অনলাইন

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, নিয়োগে ডিজিটাল জালিয়াতি

মাস্টারমাইন্ড বিকেএসপির সহকারি পরিচালক

স্টাফ রিপোর্টার

৯ আগস্ট ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১১:৩০ পূর্বাহ্ন

ডিভাইস ব্যবহার করে ঢাকাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বিসিএস পরীক্ষা, ব্যাংক ও সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রার্থীদের কাছে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র পৌছে দিতেন বিকেএসপির সহকারি পরিচালক অলীপ কুমার বিশ্বাস। ডিভাইস চক্রের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার সিআইডির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সিআইডির এএসপি (মিডিয়া) শারমিন জাহান। অলীপ কুমার বিশ্বাসসহ ডিজিটাল জালিয়াত চক্রের ৯ সদস্যকে বুধবার রাতে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। শারমিন জাহান বলেন, ডিজিটাল জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত দুটি চক্র। গত বছর ১৯শে অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় রাকিবুল হাসান এছামিসহ ২৮ জনকে। ওই চক্রটি প্রেস থেকে সরাসরি প্রশ্ন ফাঁস করত। এর প্রধান ছিলেন এছামি। সেসময় ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্ন ফাঁস চক্রটিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। বুধবার রাতে সিআইডি রাজধানীর বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে অলীক কুমার বিশ্বাসসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করে। সংবাদ সম্মেলনে শারমিন জাহান বলেন, আপনারা জানেন বর্তমান সরকার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। বিগত কয়েক বছরে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরিক্ষাতেই নয়, মেডিকেল, ব্যাংকসহ সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের মত ঘটনা ঘটছে। এছাড়াও বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষাতেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে আসছে। সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইম এই অপরাধ দমনে শুরু থেকেই বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় গত বছর ১৯শে অক্টোবর গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হলে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও ডিজিটাল জালিয়াত চক্র ধরতে অভিযান পরিচালিত হয়। ২০শে অক্টোবর শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়। এরপর মাস্টার মাইন্ড নাটোরের ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এছামীসহ এই চক্রের ২৮ আসামী গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে আগের রাতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের মূল উৎপাটন করা হয়। তিনি বলেন, ভর্তি কিংবা নিয়োগ পরীক্ষায় মূলত দুই ভাবে জালিয়াতি হয়। একটি চক্র আগের রাতে প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করত। আরেকটি চক্র পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র নিয়ে দ্রুত তা সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীকে সরবরাহ করত।
আগের রাতে প্রেস থেকে প্রশ্নফাঁস চক্রের পুরো চক্র চিহ্নিত করা গেলেও ডিভাইস চক্রটি বাকি ছিলো। আমরা আপনাদের কথা দিয়েছিলাম এ মামলায় কাউকেই আমরা ছাড় দেব না। ফলে আমরা নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে গেছি। ডিভাইস চক্রের প্রধান বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস গণমাধ্যমে নাম প্রকাশের পর গা ঢাকা দেয়। এএসপি শারমিন জাহান বলেন,  আপনারা জেনে থাকবেন, প্রেস বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান যারা এনালগ পদ্ধতিতে প্রশ্নপ্রত্র ফাাঁস করে তাদের আইনের আওতায় আনা যতটা সহজ ডিজিটাল পদ্ধতি অবলম্বনকারীদের আইনের আওতায় আনা ততটাই জটিল। কিন্তু সিআইডি অর্গানইজড ক্রাইম প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই সামাজিক ব্যাধি ও অবক্ষয় রোধ বদ্ধপরিকর। তাই অত্যন্ত সুকৌশল, ধৈর্য এবং নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে নিয়োগ ও ভর্তিতে ডিজিটাল জালিয়াতির সর্ববৃহৎ চক্রটিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। পাশাপাশি আমরা বিস্মিত হয়েছি, এই চক্রটি গত কয়েক বছর ধরে লাখো তরুণের স্বপ্নের চাকরি বিসিএস পরীক্ষাতেও জালিয়াতি করে আসছে। পাঁচ দিনের এক সাড়াশি অভিযানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ডিজিটাল ডিভাইস চক্রের মাস্টার মাইন্ড বিকেএসপির সহকারী পরিচালক অলিপ কুমার বিশ্বাস, বিএডিসির সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, ৩৬তম বিসিএসে নন ক্যাডার পদে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষক হিসেবে সুপারিশ প্রাপ্ত ইব্রাহিম এবং ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণ আয়ুব আলী বাঁধনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
এছাড়াও পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে প্রশ্নপত্র সরবরাহের অভিযোগে রাজধানীর অগ্রনী স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক গোলাম মোহম্মদ বাবুল, অফিস সহায়ক (পিওন) আনোয়ার হোসেন মজুমদার এবং মোঃ নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়াও একই অভিযোগে ধানমন্ডি গভ.বয়েজ স্কুলের সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক হোসনে আরা বেগম এবং পিওন হাসমত আলী শিকদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুধবার গ্রেফতারের সময় হাসমতের কাছে ওই দিনের বিসিএস লিখিত পরীক্ষার কয়েক কপি প্রশ্নপত্র এবং ৬০ হাজার টাকা পাওয়া গেছে। এই ৯ জনসহ এ মামলায় গ্রেফতারের সংখ্যা দাড়াল ৩৭। অলিপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যায়ে ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতির মাস্টার মাইন্ড। কয়েক বছরে সে জালিয়াতির মাধ্যমে তিন কোটি টাকার বেশি আয় করেছে।
ইব্রাহিম, মোস্তফা ও বাঁধন বিসিএসসহ সকল নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির মূল হোতা। এদের চারজনের প্রায় ১০ কোটি টাকার নগদ অর্থ ও সম্পদের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি। অনুসন্ধানে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।
গ্রেফতারকৃত অলিপ, ইব্রাহীম, বাঁধন ও মোস্তফা জানিয়েছে, কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁসের পর রাজধানীর আলিয়া মাদ্রাসা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হলের দুটি কক্ষে বসে তারা অভিজ্ঞদের দিয়ে সে প্রশ্নপত্র সমাধান করে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীর কাছে সরবরাহ করত।
এদের মধ্যে ইব্রাহীমের ছিল বিলাসী জীবন। দরিদ্র পরিবারের সন্তান ইব্রাহীম জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৬তম বিসিএসে নন ক্যাডার পদে নিয়োগের সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছে। ৩৬ লাখ টাকার দামি গাড়ীতে তার চলাচল। জালিয়াতির টাকায় খুলনার মুজগুন্নী এলাকায় সাড়ে ছয় শতাংশ জমির উপর চারতলা ভবন নির্মাণ করেছে। নড়াইলে তৈরি করেছে ডুপ্লেক্স বাড়ি। এছাড়াও অবৈধ মানি এক্সচেঞ্জের ব্যবসা করত বলেও সে জানিয়েছে ।
গত কয়েক বছরে বিসিএস, বিভিন্ন ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি প্রতিষ্ঠানে শতাধিক ব্যক্তিকে জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে ইব্রাহীম। শারমিন জাহান বলেন, আমরা অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত এসকল ব্যক্তিকেও আইনের আওতায় আনব। এদেরকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে প্রশ্নফাস ও ডিজিটাল জালিয়াতি দুটো চক্রকেই সমূলে চিহ্নিত করা গেছে। এই সুবিশাল চক্রকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার ফলে আমরা বিশ্বাস করি আনাগত দিনে ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনা হ্রাস পাবে।
সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম, বিপিএম, পিপিএম(বার) এর তত্ত্বাবধানে সিনিয়র এএসপি সুমন কুমার দাস ও তার দলের চলমান তদন্তের ফলে অপরাধ এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, সিআইডি অর্গানইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার এসএস মোল্যা নজরুল ইসলাম, বিপিএম,পিপিএম (বার),অতিঃ পুলিশ সুপার রায়হান উদ্দিন খান, অতিঃ পুলিশ সুপার আসলাম উদ্দিন, অতিঃ পুলিশ সুপার শিরিন সুলতানা, অতিঃপুলিশ সুপার সুমন মিয়া, সিনিঃ এএসপি আবু সাঈদ, সিনিঃ এএসপি সুমন কুমার দাস।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status