দেশ বিদেশ
মিয়ানমারে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্ত দাবি
মানবজমিন ডেস্ক
২৩ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ৯:৫২ পূর্বাহ্ন
চিকিৎসকদের একটি দল মিয়ানমারে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্ত দাবি করেছেন। বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করছেন চিকিৎসকদের ওই গ্রুপটি। তারা হলেন ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস (পিএইচআর)। তারা বলছেন, মিয়ানমারে সেনাবাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে যে ভয়াবহতার শিকার হয়েছেন রোহিঙ্গারা তার মেডিকেল ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ রয়েছে। গত আগস্টে রাখাইনের চুট পাইন গ্রামে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া ২২ রোহিঙ্গার ফরেনসিক পরীক্ষা করেছেন তারা। তাতে তাদের ওপর ভয়াবহতার প্রমাণ মিলেছে। এ খবর দিয়েছে ভয়েস অব আমেরিকা। পিএইচআর বলেছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ যে নৃশংস নির্যাতন চালিয়েছে তার বড় উদাহরণ হলো চুট পাইন গ্রাম। সেখানে কি ঘটেছে তাও ফুটে উঠেছে। এ জন্য সেখানে মানবতার বিরুদ্ধে যেসব অপরাধ হয়েছে তা তদন্ত করা উচিত। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা তাদের ওপর বর্বরতার বর্ণনা করেছেন। তারা বলেছেন, রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে তাদের গ্রামগুলো জ্বালিয়ে দিয়েছে সেনাবাহিনী। ধর্ষণ করেছে। গণহত্যা করেছে। লুট করেছে। তারা যাতে গ্রামে ফিরে যেতে না পারেন সে জন্য স্থলবোমা পুঁতে রেখেছে। পিএইচআরের প্রোগ্রাম পরিচালক ড. হোমার ভেন্টারস বলেছেন, আমরা অনেক গুলির ক্ষত দেখেছি। যখন পালাচ্ছিলেন রোহিঙ্গারা তখন তাদেরকে গুলি করা হয়েছে। ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার লোমহর্ষক কাহিনী আমাদেরকে শুনতে হয়েছে। আমরা ক্ষতের বিষয়গুলোতে গভীরভাবে এবং যত্ন সহকারে বিশ্লেষণ করেছি। সাক্ষ্য প্রমাণ নিয়েছি। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথা শুনেছি। আমাদের ফরেনসিক সব পরীক্ষায় এসব অপরাধের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়, যেমনটা বর্ণনা করেছেন বেঁচে থাকা মানুষগুলো। চুট পাইন গ্রামে গুলি খেয়ে বেঁচে আছেন ১৭ জন। তাদের মধ্যে ২২ জনের বিষয় পরীক্ষা করে দেখেছে পিএইচআর। তাদের সবার কমপক্ষে একটি গুলির ক্ষত আছে। ৯ জনের চলাফেরার ক্ষমতাতো সীমিত হয়ে গেছে। তাদের শরীরে নানা রকম ক্ষত। আছে গুলির ক্ষত। আছে আরো নানা রকম ক্ষত। এসব ক্ষত সাক্ষ্য দেয় যে, তাদেরকে গুলি করা হয়েছে। প্রহার করা হয়েছে। ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। এ ছাড়া নানা রকম সহিংসতার শিকার হয়েছেন তারা। ভেন্টারস বলেন, বিজ্ঞান বা চিকিৎসা বিজ্ঞান এসব ক্ষতের বিষয়ে মিথ্যা বলতে পারে না। প্রতিটি ক্ষত, থেঁতলে দেয়া, আগুনে পুড়ে যাওয়া বা গুলির ক্ষত একটি করে কাহিনী বলে দেয়। আমরা এসব ক্ষতের ফরেনসিক মেডিকেল পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করে বলতে পারি ওই দিনগুলোতে তাদের ওপর কি অত্যাচার হয়েছিল। উল্লেখ্য, গত বছর ২৫শে আগস্ট আরসার হামলার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস নির্যাতন শুরু করে। এর ফলে বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন। জাতিসংঘ একে জাতি নির্মূল হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।