দেশ বিদেশ

ককটেল মামলা নিয়ে পাল্টাপাল্টি, বিএনপি নেতা মন্টু গ্রেপ্তার

আসলাম-উদ-দৌলা, রাজশাহী থেকে

২৩ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন

বিএনপির পথসভায় হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান মন্টুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে তাকে নগরীর রামচন্দ্রপুর এলাকার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ বলছে, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা এবং ভোটারদের সহমর্মিতা পাওয়ার জন্য বিএনপি এ ঘটনা ঘটিয়েছে। হামলার পরিকল্পনারী হিসেবে চিহ্নিত বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ফেসবুকে ভাইরালও হয়েছে। তবে ওই অডিও’র গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। বিএনপির অভিযোগ, ভাইরাল হওয়া অডিও ডাবিং করা। মূলত বিএনপির উপর দায় চাপানোর পাঁয়তারা করছে পুলিশ প্রশাসন। মামলা-হামলা, পুলিশি নিপীড়নের অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবে অডিও রেকর্ড সামনে আনা হয়েছে। গতকাল দুপুরে মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার গণমাধ্যমকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এবং ভোটারদের সহমর্মিতা পাওয়ার আশায় পরিকল্পিতভাবে বিএনপির নির্বাচনী পথসভায় নিজেরাই বোমা হামলা চালিয়েছে। ১৭ই জুলাইয়ের ওই হামলার পর পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত শুরু করে। পুলিশের চৌকস সদস্যদের নিয়ে টিম গঠন করা হয়। হিমেল নামের একজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। তার কাছে জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। পরে জেলা বিএনপি সেক্রেটারি ও বিএনপি কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদকের এক অডিও কথোপকথনে রাজশাহী ও নাটোরের দুই বিএনপি নেতার জড়িত থাকার কথা বেরিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, গত ১৭ই জুলাই বোমা হামলার দুইদিন পর ১৯শে জুলাই বিষয়টি নিয়ে মোবাইলফোনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর সঙ্গে কথা বলেন। যাতে তিনি স্বীকার করেন এবং দুইজনের নাম উল্লেখ করেন। কথোপকথনটি পুলিশের হাতে আসলে মতিউর রহমান মন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত শনিবার রাতে নগরীর রামচন্দ্রপুর এলাকার নিজ বাসা থেকে মন্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কথোপকথনটি নিজের বলে স্বীকার করেছে মন্টু। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই বোমা হামলার সঙ্গে আরো কে কে জড়িত তা বের করা হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
এ সময় প্রশ্ন করা হলে অডিও রেকর্ডের সূত্র ও অপর গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন পুলিশ কমিশনার। তবে অপর এক সূত্র জানিয়েছে, ‘বোমা হামলার পরদিন গ্রেপ্তারকৃত হিমেল মূলত মাদকসেবী। তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নাই।’
এ প্রসঙ্গে মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘বিএনপি নিজেরাই হামলা চালিয়ে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছিলো। হামলায় বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও স্থানীয় বিএনপি ক্যাডার জাবেদের নাম আগেই বলা হয়েছিলো। পর্যটন মোটেল থেকে তিনি আগের দিন সন্ধ্যায় লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বলে আমাদের কাছে খবর আছে। ফাঁসকৃত অডিও রেকর্ডে তার সত্যতা মিললো। রাজশাহী শান্তিপূর্ণ নগরী, এখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাঁয়তারা আওয়ামী লীগ বরদাস্ত করবে না বলে মন্তব্য করেন এই নেতা। এদিকে অডিও রেকর্ডদের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি। তারা বলছে, মামলা-হামলা পুলিশি নিপীড়ন চালানোর অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবে অডিও রেকর্ড সামনে আনা হয়েছে। যা ডাবিং করা এবং বিএনপির উপর কোনো রকমে দায় চাপানোর জন্য এটি করা হয়েছে। মহানগর বিএনপির দপ্তর সম্পাদক নাজমুল হক ডিকেন বলেন, ‘এটি ডাবিংকৃত বলে মনে হয়েছে। যেখানে জেলা বিএনপি সেক্রেটারি ওই পথসভায় উপস্থিতই ছিলেন না, সেখানে তিনি কারা জড়িত কিংবা কারা জড়িত না তা নিয়ে মন্তব্য করেন কিভাবে? উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিএনপির উপর দায় চাপাতে পুলিশ নাটক সাজিয়েছে।’ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুর হক মিলন অডিও রেকর্ডকে গুরুত্বহীন  ফাঁপা বেলুন উল্লেখ করে বলেন, ‘পথসভায় ককটেল হামলার দিন তিনি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু ও মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল রুটিন গণসংযোগে ছিলেন। খবর পেয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান। সেখানে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারও উপস্থিত ছিলেন। হামলাকারী হিসেবে দু’জনের নাম আসে। আওয়ামী লীগ জাবেদের কথা বলে, বিএনপি বলে আবেদের কথা। কিন্তু তাদের কাউকে গ্রেপ্তার না করে, কোনো নামগন্ধ নেই এমন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করছে। বিএনপির উপর দায় চাপাতে অডিও রেকর্ড বের করা হয়েছে। এসব অডিও রেকর্ডের উপর কোনো বিশ্বাস করা যায় না। পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযানে সুবিধা পেতে এই মামলাটিকে ব্যবহার করবে। নির্বাচনে জেতার স্বার্থে হাজার হাজার নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করার ছক এঁকেছে প্রশাসন।’ তিনি আরো বলেন, ‘ওয়ারেন্ট ছাড়া কোনো আসামি গ্রেপ্তার করা যাবে না ঘোষণার পর নতুন ৭টি মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করছে। যখন ওই মামলাগুলোতে গ্রেপ্তার দেখাতে পারছে না। তখন সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি থেকে আটক করে প্রথমে মহানগর ডিবি, মহানগর ডিবি থেকে জেলা ডিবি এবং সবশেষে জেলার পুঠিয়া ও গোদাগাড়ী থানায় নেয়া হচ্ছে। ওখানে ৪টি পেন্ডিং মামলায় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। গণসংযোগ থেকে নেতাকর্মীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। গত রাতেই গণসংযোগ থেকে ফেরার পথে ২৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি জামিল উদ্দিন, ১৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বাবলু, ১৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক শামীম আহম্মেদ, শিশির, টুটুলকে  আটক করে পুঠিয়া থানায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গোদাগাড়ী থানায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে আরো ৩-৪ জনকে। এভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না। গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে দিতে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের দায় থেকে জাতিকে মুক্তি দিয়ে জনগণের মতামতের ভিত্তিতে মেয়র নির্বাচনের সুযোগ দেয়ার আহ্বান জানান এই নেতা।
এদিকে মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ওয়ারেন্ট ছাড়া আসামি গ্রেপ্তার করা না হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে বিভিন্ন মামলায় নিয়মিত আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকবে।’
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status