বক্তব্য শুনে বিকালে আদেশ দেন আদালত।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status