অনলাইন
আলিঙ্গন হজম করতে পারছে না বিজেপি
কলকাতা প্রতিনিধি
২৩ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ১২:৪২ অপরাহ্ন
লোকসভায় কংগ্রেস সভাপতির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আলিঙ্গন করার বিষয়টি মোদীসহ বিজেপি নেতারা হজম করতে পারছেন না। অনাস্থা পভাটে জয় এলেও রাহুলের ‘ঝাপ্পি’ পয কংগ্রেসকে বাড়তি ফায়দা দিয়েছে, তা-ও বুঝতে পারছেন প্রধানমন্ত্রী। আর তাই সংসদের বাইরে সভাসমাবেশে এই আলিঙ্গন নিয়ে বিষোদ্গার করছেন প্রধানমন্ত্রী সহ বিজেপি নেতারা। বৃহষ্পতিবার রাহুল যখন মোদীকে আলিঙ্গন করেছিলেন তখন মোদী একেবারে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গিয়েছিলেন। মোদী তার ভাষণে কটাক্ষ করে বলেছেন, একজন এসে বললেন, উঠ, উঠ। প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসার এত তাড়া কিসের? শুক্রবার উত্তর প্রদেশের এক জনসভায় ফের আলিঙ্গন নিয়ে সরব হয়েছেন মোদী। কৃষকদের এই সভায় রাহুলের ‘ঝাপ্পি’ নিয়ে মোদী বলেছেন, জানতে চেয়েছিলাম, অনাস্থা আনার কারণ। পেলাম আলিঙ্গন। তাও অবাঞ্ছিত। আসলে রাহুলের আলিঙ্গনে যে বিজেপি প্রবল অস্ব¯িততে সেটা বোঝা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী থেকে বিজেপির মন্ত্রী ও নেতাদের নানা মন্তব্যে। স্পিকার সুমিত্রা মহাজন সংসদেই এ নিয়ে রাহুলকে সতর্ক করে দিলেও প্রশ্ন উঠছে, প্রধানমন্ত্রী যখন কথায় কথায় অন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের আলিঙ্গন করেন, তখন কংগ্রেস সভাপতি কী এমন দোষ করলেন। সাবেক বিজেপি নেতা যশবন্ত সিন্হা কটাক্ষ করে বলেছেন, আলিঙ্গনপটু এখন আলিঙ্গনেই জব্দ। তবে বিজেপি নেতা সুব্রক্ষ্মণ্রম স্বামী বলেছেন, সংসদে অধিবেশন চলাকালীন এভাবে প্রধানমন্ত্রীকে অপদস্থ করা উচিত হয়নি কংগ্রেস সভাপতির। সংসদের নিজস্ব কিছু নিয়ম কানুন আছে। প্রধানমন্ত্রীর পদের সম্মান রয়েছে। সেসব না মেনে কি করে একজন সাংসদ প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরেন? এতে মোদীর নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। আর অরুণ জেটলি তো আলিঙ্গনের বিষযটি নিয়ে একটি নিবন্ধই লিখে ফেলেছেন। তিনি লিখেছেন, অনাস্থা প্রস্তাবের মঞ্চটা ছেলেমানুষি করার জায়গা নয়। এটা রাজনৈতিক বিতর্কের মান বাড়ানোর জায়গা। প্রধানমন্ত্রীর পদে বসতে চাওয়া রাহুল গান্ধীর এটাই যদি ২০১৯ সালের জন্য সেরা ভাষণ হয় তাহলে ঈশ্বর তাঁকে রক্ষা করুন। রাহুল গান্ধী অবশ্য বিজেপির আক্রমণে বিচলিত হন নি। বরং তিনি টুইটারে লিখেছেন, প্রধানমন্ত্রী তার মতকে প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের কিছু লোকের প্রতি ঘৃণা ও ক্রোধকে ব্যবহার করেছেন। কিন্তু আমরা প্রমাণ করব ভালবাসা ও সমবেদনা দিয়েই সব ভারতীয়র মন জয় করা যায়। এটাই দেশ গড়ে তোলার একমাত্র পথ। কংগ্রেস একটি ভিডিও পোস্ট করে দেখিয়েছে, মোদী কিভাবে দলের বলিষ্ঠ তদ¯্র আদবাণীকে উপেক্ষা করছেন। তবে রাহুল গান্ধীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিজেপির শরিক দল শিবসেনা। তাদের মুখপত্র সামনায় রাহুলের প্রশংসায় লেখা হয়েছে, শুক্রবার সব আলো কেড়ে নিয়েছেন রাহুল গান্ধী। মরাঠিতে লেখা হয়েছে, 'বাভা জিঙ্কালানস'। অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ''ভাই আপনি সব আলো কেড়ে নিয়েছেন''। একই সঙ্গে রাহুলের চোখা চোখা কয়েকটি মন্তব্যও ঠাঁই পেয়েছে শিবসেনার মুখপত্রে। শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত বলেছেন, এটা স্পষ্ট, রাজনীতির স্কুলে উত্তীর্ণ হয়েছেন রাহুল গান্ধী। যেভাবে প্রধানমন্ত্রীকে জাদু কি ঝাপ্পি দিলেন, তা ঝাপ্পি নয়, বরং ঝটকা দিয়েছেন মোদীকে। কংগ্রেসের আইটি শাখার প্রধান দিব্যা রামাইয়া বলেছেন, জেটলিজি, আপনারও আলিঙ্গন প্রয়োজন। কংগ্রেস নেত্রীর ওই মন্তব্যে স্পষ্ট, আগামী দিনে বিজেপির বিরুদ্ধে আলিঙ্গনকে প্রচারের হাতিয়ার করার পরিকল্পনা নিচ্ছে কংগ্রেস। এদিকে আলিঙ্গনের পরে লোকসভায় রাহুলের চোখ টেপা নিয়ে মোদী যে ভাবে হাতের ইশারা করে দেখিয়েছেন, তা কতটা শালীন, তা নিয়েই এখন প্রশ্ন উঠছে। অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে সনিয়া গান্ধী বলেছিলেন, কে বলেছে কংগ্রেসের কাছে সংখ্যা নেই। বিতর্কের জবাবে সনিয়ার নাম না নিলেও তাঁর সেই মন্তব্যকে যেভাবে মোদী কটাক্ষ করেছেন, তা নিয়ে তির্ক তৈরি হযেছে। প্রশ্ন উঠেছে, রাহুলকে যদি আলিঙ্গন করা ও চোখ টেপার জন্য স্পিকার সতর্ক করতে পারেন, তা হলে সেই লোকসভার একজন সদস্য হিসেবে কেন দেওয়া হবে মোদীকে?