শেষের পাতা

দ্রুতই পরিবর্তন হবে: ড. কামাল

স্টাফ রিপোর্টার

১০ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন

দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার দ্রুতই পরিবর্তন হবে বলে মন্তব্য করেছেন সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। গতকাল বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া-এর আয়োজনে ‘কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দেশের মালিক জনগণের করণীয়’- শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ১৯৮৯ সালে এরশাদ সরকারের আমলে বৃটিশ মন্ত্রী আমাকে বলেন- তোমার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে এসেছি। 

তিনি বললেন- আরো ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকবেন। আমি তখন বললাম, আমি তো তাকে ১৫ সপ্তাহও ক্ষমতায় দেখি না। তখন সেপ্টেম্বর মাস ছিল। আল্লাহ্‌র রহমতে ১৫ সপ্তাহের মধ্যেই আমরা মুক্ত হলাম। ১৯৯১ সালে আমি লন্ডনে গেলে বৃটিশ ফরেন মিনিস্টার আমাকে দেখে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে বললেন- তুমি কিভাবে ভবিষ্যদ্বাণী দিলে- ১৫ সপ্তাহও এরশাদ ক্ষমতায় থাকবে না। আর সেটাই হলো! তখন মনে মনে হেসে বললাম, মনের জোরে বলেছিলাম। ড. কামাল বলেন, বাঙালিদের মধ্যে একটা ব্যাপার আছে। অন্যায় যখন সহ্যসীমা ছাড়িয়ে যায় তখন আমরা দাঁড়িয়ে যাই যে, আর মেনে নেয়া যায় না। পরিবর্তন আনতে হবে। এটা একবার না। বার বার আমরা প্রমাণ করেছি। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি বলে পেরেছি। সেটা সেই আশির দশকেও পেরেছি। তার আগেও পেরেছি। এখনো পারার মতো সেই অবস্থা আছে।

আমরা যদি সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে চেষ্টা করি তাহলে হবে। একবার নয়, বহুবার পরিবর্তন হয়েছে। ইনশাআল্লাহ্‌, আবার হবে এবং দ্রুতই হবে। তিনি বলেন, কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া হবে- এই নামটা বলার দরকার নেই। কিসের কামাল হোসেনের নেতৃত্ব। আপনি নিজেই একটা নেতৃত্ব। আপনারা সবাই একজন নেতা। নামটা বলার অর্থ কি? আমি মরে গেলে কি তাহলে ঐক্য হবে না। তখন কি সবাই পরাধীন থাকবেন? আমি আপনাদের সহকর্মী হিসেবে যতোদিন জীবিত আছি আপনাদের সঙ্গে থাকবো। না থাকলে আপনাদেরই জাতীয় ঐক্য করতে হবে। একক নেতা খোঁজার সমালোচনা করে তিনি বলেন, একক নেতা খোঁজা খুব ভুল জিনিস। এটা থেকে মুক্ত হতে হবে। আজকে আমি সুযোগ পেয়েছি, এটা ভেঙে বলবো। সবারই নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা আছে।

কারো বেশি, কারো কম। কিন্তু সকলের মধ্যেই উদ্যোক্তা হয়ে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা আছে। দেশ তো আমাদের সকলের। বাংলাদেশ কোনো ব্যক্তির না, গোষ্ঠীর না; কোনো পরিবারেরও না। এই কথাটা আমাদের সকলের অন্তর থেকে বিশ্বাস করতে হবে। এটা বিশ্বাস করেছিলাম বলে আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছি। এটা বিশ্বাস করেছিলাম বলে কতো দুর্ঘটনা ঘটলো। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটলো। হত্যাকারীদের কি আমরা হ্যান্ডশেক করে ছেড়ে দিয়েছি? না। তাদের বিচার করেছি। এছাড়া, ২০০৫ সালে আমরা জাতীয় ঐক্য করে দেখিয়েছি। আবার ২০০৫ সালের মতো ঐক্য করা সম্ভব। গণফোরাম সভাপতি বলেন, আপনারা সবাই দেশের মালিক। মালিক হিসেবে নিজেকে মূল্যায়ন করেন। নিজে নিজের জায়গা থেকে কে-কী অবদান রাখতে পারবেন সেটা ভাবেন।

উদ্যোগ নেন। আশপাশে সমমনা যাদের পান তাদের বলেন, দেশের পরিবর্তন আনা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা ও যারা উল্টো পথে আছে তাদের থেকে দেশকে মুক্ত করতে হবে। এভাবে যদি আমরা মুভ করি, তাহলে আমি মনে করি- বাংলাদেশের মতো আর কোনো দেশ পাবেন না, যেখানে এ রকম সাড়া পাওয়া যায়। ড. কামাল বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন জেলে আটকা পড়লেন তখন কি জনগণ বসে ছিল যে- উনি জেল থেকে বের হোক তারপর আমরা তার নেতৃত্বে যুদ্ধ করবো। বঙ্গবন্ধুরও নির্দেশ ছিল- ‘তোমাদের যার যা কিছু আছে তা নিয়ে যুদ্ধে নেমে পড়ো’। ওই কথাটা সবাই রক্ষা করেছে। প্রবীণ এ নেতা বলেন, কয়েকদিন আগে স্কুলের দুইটা ছেলে-মেয়ে মারা যাওয়ার পর কিভাবে ছেলে-মেয়েরা নেমে গেল। ওরা কি বলেছিল অমুকের নেতৃত্বের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি? উনি এসে নেতৃত্ব দিলে আমরা রাস্তা ঠিক করবো। তা করেনি। সবাই নেমে গিয়েছে। তিনি বলেন, এখানে এমন কোনো শক্তি নেই যে, আমাদের এতো কোটি বাঙালিকে মেরে পরাধীন রাখবে। আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখবে। এই শক্তি পৃথিবীতে কোথাও নেই। আমাদের দেশে তো নেই-ই। জনগণকে মেরে কোনো লাভ হবে না। এই দেশ আমাদের।

তাই আমাদের দেশকে গড়ার জন্য কারো অনুমতি লাগবে না। তিনি বলেন, আমরা ১৯৪৭ সাল থেকে লড়াই করছি। আইয়ুব খান বলেছিল আমরা অস্ত্রের ভাষায় জবাব দেবো। আজকে কোথায় অস্ত্র, আর কোথায় আইয়ুব খান? এদেশের মানুষ ভাষা আন্দোলন করেছে। বলা হলো বাংলা রাষ্ট্রভাষা হবে না। কয়েকজন ছেলে বললো হবে না মানে? বাংলাই তো রাষ্ট্রভাষা হবে। তারপর কয়েকজনকে জীবন দিতে হলো। আর পাকিস্তান থাকতেই বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হলো।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্র আনতে হলে সত্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ড. কামালকে সামনে আসতে হবে। অনেক কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলো করতে হবে। তিনি বলেন, যখন মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম তখন স্বপ্ন ছিল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু এখন জনগণের সঙ্গে সরকার সব ক্ষেত্রে চালাকি করছে। গোয়েন্দা বাহিনী ও পুলিশ দিয়ে দেশ শাসন করছে। কেউ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললে পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে তুলে নেয়া হচ্ছে। এটা ভুল কাজ হচ্ছে। সরকার ভুল করছে।

এসব করে লাভ হবে না। তার চেয়ে জনগণকে কথা বলতে দেন। কথা বলতে দিলে গুজব ছড়াবে না। কথা বলতে না দিয়ে গুজব ছড়াবেই।
আলোচনা সভায় আরো জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য মিলু চৌধুরী, হাবিবুর রহমান, যুব ঐক্যের আহ্বায়ক মুহাম্মদ হানিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status