দেশ বিদেশ

আদিবাসী স্বীকৃতি দিতে সমস্যা কোথায়?

মেহেদী হাসান পলাশ

১০ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ৯:১৫ পূর্বাহ্ন

Indigenous and Tribal Peoples Convention, 1989 (No. 169) , ১৯৮৯ (ঘড়. ১৬৯)-এর আর্টিকল ১ এর (ধ)-তে ট্রাইবাল বা উপজাতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে , ‘tribal peoples in independent countries whose social, cultural and economic conditions distinguish them from other sections of the national community, and whose status is regulated wholly or partially by their own customs or traditions or by special laws or regulations’. অর্থাৎ একটি দেশের মূল জনগোষ্ঠী থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে ভিন্নতর যারা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও আইন দ্বারা সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে পরিচলিত তাদের উপজাতি বলা হয়। এখন আইএলও’র এই সংজ্ঞাটি যদি আমরা বাংলাদেশের চাকমা, মারমা, সাঁওতাল ও অন্যান্য সাবস্পেসিস সমূহের সঙ্গে বিচার করি তাহলে পরিষ্কার বোঝা যায় তারা উপজাতি। কেননা, ট্রাইব শব্দের বাংলা অর্থ উপজাতি। কিন্তু বাংলাদেশের মতলববাজ বুদ্ধিজীবীরা আইএলও কনভেনশনের আর্টিকেল ১-এ উপস্থাপিত ট্রাইবাল ডেফিনেশনটি সম্পূর্ণ চেপে গিয়ে শুধু ইনডিজিন্যাস পিপলের সংজ্ঞাটি উপস্থাপন করেন। এখন আমরা ইনডিজিন্যাস পিপলের সংজ্ঞাটি বিশ্লেষণ করবো। Indigenous and Tribal Peoples Convention, ১৯৮৯ (ঘড়. ১৬৯)-এর আর্টিকল ১-এর (বি)-তে ইনডিডজিন্যাস পিপল বা আদিবাসীর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে,  peoples in independent countries who are regarded as indigenous on account of their descent from the populations which inhabited the country, or a geographical region to which the country belongs, at the time of conquest or coloni“ation or the establishment of present state boundaries and who, irrespective of their legal status, retain some or all of their own social, economic, cultural and political institutions. অর্থাৎ আদিবাসী তারা যারা একটি নির্দিষ্ট রাষ্ট্রে বংশানুক্রমে বসবাস করছে বা অধিকৃত হওয়া বা বর্তমান সীমানা নির্ধারণের পূর্বে বা উপনিবেশ সৃষ্টির পূর্ব থেকে বসবাস করছে। এবং যারা তাদের কিছু বা সকল নিজস্ব সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও আইনগত অধিকার ও প্রতিষ্ঠানসমূহ ধরে রাখে। আইএলও কর্তৃক উপজাতি ও আদিবাসী সংজ্ঞার মূল পার্থক্য হচ্ছে নির্দিষ্ট রাষ্ট্রে বংশানুক্রমে বসবাস বা অধিকৃত হওয়ার, বর্তমান সীমানা নির্ধারণের পূর্বে বা উপনিবেশ সৃষ্টির পূর্ব থেকে বসবাস। বাকি শর্তগুলো মোটামুটি উপজাতিদের মতোই। অর্থাৎ একজন উপজাতি আদিবাসী হবেন বা হবেন না উপরোক্ত শর্তের ভিত্তিতে। এছাড়াও রয়েছে ২০০৭ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সদর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ৬১তম অধিবেশনে The United Nations Declaration on the Rights of Indigenous Peoples চার্টার। এটি এক্সক্লুসিভলি আদিবাসীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, উপজাতিদের নয়। Indigenous and Tribal Populations Convention, ১৯৫৭ (ঘড়. ১০৭)-১৯৫৭ সালে পাস হলেও এ পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র ২৭টি দেশ এই কনভেশন র‌্যাটিফাই করেছে। ১৯৭২ সালের ২২শে জুন বাংলাদেশ এই কনভেনশন র‌্যাটিফাই করেছে। বাংলাদেশ এই কনভেনশন র‌্যাটিফাই করলেও তা ছিল বৈশ্বিক দৃষ্টিতে। কেননা, বাংলাদেশ কখনই এ দেশে কোনো আদিবাসী জনগোষ্ঠী আছে তা স্বীকার করেনি। বাংলাদেশের বাইরে উপমহাদেশের পাকিস্তান ও ভারত এই কনভেনশন র‌্যাটিফাই করেছে। যদিও এরই মধ্যে ৮টি দেশ এই কনভেনশনকে নিন্দা করে তা থেকে বেরিয়ে গেছে। অন্যদিকে Indigenous and Tribal Peoples Convention, ১৯৮৯ (ঘড়. ১৬৯)- ১৯৮৯ পাস হলেও এখন পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র ২৩টি দেশ এই কনভেনশন র‌্যাটিফাই করেছে। এরমধ্যে কনভেনশন-১০৭ থেকে বেরিয়ে আসা ৮টি দেশও রয়েছে। উপমাহদেশের একমাত্র নেপাল ছাড়া আর কোনো দেশ এই কনভেনশন র‌্যাটিফাই করেনি। অন্যদিকে বাংলাদেশের মতো উপমহাদেশীয় রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানও Indigenous and Tribal Populations Convention, ১৯৫৭ (ঘড়. ১০৭)- র‌্যাটিফাই করলেও কনভেনশন-১৬৯ র‌্যাটিফাই করেনি। কনভেনশন-১৬৯ অবশ্য ১০৭-এর মডিফিকেশন, তবুও তা আলাদা করে র‌্যাটিফিকেশন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কেননা, কনভেনশন-১৬৯ পাস হওয়ার পর কনভেনশন-১০৭ এর গুরুত্ব হারিয়েছে। একটি আন্তর্জাতিক চার্টার কোনো দেশ র‌্যাটিফাই না করলে তা তার জন্য প্রযোজ্য নয়। চলবে...
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status