দেশ বিদেশ

ধানের শীষের এজেন্টদের সাজানো মামলায় গণগ্রেপ্তার: বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার

২৩ জুলাই ২০১৮, সোমবার, ৯:৪০ পূর্বাহ্ন

ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থীর মনোনীত এজেন্টদের তুলে নিয়ে গিয়ে সাজানো মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের এজেন্টদের সাদা পোশাকধারী কর্তৃৃক তুলে নেয়ার পর অস্বীকার করার ধুম লেগেছে। রাজশাহীতে যাদেরকে এজেন্ট মনোনীত করা হয়েছে, তাদের কারো নামেই কোনো মামলা নেই। কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশ এজেন্টদের নির্বিচারে আটক করে ১৫-২০ ঘণ্টা পর তাদের নামে মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা সাজিয়ে গ্রেপ্তার দেখাচ্ছে। সিলেট ও বরিশাল সিটি করপোরেশনেও চলছে একই রকম পরিস্থিতি। এর উদ্দেশ্য একটাই- ভোটারদের ভয় পাইয়ে দেয়া। গতকাল দুপুরে দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। রিজভী বলেন, তিন সিটিতে পুলিশি অভিযানের নামে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি ও নির্বাচনী প্রচারে ক্ষমতাসীনদের বাধা দিচ্ছে। এখন যেসব অভিযোগ তা স্থানীয়ভাবে বলছেন, আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে বলছি। এ ধরনের নানা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়ে আমাদের প্রতিনিধি দল ইসিতে গেছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগগুলো পাওয়ার পরেও নির্বিকার, নিশ্চুপ। শুধু নীরব নয়, তারা সরকারের অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করছে। আসলে ভোট সন্ত্রাসকে মহিমান্বিত করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ও নির্বাচন কমিশনের কর্তকর্তাদের বক্তব্য অভিন্ন। নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশনাররা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে বিশ্বস্ততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছেন। মনে হয় তারা চমকপ্রদ ঘুমের বড়ি খেয়ে নিদ্রামগ্ন থাকেন। তিনি বলেন, তিন সিটিতে বিএনপির নেতাকর্মীদের রাতদিন গণগ্রেপ্তার শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সিটি নির্বাচনে জনসমর্থনহীন নৌকা মার্কার প্রার্থীদের জেতাতে তৎপর হয়ে উঠেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা। রিজভী বলেন, সরকারদলীয় প্রার্থী প্রতিনিয়ত নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। সিইসিসহ নির্বাচন কমিশনাররা সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে বিশ্বস্ততার সহিত দায়িত্ব পালনের শপথ নিলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের অনুষঙ্গ হিসেবেও তারা কাজ করছেন। রিজভী বলেন, খুলনা-গাজীপুরের সন্ত্রাসের আবহে নতুন মডেলের ভোট জালিয়াতির আসল রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে ধানের শীষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। আওয়ামী চেতনায় সাজানো প্রশাসন নির্বাচনী এলাকাগুলোতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর ইউরোপে মধ্যযুগীয় ‘ডাইনি শিকার’ এর মতো অভিযানে নেমেছে। খুলনা ও গাজীপুরের স্টাইল গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে ক্রমাগত হত্যা করার স্টাইল। বিএনপির মুখপাত্র বলেন, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য একেএম মতিউর রহমান মন্টুকে শনিবার গভীর রাতে তার রাজশাহীর বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশ। কিন্তু তার অবস্থান নিশ্চিত করেনি পুলিশ। সিলেটে বিএনপির দুজন নেতাকে পুলিশ রাতে উঠিয়ে নেয়ার পর সকালে অস্বীকার করে। সিলেটে ধানের শীষের মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক নির্বাচনী প্রচারণা বাদ রেখে নিজের নেতাকর্মীদের বাঁচাতে এবং তাদের মুক্তির দাবিতে গতকালও পুলিশ কমিশনারের অফিসের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। বরিশালেও বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা, তাদের বাড়িঘর ও নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর, হয়রানিসহ চলছে গ্রেপ্তারের হিড়িক। নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বারবার বিবেকহীন এই নিষ্ঠুর আচরণের পুনরাবৃত্তি বিএনপি এবং দেশের মানুষের মনে গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা চিরস্থায়ী রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, বরিশালে ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী একেএম শহীদুল্লাহ, জামায়াতের মহানগর সেক্রেটারি জহিরুদ্দিন মো. বাবর, রাজশাহীর মাইনুল ইসলাম হারু, খন্দকার ওয়ায়েস করনী ডায়মন্ড, ইফতিয়ার মাহমুদ বাবু, শিবলী, হাফিজুল ইসলাম আপেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমরা এ ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। শনিবার সোহ্‌রাওয়ার্দী উদ্যানের গণসংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যের সমালোচনায় তিনি বলেন, দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। কিন্তু তার দুর্নীতির এ উন্নয়নের কথা কেন তিনি বলেননি সেটি আমরা জানি না। তবে এ জন্য কেন শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়নি সেটিও আমাদের বুঝে আসে না। হয়তো খুব দ্রুত দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ায় শেখ হাসিনাকে গণসংবর্ধনা দেয়া হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দেশে উন্নয়ন হয়, আর বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে দেশে লুটপাট হয়- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, তিনি এত উন্নয়ন করেছেন কিন্তু যখন রাস্তায় চলি তখন তো দেখি আগের সেই চিরচেনা যানজট, অসহায় মানুষ, দ্রব্যমূল্যের চড়া দাম। তাহলে উন্নয়নটা কোথায়? তবে দেশের মানুষের উন্নয়ন না হলেও সরকারি দলের উন্নয়ন ঠিকই হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁঁইয়া, কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, শামসুজ্জামান সরুজ, আমিনুল হক, হাফেজ আবদুল মালেক ও শাহ মো. নেসারুল হক উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status