এক্সক্লুসিভ

অরক্ষিত রাতের শ্রীমঙ্গল

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি

১০ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার, ৮:১৩ পূর্বাহ্ন

মৌলভীবাজার জেলার পাইকারি ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল শ্রীমঙ্গল। এখান থেকে জেলাসদরসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করে থাকেন। এ শহরে প্রতিদিন শত কোটি টাকার পণ্য কেনাবেচা হয়। পর্যটনকেন্দ্রিক শহর হওয়ায় এ শহরে ব্যবসা বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হিসেবে দিন দিন ব্যাপক পরিচিতি লাভ করলেও পাহারাদার না রাখায় রাতের বেলায় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অরক্ষিত অবস্থায় থাকছে।  
রাতের বেলা অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেরই নিরাপত্তা প্রহরী রাখেন না ব্যবসায়ীরা। অনেক দোকান, মার্কেট বাসা বাড়িতে রাতে নিরাপত্তা আলো পর্যন্ত থাকে না । এ অবস্থায়ই দরজা-জানালা খুলে ঘুমিয়ে থাকেন অনেক বাসিন্দা। এ পরিস্থিতিতে শহরে প্রায়ই ছোটখাটো চুরির ঘটনা ঘটছে। গত ৬ই আগস্ট রাতে শহরের গুহ রোডে অবস্থিত গ্রামীণ ফোনের ডিস্ট্রিবিউটর অফিসের ৩ লাখ ৫০ হাজার  টাকার মোবাইল কার্ড চুরি হয়। এর আগে গত ২রা আগস্ট  উত্তর-উত্তসুর এলাকায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে চুরির ঘটনায় টাকা, ডলার, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণসহ প্রায় ৫ লক্ষাধিক টাকার মালামাল খোয়া যায়। এসব এলাকায় কোনো পাহারাদার নিয়োগ ছিল না।

আর এর সব দায় এসে পড়ছে থানা পুলিশের উপর। অপ্রতুল জনবল দিয়ে শহরের হাজার হাজার দোকান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খাচ্ছে থানা পুলিশ। পুলিশের পক্ষে বলা হয়েছে, সীমিত জনবল দিয়ে এতবড় থানার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বাসা বাড়ির নিরাপত্তা দেয়া দুরূহ ব্যাপার। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন রোডে অবস্থিত মার্কেট বিপণি বিতান, দোকান ও গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

রাত ১২টা ৩০ মিনিট। শহরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকা হাউজিং এস্টেট। এই এস্টেটে সিনি. সহকারী পুলিশ সুপার সার্কেল কার্যালয়, কর অফিস, কমিউনিটি সেন্টার, সরকারি স্কুল, ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাসহ লন্ডন-আমেরিকা প্রবাসীদের বিলাসবহুল ভবন অবস্থিত। দেখা গেছে হাউজিং এস্টেটের বাসার দরজা-জানালা খোলা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছেন বাসিন্দারা। কিন্তু এ এলাকায় কোনো পাহারাদার দেখা মেলেনি। মৌলভীবাজার সড়কের ৫নং পুল থেকে থানা এলাকা, চৌমুহনা থেকে হবিগঞ্জ সড়ক, স্টেশন রোড, কলেজ রোড ও গুহ রোড পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন মার্কেট, দোকান, ফিলিং স্টেশন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশেরই কোনো নিজস্ব পাহারাদার দেখা পাওয়া যায়নি। ৫নং পুল এলাকায় আল-আমিন ম্যানশন, গ্রামীণ ব্যাংক, মিজান ভিউ মার্কেট, রবি ডিস্ট্রিবিউটর, নাহার ফিলিং স্টেশন, কৃষি ব্যাংক আঞ্চলিক কার্যালয়, নজরুল কমিউনিটি সেন্টার, বেঙ্গল মটরস, মদিনা মার্কেট, সপ্তডিঙ্গা সরবরাহ, ১নং পুল এলাকায় এবি ব্যাংক, আজিজ মার্কেট, খান ম্যানসন, নীলিমা ম্যানসন, আল ফখরী, ভিক্টোরিয়া স্কুল মোড়ে সিঙ্গার, বাটারফ্লাই, বেষ্ট বাই, ভিশন ইলেক্ট্রনিক্স, রিগ্যাল, এসএ পরিবহন, ডিএসবি বেলালের স’ মিল, গ্রান্ড তাজ হোটেল ও প্রাইম ব্যাংক ও বিলাস শপিং মল, গ্রান্ড তাজের মত বিলাসবহুল মার্কেট, দোকান ও স্থাপনা থাকলেও এলাকাগুলো ঘুরে মাত্র ২জন পাহারাদার পাওয়া যায়। রাত ২টায় থানা মোড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায় অর্ধ শতাধিক পাইকারি দোকান-গুদামের সামনে এলোপাতাড়ি ভাবে পিয়াজ-রসুনের বস্তা ফেলে রাখা।

শ্রীমঙ্গল থানা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৪৫১ বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত শ্রীমঙ্গল থানার জনসংখ্যা ৩ লাখ ১৮ হাজার ২৫ জন। এ বিপুল জনসংখ্যার নিরাপত্তা দায়িত্বে রয়েছেন ৫৭ জন পুলিশ সদস্য। এর মধ্যে ৩ জন ওসি, ৯ জন এসআই, ১১ জন এএসআই এবং ৪ জন ড্রাইভার, ৩ জন কম্পিউটার অপারেটর, ৩ জন সেন্ট্রি ডিউটি এবং কনস্টেবল ৩৪ জন।  
এদের মধ্যে থানার প্রশাসনিক কাজ ও সেন্ট্রি পোস্টে সার্বক্ষণিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন ১২ জন সদস্য। বাকি জনবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভিআইপি প্রটোকল, মামলা তদন্ত, পরিদর্শনসহ শহরের মার্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাসাবাড়ির নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকেন। জানতে চাইলে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুজ্জামান বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মালিকদের নিজস্ব পাহারাদার নিয়োগের জন্য শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও  মার্কেট মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করবো। পাশাপাশি শহরের বিভিন্ন সোসাইটির সঙ্গে কথা বলবো। যাতে প্রতিটি পাড়া মহল্লায় ১জন ২ জন করে পাহারাদার নিয়োগ রাখা যায়। জানতে চাইলে শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কেএম নজরুল বলেন ‘শ্রীমঙ্গল থানায় ওসির দায়িত্ব নেয়ার সময় অনেক মর্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকায় পাহারাদার ছিল। এখন প্রায় সবাই পাহারা বন্ধ করে দিয়েছে। জিজ্ঞাসা করলে তারা বলে এখন চুরি হয় না। সীমিত জনবল নিয়ে রাতের জননিরাপত্তা বিধানে হিমশিম খাচ্ছি। তিনি বলেন রাতে জননিরাপত্তার জন্য মাঠে ৭টি টিম কাজ করছে। ঈদকে সামনে রেখে আরো ২টি টিম বাড়ানো হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status