ভারত
ভারতে সাবেক ছিটমহলবাসীরা আজও বিষাদের অন্ধকারে
কলকাতা প্রতিনিধি
১ আগস্ট ২০১৮, বুধবার, ১১:১১ পূর্বাহ্ন
ঠিক তিন কছর আগে ৩১শে জুলাই মধ্যরাতে প্রবল আনন্দের মধ্য দিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়িত হয়েছিল কিন্তু চুক্তির তিন বছর পরও ভারতে যে সব ছিটমহল যুক্ত হয়েছে এবং বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় ছিটমহল থেকে যেসব মানুষ ভারতে এসেছে তারা বিষাদের অন্ধকারে ডুবে রয়েছেন। সমস্ত ধরণের নাগরিক অধিকার বঞ্চিত এই মানুষগুলি একরকম রাষ্ট্রবিহীন হয়ে অবস্থান করছে। ভারতের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কাছে গত ৩০শে জুলাই লেখা এক চিঠিতে বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের পক্ষ অভিযোগ জানানো হয়েছে, সাবেক ছিটবাসীরা এক অদ্ভুত অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। তাদের ভারতীয় নাগরিকত্বের কোনও পরিচয়পত্র দেওযা হয় নি। রেশন কার্ড দেওয়া হলেও তাকে বৈধ পরিচয়পত্র হিসেবে স্বীকার করা হচ্ছে না। আর সাবেক ছিটের বাসিন্দাদের এখনও পর্যন্ত জমির কোনও সত্ত্ব দেওয়া হয়নি। সরকাররিভাবে অবশ্য বলা হচ্ছে পুরোদমে উন্নয়নের কাজ চলছে। অস্থায়ী শিবিরে থাকা ৯৪৫ জন মানুষের জন্য আবাসন তৈরির কাজও চলছে বলে প্রশাসন সুত্রে বলা হয়েছে। কিন্তু সাবেক ছিটমহলবাসীরা এই দাবিকে মিথ্যা বলে অভিহিত করে বৃহত্তর আন্দোলন শুরু করতে চলেছেন। আগামী ২০শে আগষ্ট সাবেক ছিটমহলবাসীরা মিছিল সমাবেশ করে কোচবিহারের জেলাশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ছিটবাসীদের অভিযোগ, তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কোনও সুযোগ সুবিধাই দেওয়া হয়নি। জমির স্বত্ত্ব না পেয়ে তারা হতাশ হয়ে পড়েছেন। স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে শুরু করে শিক্ষা বা অন্যান্য মৌলিক সুযোগ সুবিধা নেই বললেই চলে। অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ গেলেও বহু জায়গাতেই শুধু খুঁটি পোতা হয়েছে। পানির ব্যবস্থা করতে টিউবওয়েল বসানো হলেও সেগুলি অল্পদিনেই অকেজো হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনও ফল পাওয়া যায় নি। আমারা ছিটমহলবাসী নামে সংগঠনের এক কর্তাব্যাক্তি বলেছেন, গত তিন বছরে আমরা বহুবার আমাদের প্রতি বঞ্চনা নিয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোন হেলদোল নেই প্রশাসনের। সবাই কেমন যেন মুখ ঘুরিয়ে রয়েছেন। বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সম্পাদক কিরীটি রায় বলেছেন, অবর্ণনীয় অবস্থার মধ্যে রয়েছেন সাবেক ছিটমহলবাসীরা। সমস্তরকমের নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত হয়ে দিন কাটছে তাদের। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে সুখের আশায় যে মানুষগুলি (৯৪৫ জন) ভারতে এসেছিলেন তাদের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। এদের এক একটি পরিবারকে দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ ও হলদিবাড়ির তিনটি অস্থায়ী শিবিরে টিনের তৈরি ছোট্ট ঘরে রাখা হযেছে। কোনও কোনও ঘরে এক পরিবারের ৭-১০ জন ঠাসাঠাসি করে কোনরকমে থাকছেন। প্রতি পরিবারের জন্য যে সামান্য খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রী দেওয়া হয় তাতে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের প্রতিদিনের খাবার সঙ্কুলান হয় না। শিবিরের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, শিবিরে স্বাস্থ্য পরিষেবা বলে কিছু নেই। ছেলে মেয়েদের শিক্ষার কোনও ব্যবস্থা নেই। কাজের কোনও সুযোগ নেই। হলদিবাড়ি শিবিরের এক সাবেক ছিটমহল বাসী বলেছেন, তিনি অনেক স্বপ্ন নিয়ে ভারতে এসেছিলেন। জমিজমা, ঘরবাড়ি সব ছেড়ে এসেছেন। কিন্তু ভারতে এসে অথৈ পানিতে পড়েছেন। হারানো জমি ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাওয়ার কোনও আশা দেখছেন না তিনি। পুনর্বাসনের নামে আবাসনের জায়গা দেয়ার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমরা চাষা মানুষ। আমরা আবাসনের বিলাসিতায় অভ্যস্ত নই। আমরা চাই জমিবাড়ি।