এক্সক্লুসিভ

সিলেটে শিল্পী সোনিয়ার মৃত্যু নিয়ে ‘রহস্য’

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১০ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

সিলেটের বাউল শিল্পী সোনিয়া সুলতানার মৃত্যু নিয়ে রহস্য দানা বাঁধছে। সোনিয়া নিজে পেট্রোল ঢেলে শরীরে আগুন দিয়েছে, নাকি অন্য কেউ তার শরীরে আগুন দিয়েছে সেটি অজানাই থেকে যাচ্ছে। এদিকে- সোনিয়ার লাশ পুলিশকে না জানিয়ে গোপনে দাফন করা হয়েছে। সোনিয়ার মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আফসোস করছেন পরিচিতজনরা। সবাই এ মৃত্যুকেও ‘রহস্যময়’ মৃত্যু মনে করছেন। এদিকে- সোনিয়ার স্বামী কিংবা পিতার পরিবার ঘটনার পর থেকে মুখবন্ধ করে আছেন। তারাও সোনিয়ার রহস্যময় মৃত্যুর ব্যাপারে পুলিশকে অবগত করেননি। আর এখন তারা কোনো ঝামেলাও চাচ্ছেন না। সোনিয়া সুলতানা সিলেটের বাউল  শিল্পী। স্টেইজ পোগ্রাম করেছেন বেশি। সিলেটে পরিচিতি রয়েছে তার। সোনিয়ার বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া আলীনগর গ্রামে। বাবা মো. মজিবুর রহমান পেশায় সিএনজি অটোরিকশা চালক। তারা বসবাস করছেন নগরীর সুবিদবাজার এলাকায়। সোনিয়ার বর্তমান স্বামী সাহেদুল ইসলাম শিপলু। সে নগরীর ছরারপাড়ে সুগন্ধা ১২নং বাসার বাসিন্দা। তার পিতা শামসুল আলম ডিসকো ব্যবসায়ী। পাশাপাশি তিনি রাজনীতিও করেন। পারিবারিক সূত্র জানায়- চলতি বছরের ১১ই ফেব্রুয়ারি সিলেটের আদালতে বিয়ে করেন সাহেদুল ইসলাম শিপলু ও সোনিয়া সুলতানা। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ফেসবুকে সম্পর্কের সূত্র ধরে পরিচয় হয়। বিয়ের পর পরিবারকে না জানিয়েই তারা সুবিদবাজার এক্সেল টাওয়ার সংলগ্ন টিনশেড বাসায় গোপনে সংসার করে আসছিলেন। পারিবারিক সূত্র জানায়- সোনিয়ার পরিবার বিয়ের বিষয়টি জানলেও শিপলুর পরিবার জানতো না। যখন বিয়ের বিষয়টি জানাজানি হয় তখন শিপলুর পরিবার তাতে আপত্তি তুলেন। এদিকে- শিপলুর আগেও সোনিয়া আরো তিন পুরুষের ঘরনি হয়েছিলেন। প্রথম স্বামী পাঠানটুলা এলাকার মোহনা ১৬নং বাসার মদই মিয়ার পুত্র কালামের ঔরসে তার এক সন্তানও রয়েছে। ওই সন্তান বর্তমানে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। এ ছাড়া- ছাতকের জাউয়াবাজার এলাকার এক ছেলের সঙ্গেও তার বিয়ে হয়েছিল। বিয়ে হলেও সোনিয়া ছিল বেপরোয়া। বাউল গান ও স্টেজ শোর বদৌলতে অনেকের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। এই বেপরোয়া জীবনের কারণে কোনো স্বামীর সঙ্গে সংসার টিকেনি। প্রায় মাস খানেক আগেও সোনিয়া কয়েকজন ধনাঢ্য ব্যক্তির সঙ্গে ভারত সফরে গিয়েছিল। এ কারণে স্বামী শিপলুর সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। গেলো ১৫ দিন ধরে শিপলুর সঙ্গে তার বনিবনা হচ্ছিল না। এ কারণে শিপলু সোনিয়ার সঙ্গ ছেড়ে নিজ বাসা ছরারপাড়ে অবস্থান নেয়। গত ২৬শে জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হঠাৎ সোনিয়া ছরারপাড়ের বাসায় এসে উপস্থিত হয়। এ সময় দরোজা খুলে শিপলু দেখেন- সোনিয়া তার বাসায় এসে হাজির। শিপলু জানিয়েছেন- ‘দরজা খুললে তাকে দেখতে পেয়ে আমি বলি তুমি এখানে কেন এসেছো। সে বলে তুমি বাসায় আসবে না। আমি জবাব দিই তুমি বাসায় যাও, নিজে ঠিক হও তারপর আসবো। এই কথা বলে দরজা বন্ধ করে দিই।’ এর কিছুক্ষণের মধ্যে দরজার বাইরে হঠাৎ চিৎকার শুনতে পেয়ে দরজা খুলে দেখি তিন তলা বাসার ২য় তলার সিঁড়িতে সোনিয়ার শরীরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। সঙ্গে সঙ্গে নেভাতে গিয়ে নিজের হাত দগ্ধ হয় বলে জানান শিপলু। এরপর জ্বলন্ত সোনিয়াকে নিয়ে তিনি সিলেট ওসমানী হাসপাতালে যান। এ সময় সোনিয়ার বোন প্রিয়াও সঙ্গে ছিল। ঘটনার দিন রাতেই সোনিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এদিকে- ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা গ্রহণের পর ৪ঠা আগস্ট সোনিয়াকে নিয়ে তার স্বামী ও পিতা সিলেটের পথে রওনা হন। পথিমধ্যে সোনিয়া মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এরপর বিষয়টি কাউকে না জানিয়েই লাশ দাফন করা হয়েছে। এদিকে- সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি মোশারফ হোসেন জানিয়েছেন- বিষয়টি জানার পর পুলিশ স্ব-উদ্যোগী হয়ে মেয়ের পিতার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং অভিযোগ দাখিলের কথা বলে। কিন্তু মেয়ের পিতা অভিযোগ দিতে অনীহা প্রকাশ করেন। এরপরও কোনো অভিযোগ এলে পুলিশ যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে জানান তিনি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status