ভারত

কলকাতায় এইচআইভি পজিটিভ তরুণ-তরুণীর কফিশপ

কলকাতা প্রতিনিধি

২৬ জুলাই ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১২:৫৪ অপরাহ্ন

এইচআইভির মত মারণ রোগের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে এখন তারা জীবন যুদ্ধের লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন। কলকাতার বুকে দশজন এইচআইভি পজিটিভি তরুণ-তরুণী চালু করেছেন একটি কফিশপ। ভারতে এই প্রথম। কাফে পজিটিভি নামের এই কফিশপে আসছেন সাধারন মানুষ থেকে সেলিব্রিটিরা পর্যন্ত। অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্রায়, মীরের মত াভিনেতারা এদের কফিশপে এসে এগিয়ে চলার সাহস যুগিয়ে গিয়েচেন। সম্প্রতি দক্ষিন কলকাতার একটি বহুতলের গ্যারেজের ১০ ফুট বাই ১২ ফুট গ্রারেজের স্বল্প পরিসরেই চালু হয়েছে এই কাফেটারিয়া। আর এই কাফিটেরিয়াতে মনের আনন্দে কফি ও অন্যান্য খাবার পরিবেশন করছেন এইচআইভি পজিটিভ তরুন-তরুণীরাই। গত দশ দিনেই বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই কফিশপ। সোস্যাল মিডিয়ায় লক্ষ মানুষ এদের পাশে থাকার বার্তা দিযেছেন। প্রতিদিন যারা এই কফিশপে আসছেন তারাও এদের পাশে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এমনই এক কলেজ ছাত্রী জানিয়েছেন, এদেরকে দূরে সরিয়ে রাখার কোনও মানে নেই। তিনি সব জেনেশুনেই এখানে কফির ও অন্য খাবার খেতে এসেছেন। তিনি আরও জানিয়েছেন, এইচআইভি নিয়ে যে স্টিগমা রয়েছে তাকে দূরে ঠেলে ফেলার সময় এসেছে। টেবিলে কফির ট্রে এগিয়ে দিতে দিতে রিঙ্ক ু(নাম পরিবর্তিত) নিঃসঙ্কোচেই বলেছেন তাদের জীবনের এই নতুন স্বপ্নকে বাস্তবায়িত হওযার কথা। এদের একটাই কথা, আমরা অনুকম্পা চাইনা। আমাদের সমাজে ব্রাত্য করে রাখার প্রবণতা দূর হোক এটাই চাই। কলকাতার বুকে একটি বড় পরিসরে জায়গা পাওয়ার জন্য এদের দোরে দোরে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হয়েছে। শেষপর্যন্ত দক্ষিন কলকাতার যোধপুর পার্কের ৫২৪এ বাড়ির ইন্দ্র জ্যোতি দাশগুপ্ত এদের স্বপ্নের কথা জানার পর এগিয়ে এসেছেন তার গ্যারাজটিকে এদের হাতে তুলে দিতে। আর এই মানবিক সহযোগিতার ফলেই সম্ভব হযেছে কাফে পজিটিভের যাত্রা। অবশ্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অফারের সক্রিয় সহযোগিতায় জীবন যুদ্ধে এগিয়ে যাওয়ার স্বúœ কে বাস্তবায়িত করার সুযোগ পেয়েছেন এই দশ তরুণ-তরুণী। এদের কেউ পড়াশোনা করছে, কেউ বিভিন্ন বিষয়ে  প্রশিক্ষন নিচ্ছে। আর এই কফিশপ খোলার আগে এরা প্রত্যেকেই বেকিং ও স্যান্ডুইচ তৈরির মত বিষয়ে নিয়ে রীতিমত প্রশিক্ষন নিয়ে যোগ্যতা আর্জন করেছে।  অফারের প্রতিষ্ঠাতা কল্লোল ঘোষ এই প্রতিবেদককে বলেছেন, আমরা সবরকমের লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়েছি এদের। তবে কফিশপের মালিক এই দশ তরুন-তরুণীই। কল্লোল বলেন, এরা আমাদেরই সন্তান। জন্মের পর থেকেই ঘাতক রোগে আক্রান্ত আরও অনেকের মত এরাও পরিজন পরিত্যক্ত  হয়েছিল। এদের ঠিকানা হয়েছিল ‘অফার’ পরিচালিত ‘আনন্দঘর’ হোমে। এই হোমে আরও ৭১ জন শিশু  কিশোর রয়েছেন বলে জানিযেচেন তিনি। এরা সকলেই লেখাপড়া শিখে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে। কল্লোল আরও জানিয়েছেন, প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে গেলে হোমে রাখার নিয়ম নেই। তাই প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর এরা যাতে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সেজন্যই সাহস করে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি আরও বলেছেন,  কাফে পজিটিভ এমনই একটি উদ্যোগ। এটি ক্যাটালিস্টের কাজ করছে। আর তাই এই উদ্যোগ এইচআইভি পজিটিভ কমিউনিটির মধ্যে বিপুল সাড়া ফেলেছে। কয়েকদিনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এইচআইভিআক্রান্তরা এ ধরনের কাফে খোলার মাধ্যমে জীবন যুদ্ধে শামিল হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। কল্লোল ঘোষের মত এইচআইভি আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করেন, তাদের সকলেই মনে করেন, সাহস করে বেরিয়ে আসার দরজা খুলে দিতে না পারলে এরা আড়ালেই থেকে যাবে।এইচআইভি পজিটিভ মানুসগুরি যাতে সমাজে ব্রাত্য হয়ে াাস্থা হারিয়ে না ফেলে সেজন্য কাফে পজিটিভির মত উদ্রোগকে সমর্থন জানিয়ে অনেক মানুস এগিয়ে আসছেন্ কিন্তু এখনও সমাজে এদের নিয়ে যে দ্বিধা ও স্টিগমা রয়েছে তা অনেক প্রচার সত্ত্বেও দুর করা যায় নি। তবে সচেতনতা অনেক বেড়েছে বলে অনেকেই জানিযেছেন। ভারতে বর্তমানে প্রায় আড়াই লক্ষ এইচআইভি আক্রান্ত মানুষ রযেছেন। আর পশ্চিমবঙ্গে রযেছেন প্রায় দশ হাজার। সবচেযে গুরুত্বপূর্ণ হল, প্রতিবছর ভারতে প্রায় ৮০ হাজার শিশু এইচআইভি পজিটিভ হিসেবে জন্ম রয়েছে। এই ইনোসেন্ট ভিকটিমদের নিয়েই সমস্যা আরও বেশি। তবে বেঙ্গল নেটওয়ার্ক অব পিপলস লিভিং উইথ এইচআইভি/এইডস (বিএনপিএল) এর ভাইসচেয়ারম্যান তড়িৎ চক্রবর্তীর মত সমাজকর্মীরা মনে করেন, এইচআইভি আক্রান্ত মানুষগুলির গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে এবং এদের সম্পকের্ মানুষের স্টিগমা দূর করতে এইচআইভিপজিটিভিমানুষগুলির কাফে খোলার উদ্যোগকে স্বাগত জানাতেই হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status