বাংলারজমিন

পদ্মায় বিলীন ৩শ’ ঘরবাড়ি

রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে

২২ জুলাই ২০১৮, রবিবার, ৯:১৩ পূর্বাহ্ন

মানিকগঞ্জে ফুঁসে উঠেছে পদ্মা নদী। রাক্ষুসে পদ্মার থাবায় লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে জেলার হরিরামপুর উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকার মানচিত্র। বসতবাড়ি, ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার।  প্রতি বছর ভাঙনের তীব্রতা বাড়তে থাকলেও স্থায়ী কোনো বন্দোবস্ত না থাকায় ক্ষুব্ধ নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। এই উপজেলা গোপিনাথপুর, রামকৃষ্ণপুর, কাঞ্চনপুর ও আজিমনগর ইউনিয়নে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। গত ১৫-২০ দিনে বিলীন হয়ে গেছে প্রায় তিনশ’ বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও গাছপালা। তবে পদ্মার রাক্ষুসে থাবায় এ উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা হচ্ছে গোপিনাথপুর ইউনিয়নের ছোট বাহাদুরপুর, বড় বাহাদুরপুর ও উজানপাড়া এলাকা।  

সরজমিন ওই সব এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বাড়িঘর হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে শতাধিক পরিবার। রাক্ষুসে পদ্মা তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নিয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো অতি দরিদ্র । ছোট বাহাদুর গ্রামের মজিদ মাঝি বাড়িঘর হারিয়ে এখন রাস্তায় বসে কাঁদছেন। গেল কয়েকদিন আগে তার শেষ অবলম্বন টুকু পদ্মার পেটে চলে গেছে। বাড়িঘর হারিয়ে এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন পরিবার নিয়ে। আশ্রয় নিয়েছেন রাস্তার পাশে। আবেগ আপ্লুত মাজিদ মাঝি বলেন, নৌকায় মানুষজন পার কইর‌্যা যা পাইতাম  তাই দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলছিল। কিন্তু হঠাৎ রাক্ষুসে পদ্মার আমাগো সব শ্যাষ কইরা দিলো। শ্যাষ সম্বল বাড়িটুকু হারিয়ে রাস্তার পারে কোনোরকম বাঁইচ্যা রইছি। একই এলাকার কুদ্দুস মাঝির ছোট বাড়িটিও গ্রাস করেছে পদ্মা। জানালেন, নদীতে মাছ ধরে তা বিক্রি করে কোনোরকমে স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে সংসার চলতো। অল্প জায়গার ওপর দুটি ঘর ছিল। আজ নেই। বাড়িঘর সব পদ্মার পেটে চলে গেছে। এখন দু’বেলা খাবারও জুটছে না বলে জানান তিনি। এলাকার সাহেরা বেগমেরও একই অবস্থা। তার বাড়িটিও চলে গেছে নদীতে। পদ্মার ভাঙনে বাড়িঘর হারিয়ে রুমি বেগম তার অসুস্থ স্বামী হারেজ মিয়াকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। আশ্রয় নিয়েছে অন্যত্র। এদের মতো হেলেনা, হজরত, সুরুজ, মালেকসহ অসংখ্য পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। পাশাপাশি বড় বাহাদুরপুর এলাকার একই চিত্র। সেখানকার নদী তীরবর্তী বেশিরভাগ বাড়িঘর, ফসলি জমি সবই গ্রাস করে নিয়েছে পদ্মা। হুমকির মুখে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী বাজার ও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গ্রামের দিনমজুর সাহেব আলী বলেন, ‘পদ্মা আমাগো সব কাইড়্যা নিছে। অহন কোথায় যামু, পরিবার নিয়ে কি খামু জানি না।’ বাড়িঘর হারিয়ে কষ্টের সীমা নেই এলাকার কাসেম মাঝির। তিনিও কাঁদছেন। সব হারিয়ে অসহায় ভ্যান চালক মহর আলী মানবেতর জীবনযাপন করছেন রাস্তার ওপর। বড়বাহাদুরপুর টু ছোট বাহাদুরপুর সংযোগ সড়কের খালের ওপর একটি বড় সেতু ছিল সেটিও ভেঙে পড়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
গোপিনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুস বলেন, গত ১৫ দিনে আমার ইউনিয়নের দুটি গ্রামের দেড়শ’ বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। যেভাবে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে এতে আরো বাড়িঘর নদীতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। নদী যেভাবে ধেয়ে আসছে তাতে বাহাদুরপুর ঐহিত্যবাহী বাজারটিও হুমকির মুখে পড়েছে। ২৫০টি দোকানপাট আছে বাজারটিতে। পাশের স্কুলটিও হুমকির মুখে।
নদী ভাঙনে বাড়িঘর হারা অসহায় পরিবারগুলোর তালিকা স্থানীয় সংসদ সদস্যর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। ভাঙন রোধকল্পে অচিরেই একটা ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আমাদের জোর দাবি।
মানিকগঞ্জ-২ আসনের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে গেছেন। আমরা জরুরি কিছু কাজ হাতে নিয়েছি যাতে পদ্মা নদীর ভাঙন আর বেশি না হয়, যাতে বাড়িঘরগুলো রক্ষা করতে পারি। তিনি জানান, ভাঙনের কবলে প্রতিদিনই মানুষজন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমি ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা করে দ্রুত মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেবো। যাতে ক্ষতিগ্রস্তরা সহায়তা পান।  পানি উন্নয়ন বোর্ড তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মতিন সরকার, বলেন, পদ্মার ভাঙনে যেভাবে ঘরবাড়ি, জায়গা জমি ভাঙছে তা ভয়াবহ। স্থায়ীভাবে ভাঙন প্রতিরোধ করা দ্রুত প্রয়োজন। প্রকল্প প্রণয়ন করে তা যদি অনুমোদন হয় তবে আগামী শুকনো মওসুমে কাজ শুরু করতে পারবো। তিনি আরো বলেন, বর্ষাকালে যেসব এলাকায় ভাঙনের ভয়াবহতা অনেক বেশি সেটা বিবেচনায় নিয়ে অস্থায়ী কিছু কাজ করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবো।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status